ওড়িশায় (koraput) চলতে থাকা মাওবাদী-বিরোধী অভিযানে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য এসেছে। নিরাপত্তা বাহিনী কোরাপুট জেলার ঘন পেটাগুদা জঙ্গল থেকে কুখ্যাত মাওবাদী নেতা কুঞ্জম হিদমাকে গ্রেপ্তার করেছে।
গুলির লড়াইয়ের পর এই গ্রেপ্তারকে নিষিদ্ধ সিপিআই (মাওবাদী) সংগঠনের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বর্ণনা করা হচ্ছে। এই অভিযান ওড়িশা, ছত্তিশগড় এবং অন্ধ্রপ্রদেশের ত্রি-সীমান্ত অঞ্চলে মাওবাদী নেটওয়ার্ককে দুর্বল করার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।
পুলিশ সুপার রোহিত ভার্মা জানিয়েছেন
কোরাপুটের (koraput) পুলিশ সুপার রোহিত ভার্মা জানিয়েছেন, গত ২৮ মে গভীর রাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই অভিযান শুরু হয়। তথ্য পাওয়া গিয়েছিল যে বাইপারিগুদা থানার অধীন বাইপাসগুদা এলাকার কাছে মাওবাদী ক্যাডাররা উপস্থিত রয়েছে। জয়পুরের এসডিপিও পার্থ কাশ্যপের নেতৃত্বে জেলা স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী (ডিভিএফ)-এর একটি যৌথ দল এই মিশনের জন্য মোতায়েন করা হয়েছিল।
ভার্মা বলেন, “বৃহস্পতিবার ভোরে আমাদের দল একটি পাহাড়ের চূড়ায় মাওবাদীদের ক্যাম্প (koraput)দেখতে পায়। নিরাপত্তা বাহিনী এগিয়ে যাওয়ার সময় মাওবাদীরা গুলি চালায় এবং জঙ্গলে পালিয়ে যায়। আমাদের দল আত্মরক্ষার জন্য নিয়ন্ত্রিত গুলি চালায়।”
পরবর্তী তল্লাশির সময়, কাছাকাছি ঝোপের মধ্যে লুকিয়ে থাকা একজন মাওবাদী ক্যাডারকে আটক করা হয়। পরে তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হয় কুঞ্জম হিদমা হিসেবে, যিনি ছত্তিশগড়ের বিজেপুরের বাসিন্দা এবং নিষিদ্ধ সিপিআই (মাওবাদী) সংগঠনের এরিয়া কমিটি মেম্বার (এসিএম)।
অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার (koraput)
পুলিশ ঘটনাস্থল (koraput)থেকে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে, যার মধ্যে রয়েছে একটি একে-৪৭ অ্যাসল্ট রাইফেল, ৩৫ রাউন্ড জীবন্ত গোলাবারুদ, ২৭টি বৈদ্যুতিক ডেটোনেটর, ৯০টি অ-বৈদ্যুতিক ডেটোনেটর, প্রায় ২ কেজি গানপাউডার, দুটি স্টিলের পাত্র, দুটি রেডিও, একটি মোটোরোলা ওয়াকি-টকি, একটি অতিরিক্ত ব্যাটারি, চারটি টর্চলাইট, দুটি ছুরি, একটি কুঠার এবং মাওবাদী সাহিত্য। এই উদ্ধার থেকে ধারণা করা হচ্ছে যে হিদমা সম্ভবত একটি বড় অপারেশনের পরিকল্পনা করছিলেন।
কুঞ্জম হিদমার অপরাধের রেকর্ড
কুঞ্জম হিদমা, (koraput) যিনি মোহন নামেও পরিচিত, ছত্তিশগড়ের বিজেপুর জেলার জনগুদা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ২০০৭ সালে ১৪ বছর বয়সে মাওবাদী আন্দোলনে যোগ দেন এবং যুদ্ধ প্রশিক্ষণের পর দ্রুত সংগঠনের মধ্যে উচ্চ পদে উঠে আসেন। তিনি সিপিআই (মাওবাদী)-এর এরিয়া কমিটি মেম্বার হিসেবে কাজ করেছেন এবং ওড়িশার কোরাপুট ও মালকানগিরি জেলায়, অন্ধ্রপ্রদেশের পেদাবাইলু এবং ছত্তিশগড়ের বিজাপুর ও সুকমা জেলায় মাওবাদী কার্যকলাপে জড়িত ছিলেন।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, হিদমা ওড়িশায় অন্তত সাতটি বড় সহিংস ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, যার মধ্যে চারটি কোরাপুটে এবং তিনটি মালকানগিরিতে। এছাড়া, তিনি অন্ধ্রপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে একাধিক সরকার-বিরোধী এবং জাতি-বিরোধী কার্যকলাপে অংশ নিয়েছেন বলে সন্দেহ করা হয়। তাঁর মাথায় ৪ লক্ষ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল।
অভিযানের বিস্তারিত
কোরাপুট এসপি রোহিত ভার্মা (koraput) জানান, “গত রাতে আমরা তথ্য পাই যে ছত্তিশগড় থেকে কিছু মাওবাদী অন্ধ্রপ্রদেশের সীমান্ত পেরিয়ে কোরাপুটে প্রবেশের চেষ্টা করছে। এর ভিত্তিতে আমরা একটি অভিযান পরিকল্পনা করি। ডিভিএফ দল পেটাগুদা গ্রামের কাছে জঙ্গলে অভিযান চালায়। মাওবাদীরা আমাদের দেখে গুলি চালায়, কিন্তু আমাদের কোনো সদস্য আহত হননি। আমরা একজনকে গ্রেপ্তার করি এবং অস্ত্র উদ্ধার করি।” এই অভিযান জয়পুরের এসডিপিও পার্থ কাশ্যপ এবং জ্যেষ্ঠ অফিসার দিব্য প্রসাদ পরিদার নেতৃত্বে পরিচালিত হয়।
সৌরজগতে প্লুটোর ভাইয়ের সন্ধান! নতুন গ্রহটি ২৫০০০ বছর পর সূর্যের চারদিকে ঘুরবে
মাওবাদী নেটওয়ার্কের উপর প্রভাব
কুঞ্জম হিদমার গ্রেপ্তার ত্রি-সীমান্ত (koraput) অঞ্চলে মাওবাদী নেটওয়ার্কের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সম্প্রতি, ২১ মে, ২০২৫-এ ছত্তিশগড়ের নারায়ণপুর জেলায় একটি বড় এনকাউন্টারে সিপিআই (মাওবাদী)-এর সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য নাম্বালা কেশব রাও ওরফে বাসবরাজ সহ ২৬ জন মাওবাদী নিহত হয়।
এই ঘটনার পর হিদমার গ্রেপ্তার মাওবাদী আন্দোলনের জন্য আরেকটি বড় ক্ষতি। পুলিশ এখন হিদমার জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে, যাতে তাঁর সহযোগী, অস্ত্র ভাণ্ডার এবং গোপন আস্তানা সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। এসপি ভার্মা বলেন, “এই গ্রেপ্তার অঞ্চলে মাওবাদী উপস্থিতিকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করবে।”
মাওবাদী-বিরোধী অভিযানে অগ্রগতি
ওড়িশা(koraput) পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় বাহিনী গত কয়েক বছরে মাওবাদী-বিরোধী অভিযানে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। রাজ্যে মাওবাদী কার্যকলাপ কমে গেছে, তবে কোরাপুট, মালকানগিরি এবং নারায়ণপত্নার মতো কিছু এলাকায় এখনো তাদের উপস্থিতি রয়েছে। হিদমার গ্রেপ্তার এই অঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্রমাগত প্রচেষ্টার প্রমাণ।
গত জানুয়ারিতে ছত্তিশগড়-ওড়িশা সীমান্তে একটি যৌথ অভিযানে ১৪ জন মাওবাদী নিহত হয়, যার মধ্যে ছিলেন সেন্ট্রাল কমিটির সদস্য জয়রাম ওরফে চলপতি। এই অভিযানগুলো ‘অপারেশন কাগার’-এর অংশ, যা মাওবাদীদের নির্মূল করার লক্ষ্যে চলছে।
কুঞ্জম হিদমার গ্রেপ্তার ভারতের বামপন্থী উগ্রবাদ (এলডব্লিউই) দমনের লক্ষ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই সাফল্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ২০২৬ সালের মধ্যে দেশকে মাওবাদী-মুক্ত করার প্রতিশ্রুতিকে আরও শক্তিশালী করেছে। নিরাপত্তা বাহিনী এখন হিদমার নেটওয়ার্কের অন্যান্য সদস্যদের খুঁজে বের করতে এবং তাদের অবৈধ কার্যকলাপ বন্ধ করতে আরও তীব্র অভিযান চালাবে।