নয়াদিল্লি: পাউরুটির এককোণায় ছত্রাক ধরলে কি পুরো রুটিটাকেই “খারাপ” বলা যায়? শুক্রবার কার্যত এরকমই সত্যকে অস্বীকারের সুর শোনা গেল দিল্লির জলমন্ত্রী প্রবেশ বর্মার (Pravesh Verma) গলায়! আগাতার বৃষ্টিতে দিল্লির অধিকাংশ এলাকা যে কার্যত ভেনিসে পরিণত হয়েছে, সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন, চিত্র, ভিডিও দেখে সমগ্র দেশবাসীই তা স্বীকার করে নিয়েছে।
যমুনার জলস্তর বৃদ্ধির জেরে চলতি সপ্তাহেই ভেসে গিয়েছে মজনু কা টিলা, মদনপুর খদর, বদরপুর সহ রাজধানীর একাধিক ব্যস্ত, জনবহুল এলাকা। বন্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে ঘর ছেড়ে অসংখ্য মানুষ ক্যাম্প (Relief Camp) বা অস্থায়ী আশ্রয়ে মাথা গুঁজতে বাধ্য হয়েছেন। তবে দিলির পরিস্থিতি অতটাও খারাপ নয়, যতটা দেখানো হচ্ছে বলে এদিন দাবী করলেন মন্ত্রী প্রবেশ বর্মা।
তাঁর বক্তব্য লাগাতার বৃষ্টিতে যমুনার জলস্তর বেড়ে রাজধানি কার্যত প্লাবিত হয়ে গেলেও “দিল্লি ডুবে গেছে” বলা ঠিক নয়। সাংবাদিকদের জলমন্ত্রী বলেন, “আমি সিভিল লেন এলাকা পরিদর্শন করেছি। সেখানে একবিন্দুও জল নেই! রাস্তা থেকে ৮-১০ ফুট নীচু রিং রোডের সঙ্গে সংযোগকারী সার্ভিস রোডে জমা বৃষ্টির জল সব পাম্পের মাধ্যমে বের করে দেওয়া হয়েছে, যমুনা নদীতে দিল্লি ডুবে গেছে বলা ভুল”। তিনি আরও বলেন, দিল্লির নিগম বোধ ঘাটের পরিস্থিতিও খতিয়ে দেখতে যাবেন তিনি।
উল্লেখ্য, শুক্রবারের সকালেই ড্রোন-চিত্রে লোহা পুলের পরিস্থিতি ধরা পড়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে প্রবল বৃষ্টিপাতের জেরে যমুনা নদীর জলস্তর বিপদসীমা পেরিয়ে গেছে। দিল্লির মনাস্ট্রি বাজার, যমুনা মার্কেট, বাসুদেব ঘাট সহ পার্শ্ববর্তী এলাকা প্লাবিত। বানভাসী হওয়ার আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই নীচু এলাকার বাসিন্দারা ময়ূর বিহার ফেজ-১ এর ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। বুধবারেই যমুনা নদীর বিপদসীমা যেখানে ২০৫.৩৩ মিটার, সেখানে ২০৮.৬৬ মিটার ছুঁয়েছে। শুক্রবারেও দিল্লিতে মেঘলা আকাশের সঙ্গে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
মঙ্গলবার যমুনার (Yamuna) জলস্তর বিপদসীমা ছোঁয়। বুধবার বেলা একটা নাগাদ তা বেড়ে দাঁড়ায় ২০৭ মিটারে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, ২০২৩ সালের রেকর্ডও ভেঙে দিতে পারে চলতি বছরের বর্ষা। নয়াদিল্লি সহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় জারি করা হয় সতর্কতা। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে অধিকাংশ মানুষের ঘরবাড়ি, দোকানপাট। আগে যেখানে রাস্তা ছিল, সেখানে বইছে ঘোলা নদীর জল। বাজারগুলো পরিণত হয় পুকুরে।
মজনু কা টিলার (Majnu ka Tila) এক দোকানী অনুপ থাপা বলেন, “দোকানের বেশিরভাগ জিনিসপত্রই আমরা সরিয়ে নিয়েছিলাম। তবে যেটুকু বাকি ছিল, বন্যার জলে সব নষ্ট হয়ে গেল। জল নামলে পুরো দোকান আমাকে মেরামত করতে হবে”। একই কথা শোনা যায় মদনপুর, বদরপুর বাজারের দোকানীদের মুখে। এই নিয়ে দিল্লি সরকারকে তুলোধনা করে আম আদমি পার্টি। মঙ্গলবারের বৃষ্টির পর বিজেপি (BJP) সরকার “রাজধানীকে সুইমিং পুলে পরিণত করেছে” বলে কটাক্ষ করে AAP। ক্ষমতায় আসার মাত্র ৫ মাসের মধ্যেই শহরকে কার্যত স্তব্ধ করে দিয়েছেন বলে মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তর বিরুদ্ধে তোপ দাগে আম আদমি পার্টি (AAP)।