বিপজ্জনক তিস্তা। টানা বৃষ্টিপাতের ফলে উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর জল ২.৫ মিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। ৩১ মে, ২০২৫ তারিখের জন্য এই অঞ্চলে ভ্রমণের অনুমতি প্রদান বন্ধ করেছে। উত্তর সিকিমে যাওয়ার সমস্ত অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। চুংথাং-এর দিকে যাওয়ার রাস্তাটি একাধিক স্থানে অবরুদ্ধ বলে জানা গেছে। ধসের নেমে, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ।
সিকিমে প্রবল বৃষ্টি, খারাপ আবহাওয়া
গত কয়েকদিন ধরে সিকিমেও প্রবল বৃষ্টি। আবহাওয়া খারাপ থাকায় পর্যটকদের যাতায়াত নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছিল। এরই মধ্যে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে পর্যটকদের গাড়ি।উদ্ধার ও তল্লাশি অভিযান চলছে। নিখোঁজদের মধ্যে ওড়িশার বিজেপির জাজপুর ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক ইতিশ্রী নায়ক জেনা রয়েছেন।
দুর্ঘটনার পর, ভারতীয় সেনাবাহিনী, ইন্দো-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ (আইটিবিপি), সিকিম পুলিশ এবং স্থানীয় প্রশাসনের দল ঘটনাস্থলে ছুটে যায় এবং সারা রাত ধরে উদ্ধার অভিযান চালায়। ডুবুরি এবং উচ্চ-উচ্চতার উদ্ধারকারী ইউনিটগুলিকেও অভিযানে মোতায়েন করা হয়েছে।কর্তৃপক্ষ এলাকাটি ঘিরে রেখেছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পর্যটকদের লাচেন-লাচুং রুটে ভ্রমণ এড়াতে পরামর্শ দিয়েছে।
তৎপর ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী North Sikkim Travel Alert
ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি, ওড়িশার বাসিন্দাদের উদ্ধারের জন্য সিকিমে যাওয়ার জন্য একটি বিশেষ দলকে নির্দেশ দিয়েছেন। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রীর দফতর সূত্র উদ্ধৃত করে পিটিআই জানিয়েছে মোহন মাঝি সিকিমের মুখ্যমন্ত্রী প্রেম সিং তামাংকে ফোন করে পর্যটন গাড়িতে থাকা ওড়িশার যাত্রীদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তিনি যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং চিকিৎসার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। মাঝি তার কর্মকর্তাদের সিকিম থেকে ওড়িশার যাত্রীদের নিরাপদে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করার নির্দেশ দিয়েছেন বলেও তারা জানিয়েছেন।
সিকিমে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে লাগোয়া রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের দিকেও তিস্তার জলস্তর বাড়ছে। কালিম্পং, দার্জিলিং হয়ে উত্তরবঙ্গের আরো কয়েকটি জেলায় ভারী বৃষ্টির সতর্কতা আছে। তিস্তা ছাড়া অন্যান্য পাহাড়ি নদীর জলস্তর বাড়ছে। সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে সড়ক যোগাযোগ বিপজ্জনক। পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি থেকে সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকসহ অন্যান্য জেলা সদরে নিত্য যাতায়াত ও পণ্য পরিবহণ হয়। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্রতিবার এই যাতায়াত ব্যবস্থা সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ রাখতে হয়।
প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণসমূহ
সিকিমের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে, যা ভূতাত্ত্বিক, জলবায়ু ও মানবসৃষ্ট—এই তিনটি প্রধান শ্রেণিতে ভাগ করা যায়।
১. ভূতাত্ত্বিক কারণ
ভূমিকম্পপ্রবণতা: সিকিম হিমালয় অঞ্চলে অবস্থিত, যা ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ২০১১ সালের ৬.৯ মাত্রার ভূমিকম্পে সিকিমে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
ভূমিধস: প্রাকৃতিক ভূমিকম্প, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত বা নদীভাঙন ভূমিধসের কারণ হতে পারে, যা রাস্তাঘাট ও বসতি ধ্বংস করে দেয়।
২. জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক কারণ
ভারী বৃষ্টিপাত ও ভূমিধস: বর্ষাকালে অতিভারী বৃষ্টিপাত হয়, যার ফলে পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস (landslide) একটি সাধারণ ঘটনা। ভূমিধসের কারণে রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায়, জনজীবন বিপর্যস্ত হয় এবং অনেক সময় প্রাণহানিও ঘটে।
হ্রদ বিস্ফোরণ (GLOF): ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে লোনাক হ্রদ ফেটে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছিল। এই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আরও বাড়তে পারে, বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে।
৩. মানবসৃষ্ট কারণ
হাইড্রোইলেকট্রিক প্রকল্প: টিস্তা নদীর উপর নির্মিত বৃহৎ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাত্রা বাড়াতে পারে। ২০২৩ সালের বন্যায় চুংথাংয়ের তিস্তা ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
অতিরিক্ত নির্মাণ ও বন উজাড়: অতিরিক্ত রাস্তা ও নির্মাণকাজ, বন উজাড় ও খনিজ খনন এই সব কারণে পাহাড়ি অঞ্চলের পরিবেশ দুর্বল হয়ে পড়ে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সিকিমে পরিকাঠামো ও সড়ক রেলপথ নির্মাণ নিয়ে বারবার প্রকৃতি বিজ্ঞানীরা সতর্কতা দিয়েছেন।
Bharat: Heavy rains swell Teesta River, leading to North Sikkim travel ban & road closures due to landslides. Rescue operations are underway for missing tourists, including an Odisha BJP leader. Warning issued for Bengal as river levels rise; avoid Lachen-Lachung route.