গুয়াহাটি, ৪ অক্টোবর ২০২৫: অসমের সাংস্কৃতিক আইকন জুবিন গর্গের মৃত্যু ঘিরে চলা তদন্তে এবার নতুন মোড়। তদন্তে ইতিমধ্যেই নেমেছে অসম পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এবার তাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারে কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) এবং ইনকাম ট্যাক্স (আই-টি) দফতর। অভিযোগ, উৎসব সংগঠক ও ইভেন্ট ম্যানেজার শ্যামকানু মহন্ত কেবল আর্থিক অনিয়মই করেননি, বরং দীর্ঘদিন ধরে সংগঠিত অর্থনৈতিক অপরাধ ও বেনামি সম্পত্তি সংগ্রহের সঙ্গে জড়িত।
Zubeen Garg case: আর্থিক অনিয়মের জাল
সিআইডির বিশেষ তদন্তে উঠে এসেছে প্রায় ২০ বছর পুরোনো একাধিক আর্থিক কারসাজির ঘটনা। সূত্রের দাবি, শ্যামকানু মহন্ত তাঁর কর্মজীবনের শুরুর দিকে নর্থ ইস্টার্ন ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কর্পোরেশন লিমিটেড (NEDFi)-এ চাকরি করার সময় প্রায় ১৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্পে অনিয়ম করেছিলেন। কল সেন্টার খোলার নামে সেই টাকা একটি সংস্থাকে দেওয়া হলেও, বাস্তবে কোনও প্রকল্প শুরু হয়নি এবং ঋণও শোধ করা হয়নি। ২০০৩ সালেই সেই ঋণকে NPA (Non-Performing Asset) ঘোষণা করা হয়েছিল, কিন্তু অভ্যন্তরীণ তদন্ত আর শেষ হয়নি।
Zubeen Garg case: তল্লাশিতে চাঞ্চল্যকর উদ্ধার
গত ২৫ ও ২৬ সেপ্টেম্বর সিআইডি শ্যামকানুর বাসভবন ও অফিসে হানা দিয়ে প্রচুর নথি ও প্রমাণ জব্দ করে। উদ্ধার হয়েছে একাধিক প্যান কার্ড, প্রায় ৩০টি কোম্পানি ও সরকারি আধিকারিকদের নামে নকল সিল, বেনামি সম্পত্তির দলিলপত্র এবং এমনকি প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা (PMGSY)-র কাজ সংক্রান্ত নথিও।
Zubeen Garg case: কেন্দ্রীয় সংস্থার নজরে
সূত্র অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই ইডি এবং আই-টি দফতরের আধিকারিকরা সিআইডি সদর দফতরে গিয়ে নথি খতিয়ে দেখেছেন। এক শীর্ষ সূত্র জানিয়েছেন, “ইডি ও আই-টি দফতর খুব শিগগিরই সিআইডির সঙ্গে তদন্তে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিতে পারে।” যদিও সিআইডির বিশেষ ডিরেক্টর জেনারেল মুন্না প্রসাদ গুপ্তা বলেছেন, “ওটা সম্পূর্ণ তাঁদের সিদ্ধান্ত। আমি কিছু বলতে পারব না।”
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট
শ্যামকানু মহন্ত কেবল ইভেন্ট ম্যানেজার নন, তিনি প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল অব পুলিশ ভাস্কর জ্যোতি মহন্তর ছোট ভাই। আরেক ভাই ননী গোপাল মহন্ত ছিলেন অসম মুখ্যমন্ত্রীর শিক্ষা উপদেষ্টা, বর্তমানে তিনি গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ফলে এই তদন্তকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলেও ব্যাপক গুঞ্জন চলছে।
জুবিন গর্গের মৃত্যু
উল্লেখ্য, ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে উত্তর-পূর্ব ভারত উৎসবের সময় সমুদ্রে সাঁতার কাটতে গিয়ে রহস্যজনকভাবে মারা যান গায়ক জুবিন গর্গ। উৎসবটির আয়োজন করেছিল শ্যামকানু মহন্তর সংস্থা। তাঁর অকালমৃত্যুতে গোটা অসমজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং ৬০টিরও বেশি এফআইআর দায়ের হয়। সিআইডি ইতিমধ্যেই বিশেষ তদন্ত দল (SIT) গঠন করেছে, যেখানে চারজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
সামনে কী?
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই মামলায় ইডি ও আই-টি দফতর যোগ দিলে তদন্ত আরও বিস্তৃত হবে এবং অর্থপাচার থেকে শুরু করে বেনামি সম্পত্তির জটিল জাল পুরোপুরি উন্মোচিত হতে পারে। তবে তদন্ত এগোতে না এগোতেই রাজনৈতিক চাপ এবং প্রভাব খাটানো হতে পারে—এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
সব মিলিয়ে বলা যায়, জুবিন গর্গের মৃত্যু তদন্ত কেবল একটি ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডির সীমা ছাড়িয়ে এখন অসমের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অঙ্গনে এক বড় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছে।