গুয়াহাটি: অসমের মুখ্যমন্ত্রী ডক্টর হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta Biswa Sarma) ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া ঘিরে ছড়ানো গুজব ও বিভ্রান্তির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। সোমবার গুয়াহাটি থেকে প্রকাশিত এক সরকারি বিবৃতিতে তিনি স্পষ্ট জানান, ভোটদানে দ্বৈত সুযোগের মতো কোনও ব্যবস্থা ভারতে নেই এবং এই ধরনের তথ্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তাঁর বক্তব্য—“এক ব্যক্তি কখনোই দুই জায়গায় ভোট দিতে পারে না। এই ধরনের প্রচার শুধু বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্যে করা হচ্ছে।”
ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া এখন সারা দেশে চলছে। নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুযায়ী প্রতি বছরই ভোটার তালিকা পুনর্বিবেচনা করে সংশোধন করা হয়, যাতে নতুন ভোটার যুক্ত হওয়া, মৃত ও স্থানান্তরিত ভোটারের নাম বাদ দেওয়া, এবং তথ্যের ভুল সংশোধন করা যায়। কিন্তু এই প্রক্রিয়া ঘিরেই সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক মাধ্যমে নানা দাবি ঘুরছে, যার মধ্যে রয়েছে—দুই জায়গায় একসঙ্গে ভোট দেওয়া যায়, অথবা কোনও বিশেষ সম্প্রদায়কে “ডাবল ভোটার” বানানো হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী শর্মা এই ধরনের দাবি সরাসরি খণ্ডন করেছেন। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী, ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থা অত্যন্ত কঠোর ও প্রযুক্তিনির্ভর হওয়ায় একই ব্যক্তির নাম দুই জায়গায় সক্রিয় রাখা কার্যত অসম্ভব। তিনি বলেন, “ভোটার তালিকা সংশোধন নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে হয়। আধার লিঙ্কিং, ঠিকানা যাচাই, ফিল্ড ভেরিফিকেশন—সবকিছু মিলিয়ে এই প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ। তাই কোনও গুজবে কান দেওয়ার প্রয়োজন নেই।”
সরকারি সূত্র জানাচ্ছে, বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের কয়েকটি মন্তব্যে বলা হয়েছিল যে অসমের বিভিন্ন এলাকায় নাকি দ্বৈত ভোটার তৈরি করা হচ্ছে। এই দাবি দ্রুতই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কোথাও কোথাও ভিডিও ও পোস্টে এমনও দাবি করা হয় যে বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষকে দুটি ভিন্ন কেন্দ্রের ভোটার তালিকায় যুক্ত করা হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন এই দাবিকে “ভিত্তিহীন ও তথ্যভিত্তিক নয়” বলে জানিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্বৈত ভোটদানের সুযোগ রোধে ভারত ইতিমধ্যেই আধারভিত্তিক ডি-ডুপ্লিকেশন ব্যবস্থা ব্যবহার করছে। ভোটার ফটো আইডি, ঠিকানা যাচাই, গ্রাউন্ড লেভেল ইনস্পেকশন—সবই নির্দিষ্ট প্রোটোকলের মাধ্যমে করা হয়। এর বাইরে কোনও ব্যক্তির নাম একই সঙ্গে দুটি কেন্দ্রের তালিকায় থাকা আইনত অপরাধ।
মুখ্যমন্ত্রী শর্মা বলেন, “কিছু রাজনৈতিক মহলের উদ্দেশ্যই হল মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানো। ভোটার তালিকা সংশোধন একটি সাধারণ প্রশাসনিক প্রক্রিয়া। একে নিয়ে সন্দেহ তৈরি করা গণতন্ত্রের পক্ষে বিপজ্জনক।” তিনি আরও বলেন, আগামী নির্বাচনের আগে এই ধরনের “ভুয়া বিবৃতি, ভুল ব্যাখ্যা এবং গুজব ছড়ানো” আরও বাড়তে পারে।
সরকারি বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, সাধারণ মানুষ যদি কোনও তথ্য যাচাই করতে চান তবে সরাসরি নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট বা স্থানীয় বুথ লেভেল অফিসার (BLO)-এর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। মুখ্যমন্ত্রীর ভাষ্য—“যাচাই করা তথ্যের ওপর নির্ভর করুন। গুজব ছড়ানো পোস্ট বা ভিডিও দেখে বিভ্রান্ত হবেন না।”
বিভিন্ন নাগরিক সংগঠনও মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য সমর্থন করে বলেছে, ভুয়া খবর এবং বিভ্রান্তিকর প্রচার ভোটারদের আস্থা নষ্ট করতে পারে। এই ধরনের গুজব ছড়ানো বন্ধে সচেতনতা অত্যন্ত প্রয়োজন।
এদিকে বিরোধী শিবিরের দাবি, সরকারের বক্তব্য “বেমানান” এবং ভোটার তালিকা সংশোধনের সময় সাধারণ মানুষ নানা ধরনের অসুবিধায় পড়ছেন। তবে নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, সব অভিযোগ প্রক্রিয়া অনুযায়ী দেখা হচ্ছে।
মোটের ওপর, ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া ঘিরে ছড়ানো গুজবের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর প্রকাশ্য সতর্কবার্তা জনগণকে বিভ্রান্তি থেকে দূরে রাখতেই দেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসনের মত। তিনি পুনরায় বলেন, “ভোট আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। তাই ভোটার তালিকা নিয়ে যে কোনও প্রশ্নের সমাধান হওয়া উচিত তথ্যের ভিত্তিতে, গুজবের ভিত্তিতে নয়।”


