অভাবের চোটে ৩ মাসের সন্তানকে বিক্রি মায়ের! বিজেপি শাসিত রাজ্যে চাঞ্চল্য

ত্রিপুরার গোমতি জেলার শিলাচরি এলাকায় একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে, যা পুরো রাজ্যে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। গরিবি ও অভাবের মুখে পড়ে একজন মা তার…

tripura-child-selling-poverty

ত্রিপুরার গোমতি জেলার শিলাচরি এলাকায় একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে, যা পুরো রাজ্যে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। গরিবি ও অভাবের মুখে পড়ে একজন মা তার মাত্র ৩ মাসের শিশু কন্যাকে বিক্রি করে ফেলেন। এই অভাবনীয় ঘটনার পর পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপে শিশুটিকে উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এই ঘটনা বিজেপি শাসিত ত্রিপুরা রাজ্যে সরকারের কাছে বড় প্রশ্ন তুলে ধরেছে—গরিবি ও অবহেলার কারণে এমন হৃদয়হীন পদক্ষেপের দিকে যাওয়া কি সঠিক নীতি পরিচালনার পরিচয়?

Advertisements

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই পরিবারটি অত্যন্ত দারিদ্র্যের মধ্যে জীবনযাপন করছিল। শিশুটির মা স্তন্যদান করতে পারছিলেন না বলে তাকে ফর্মুলা মিল্ক দিয়ে বড় করার প্রয়োজন হয়েছিল, যা তাদের অর্থনৈতিক ক্ষমতার বাইরে ছিল। এই অবস্থায় নিরাশ হয়ে তারা শিশুটিকে বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। এই খবর পাওয়ার পর পুলিশ কর্মকর্তা গামাঞ্জম রিয়াং অবিলম্বে অ্যাকশনে নেমে শিশুটিকে উদ্ধার করেন এবং পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেন। তবে এই ঘটনা ত্রিপুরার পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর উন্নয়নের অভাব ও গরিবি দূরীকরণে সরকারের ব্যর্থতার প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

   

ত্রিপুরার গ্রামাঞ্চলের প্রায় ৫৫ শতাংশ মানুষ এখনও দারিদ্র্যরঁ রেখায় বসবাস করছে, যা ২০০১ সালের রাজ্য সরকারের নিজস্ব তথ্য অনুযায়ী প্রকাশ পেয়েছে। ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতা ও অপর্যাপ্ত প্রতিবন্ধকতা এই রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি করেছে। এমন পরিস্থিতিতে শিশু ব্যবসার মতো সমস্যা উদ্ভূত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ভারতের প্রতি আট মিনিটে একটি শিশু হারিয়ে যাচ্ছে, যার মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে গরিবি ও অভাব প্রধান কারণ। ত্রিপুরার এই ঘটনা সেই অন্ধকার চিত্রের একটি অংশ।

সামাজিক মাধ্যমে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র সমালোচনা শোনা যাচ্ছে। অনেকে সরকারের উপর আঙুল তোলছেন, বলছেন যে মন্দিরের তহবিল থেকে হিন্দু সংগঠনগুলোকে সাহায্য না করার কারণে এই ধরনের দুর্দশা ঘটছে। অন্যদিকে, কিছু ব্যক্তি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নে সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করছেন। জাপান আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা (জিকা) ত্রিপুরায় সড়ক নির্মাণের মাধ্যমে উন্নয়নের চেষ্টা করছে, তবুও গ্রামীণ অঞ্চলে এর সুফল এখনও পৌঁছায়নি।

এই ঘটনার পর সরকারের কাছে দাবি উঠেছে যে গরিব পরিবারদের জন্য অবিলম্বে কঠোর আর্থ-সামাজিক সহায়তা প্রদান করা উচিত। শিশু সুরক্ষা ও মানব ব্যবসা রোধে আরও কড়া নজরদারি প্রয়োজন। ত্রিপুরা সরকার এখন এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেবে, তা নিয়ে সবার চোখ রয়েছে। এই ঘটনা শুধু একটি পরিবারের কাহিনী নয়, বরং সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়ন ও সামাজিক ন্যায়বিচারের একটি বড় প্রশ্ন।


❓ FAQs

Q1. কোথায় ঘটেছে শিশুবিক্রির এই ঘটনা?
👉 ত্রিপুরার গোমতি জেলার শিলাচরি এলাকায়।

Q2. শিশুবিক্রির কারণ কী ছিল?
👉 দারিদ্র্য ও শিশুর জন্য ফর্মুলা মিল্ক কেনার অক্ষমতা।

Q3. শিশুটিকে কি উদ্ধার করা হয়েছে?
👉 হ্যাঁ, পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে শিশুটিকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়।

Q4. এই ঘটনার সামাজিক প্রতিক্রিয়া কী হয়েছে?
👉 সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে এবং সরকারের দারিদ্র্য মোকাবিলা ও শিশু সুরক্ষার ব্যর্থতার প্রশ্ন উঠেছে।

Q5. ত্রিপুরায় দারিদ্র্যের অবস্থা কেমন?
👉 রাজ্যের প্রায় ৫৫% মানুষ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে।

Q6. এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে কী করা উচিত?
👉 গরিব পরিবারগুলিকে আর্থ-সামাজিক সহায়তা দেওয়া, শিশু সুরক্ষার জন্য কঠোর নজরদারি, এবং মানব পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।

Q7. জাতীয় পর্যায়ে শিশু হারানোর হার কতটা উদ্বেগজনক?
👉 জাতীয় অপরাধ রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ভারতে প্রতি আট মিনিটে একটি শিশু নিখোঁজ হয়।


🔑Tripura child poverty, child selling case India, BJP ruled state poverty, Tripura police rescue baby, child trafficking poverty India