গুয়াহাটি: উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষদের জন্য বিদেশ ভ্রমণকে ঘিরে উত্তেজনা, কৌতূহল এবং নতুন অভিজ্ঞতা সাধারণ বিষয়। কিন্তু অনেকে একইসঙ্গে ভয় নিয়েও থাকেন বিশেষ করে যখন আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও সীমানা বিতর্ক জড়িয়ে থাকে। সম্প্রতি চীনের সাংহাই বিমানবন্দরে অরুণাচল প্রদেশের এক মহিলাকে চাইনিজ ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের দ্বারা হেনস্তার অভিযোগ সামনে আসার পর সেই ভয় ফের প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, সাংহাই বিমানবন্দরে ওই অরুণাচল মহিলাকে ‘ভারতীয় নাগরিক’ স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে বারবার প্রশ্ন করা হয়। অভিযোগ, তাকে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখা হয় এবং বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় ও অপমানজনক জেরা করা হয়।
যোগিরাজ্যের হাপাতালে ইন্টার্নের শ্লীলতাহানি ফারহানের !
এই আচরণে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন এবং নিরাপত্তাহীনতা অনুভব করেন। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় ভারতে। কেন্দ্রীয় বিদেশ মন্ত্রক বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার মধ্যে আজ এ বিষয়ে মুখ খুললেন অসমের বিজেপি বিধায়ক সুশান্ত বোর্গোহাই।
গুয়াহাটিতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন “এই ঘটনাকে আমাদের বিদেশ মন্ত্রী নিন্দা করেছেন। গোটা বিশ্ব জানে অরুণাচল ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই অরুণাচলকে ভারতের থেকে আলাদা করতে পারবে না।” তিনি আরও জানান, “প্রধান মন্ত্রীর সরকার যথেষ্ট শক্তিশালী এবং অরুণাচলের মানুষের পাশে রয়েছে। বিদেশে কোনও ভারতীয়কে অযৌক্তিক আচরণের শিকার হতে হলে কেন্দ্র অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে।”
চীনের আগ্রাসী কূটনৈতিক ও সীমান্ত নীতির প্রসঙ্গ টেনে এই বিজেপি নেতা বলেন “চীনের আগ্রাসী নীতি নতুন নয়। কিন্তু তাতে ভারতের অবস্থান দুর্বল হয় না। আমাদের নেতৃত্ব পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষমতা রাখে। এমন ছোট ঘটনার জন্য আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই।” তবে বিরোধীদের একাংশ বলছেন, ঘটনাটিকে “ছোট” বলা ঠিক নয়। বিশেষ করে একজন সাধারণ ভারতীয় নাগরিক বিদেশে হেনস্তার মুখে পড়লে তাকে মানসিক নিরাপত্তা দেওয়াটা দায়িত্বশীল রাষ্ট্রের কর্তব্য।
এই বিতর্কের মধ্যে অরুণাচলের বাসিন্দা ও ছাত্রদের সংগঠনগুলি বলছে “অরুণাচলের মানুষকে আন্তর্জাতিক ভ্রমণে যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে সেটা বাস্তব এবং নথিবদ্ধ। বিদেশে পরিচয় বা নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন ওঠা আমাদের অস্বস্তিতে ফেলে। এ বিষয়ে ভারত সরকারের কূটনৈতিক কঠোরতা জরুরি।”
এই ঘটনার পরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলিতে উত্তর-পূর্ব ভারতের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বেশ কিছু মানবাধিকার সংগঠনও সোচ্চার হয়েছে। তাদের বক্তব্য অরুণাচল ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ এই কূটনৈতিক অবস্থান আন্তর্জাতিকভাবে আরও জোরালোভাবে প্রতিষ্ঠা করা উচিত উত্তর-পূর্বের মানুষদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী এবং বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধ করা জরুরি বিদেশে ভারতীয় নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা কেন্দ্রীয় সরকারের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত
মহিলার শারীরিক ক্ষতি না হলেও তার মানসিক বিপর্যয়ের বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। তিনি বর্তমানে নিরাপদে আছেন, তবে পরিবারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে ঘটনাটি তাকে গভীরভাবে আঘাত করেছে এবং তিনি এখন ভ্রমণের মানসিক ধাক্কা সামলাচ্ছেন।সামগ্রিকভাবে এই ঘটনা আবারও মনে করিয়ে দিল, ভারত–চীন সম্পর্ক এবং বিশেষ করে অরুণাচল প্রদেশকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক উত্তেজনা এখনো পুরোপুরিভাবে স্তিমিত হয়নি।
