মর্যাদার দাবিতে গেরুয়া রাজ্যে আদিবাসী আন্দোলন

saotal-community-st-status-protest-assam

কোকরাঝাড়: দীর্ঘদিনের বঞ্চনার অবসান চেয়ে অসমের আদিবাসী সাঁওতাল সম্প্রদায়ের জন্য তপশিলি জনজাতির মর্যাদার দাবিতে আজ এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল করল অল সৌতাল স্টুডেন্টস’ ইউনিয়ন (ASSU)। সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে এবং কোকরাঝাড় জেলা কমিটির সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচিতে শতাধিক সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

Advertisements

বিক্ষোভটি শুরু হয় কারিগাঁও হাই স্কুল মাঠ থেকে, এবং শেষ হয় জয়পুর হাই স্কুল মাঠে, জাতীয় সড়ক ২৭ বরাবর এক বিশাল পদযাত্রার মধ্য দিয়ে। অংশগ্রহণকারীরা হাতে ব্যানার-প্ল্যাকার্ড নিয়ে “Justice for Saotal Community”, “Include us in ST list”–এর মতো স্লোগানে মুখর করে তোলেন গোটা এলাকা।

   

নতুন অ্যাডভেঞ্চার চ্যাম্পিয়ন Royal Enfield Himalayan 750 শক্তিশালী ইঞ্জিনে আসছে

ASSU-র নেতৃত্ব জানিয়েছে, এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য রাজ্য ও কেন্দ্র সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা, যাতে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ন্যায্য দাবি আর বিলম্বিত না হয়। তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন “আমরা নাগরিক হিসেবে আমাদের সাংবিধানিক অধিকার চাই। যদি সরকার চুপ থাকে, তবে রাজ্যজুড়ে গণতান্ত্রিক পথে আরও বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।”

বিক্ষোভ মঞ্চ থেকে ASSU চারটি মূল দাবি স্পষ্টভাবে তুলে ধরে অবিলম্বে সাঁওতাল সম্প্রদায়কে সংবিধানের ৩৪২ অনুচ্ছেদের অধীনে তপশিলি জনজাতি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা। সাঁওতালদের স্থায়ী বসবাসের জন্য ভূমি পট্টা (land patta) প্রদান। সম্প্রদায়ভিত্তিক সরকারি জাতি সার্টিফিকেট ইস্যু করা। ২০২২ সালে স্বাক্ষরিত ত্রিপাক্ষিক আদিবাসী শান্তি চুক্তি (Tripartite Adivasi Peace Accord) পুরোপুরি বাস্তবায়ন।

ASSU-র এক প্রতিনিধি বক্তৃতায় বলেন, “আমরা এই মাটির সন্তান। সাঁওতালরা অসমের অন্যতম প্রাচীন জনগোষ্ঠী, কিন্তু আজও আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। শিক্ষা, চাকরি, স্বাস্থ্য, ভূমি সবক্ষেত্রেই আমাদের উপেক্ষা করা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “সরকার যদি এখনই পদক্ষেপ না নেয়, আমরা জেলা থেকে রাজধানী পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ কিন্তু দৃঢ় আন্দোলনে নামব। এই লড়াই শুধুমাত্র সাঁওতালদের নয়, বরং অসমের সকল আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সম্মানের লড়াই।”

Advertisements

উল্লেখ্য, সাঁওতাল সম্প্রদায় বহুদিন ধরেই অসমে সাংবিধানিক স্বীকৃতির অভাবে নানা সমস্যায় জর্জরিত। শিক্ষাগত ও আর্থিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত এই জনগোষ্ঠী বহুবার আন্দোলন করেও এখনও তপশিলি জনজাতি মর্যাদা পায়নি। ২০২২ সালে ত্রিপাক্ষিক আদিবাসী শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও, তার অনেক ধারা আজও বাস্তবায়িত হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছে সংগঠন।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, ASSU-র এই প্রতিবাদ অসমের আদিবাসী রাজনীতিতে নতুন স্ফুলিঙ্গ ছড়াতে পারে। কারণ, সাঁওতালরা যদি বৃহত্তর আদিবাসী আন্দোলনের অংশ হয়ে ওঠে, তবে তা রাজ্য সরকারের ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি করবে।

যদিও রাজ্য সরকারের তরফে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া এখনো পাওয়া যায়নি, সূত্রের খবর অনুযায়ী, সামাজিক ন্যায় দফতর শিগগিরই সাঁওতাল সম্প্রদায়ের ঐতিহাসিক ও নৃতাত্ত্বিক প্রমাণ যাচাই করতে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করতে পারে।

ASSU জানিয়েছে, “আমরা বিশ্বাস করি, শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনের মাধ্যমেই সরকারের বিবেক জাগানো সম্ভব। আমরা সংবিধানের পথে লড়াই করছি, অস্ত্র নয় ন্যায়ের শক্তিতেই।” এই দাবিকে ঘিরে এখন রাজ্যজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। আসন্ন সপ্তাহগুলোতে সংগঠনটি আরও বড় মিছিল ও জনসভা করার পরিকল্পনা নিচ্ছে, যাতে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের কণ্ঠস্বর রাজ্যের রাজধানী গুয়াহাটির পথেও পৌঁছে যায়।