গুয়াহাটি, ৫ সেপ্টেম্বর: অসমের রাজধানী গুয়াহাটিতে রাজভবনের (Raj Bhavan) চারপাশে ৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা (BNSS)-এর ১৬৩ ধারার অধীনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা এলাকার নিরাপত্তা ও সুরক্ষার উপর হুমকি তৈরী করতে পারে এমন যেকোনো কার্যকলাপের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই পদক্ষেপ গুয়াহাটির রাজভবন, যেখানে রাজ্যপাল বসবাস করেন, সেই অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য গৃহীত হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা ২০২৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।গুয়াহাটির খারঘুলি এলাকায় অবস্থিত রাজভবন অসমের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ।
এই এলাকায় রাজ্যপালের বাসভবন ছাড়াও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনা রয়েছে। সম্প্রতি অসমে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধির কারণে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজভবনের নিরাপত্তার উপর কোনও ধরনের হুমকি এড়াতে এই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
বিশেষ করে, সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্যে বিভিন্ন প্রতিবাদ, সমাবেশ এবং রাজনৈতিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার ১৬৩ ধারা কর্তৃপক্ষকে জনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং সম্ভাব্য বিপদ এড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট এলাকায় সমাবেশ, মিছিল, বা অন্যান্য কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা দেয়।
এই নিষেধাজ্ঞার অধীনে, রাজভবনের ৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে কোনও ধরনের জনসমাবেশ, বিক্ষোভ, বা এমন কোনও কার্যকলাপ করা যাবে না যা এলাকার শান্তি ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে। এই নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে।পুলিশ জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা এলাকার বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করবে না, তবে নিরাপত্তার স্বার্থে কঠোর নজরদারি রাখা হবে।
রাজভবনের আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে, এবং ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, রাজভবনের প্রবেশপথ এবং আশপাশের রাস্তাগুলিতে ব্যারিকেড এবং চেকপয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের এই নিষেধাজ্ঞা মেনে চলার জন্য এবং কোনও সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখলে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।এই নিষেধাজ্ঞা জারির পেছনে অসমের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
সম্প্রতি রাজ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঘটনা বেড়েছে। বিশেষ করে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) এবং অসমের জাতিগত ও ভাষাগত বিষয়গুলি নিয়ে রাজনৈতিক দল এবং সংগঠনগুলির মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজভবনের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রশাসনের জন্য অগ্রাধিকার হয়ে উঠেছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ কেউ মনে করছেন, এটি নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয়, তবে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে এটি তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “রাজভবনের আশপাশে আমাদের দোকান আছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে গ্রাহকের সংখ্যা কমে যেতে পারে।
তবে নিরাপত্তার জন্য এটি প্রয়োজন হলে আমরা মেনে নেব।” রাজনৈতিক মহলেও এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিরোধী দলগুলি সরকারের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে বলেছে, এটি জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর আঘাত হানতে পারে। অসমের কংগ্রেস নেতা দেবব্রত সইকিয়া বলেছেন, “নিরাপত্তার নামে সরকার জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার দমন করার চেষ্টা করছে।
রাজভবনের আশপাশে নিষেধাজ্ঞা জারি করে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের পথ বন্ধ করা হচ্ছে।” অন্যদিকে, শাসক দল বিজেপি এই সিদ্ধান্তকে নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য বলে সমর্থন করেছে।প্রশাসন জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। রাজভবনের আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) মোতায়েন করা হয়েছে।
মেট্রো দেরির আসল কারণ জানাল কর্মচারী ইউনিয়ন
গুয়াহাটি পুলিশ কমিশনার জানিয়েছেন, “আমরা জনগণের সুবিধা এবং নিরাপত্তার ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করছি। নিষেধাজ্ঞা শুধুমাত্র রাজভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।” এই নিষেধাজ্ঞা গুয়াহাটির রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির উপর নতুন আলোকপাত করেছে। আগামী দিনে প্রশাসন কীভাবে এই পরিস্থিতি সামলায় এবং জনগণের প্রতিক্রিয়া কী হয়, তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে।