‘সংখ্যালঘু নয়, বনভূমি দখলকারী উচ্ছেদ’! দাবি হিমন্তর

অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সোমবার রাজ্যে চলমান উচ্ছেদ অভিযানকে সংখ্যালঘু-প্রধান এলাকায় লক্ষ্য করে বলে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন (Himanta)। তিনি জানান, এই অভিযান বিশেষভাবে ‘মিয়া-মুসলিম’…

Himanta biswa sharma

অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সোমবার রাজ্যে চলমান উচ্ছেদ অভিযানকে সংখ্যালঘু-প্রধান এলাকায় লক্ষ্য করে বলে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন (Himanta)। তিনি জানান, এই অভিযান বিশেষভাবে ‘মিয়া-মুসলিম’ সম্প্রদায়ের সেই সদস্যদের লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে, যারা বনভূমি এবং অন্যান্য সংরক্ষিত জমি অবৈধভাবে দখল করেছে।

‘মিয়া’ শব্দটি ঐতিহাসিকভাবে অসমে বাংলাভাষী মুসলিমদের জন্য অপমানজনক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যাদের অনেক সময় বাংলাদেশী অভিবাসী হিসেবে দেখা হয়। চিরাংয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে শর্মা বলেন, “উচ্ছেদ সংখ্যালঘু-প্রধান এলাকায় নয়। এটি ‘মিয়া-মুসলিম’দের জন্য, যারা বনভূমি বা সংরক্ষিত জমি দখল করেছে। আমাদের লোকেরা এমন জমি দখল করে না।

   

যদি বোড়ো বা মিসিং সম্প্রদায়ের লোকেরা সেখানে পাওয়া যায়, তাহলে তারা পট্টা পেতে পারেন। কিন্তু অ-আদিবাসীদের বনভূমিতে পট্টা দেওয়া যাবে না।”মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মিয়া-মুসলিম’ সম্প্রদায় ইতিমধ্যে নদীময় চর এলাকায় বিপুল পরিমাণ জমি দখল করে রেখেছে, যেখানে অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা বসবাস করে না। তিনি বলেন, “অসমের অর্ধেক জমি চরে রয়েছে তাদের জন্য।

সেখান থেকে তারা শিবসাগর, যোড়হাট এবং গোলাঘাটে যেতে চাইছে। এটা কীভাবে সম্ভব? অসমীয়া লোকেরা কোথায় থাকবে?” এই মন্তব্য অসমের জাতিগত সংঘর্ষ এবং জমি দখলের ইস্যুকে আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে, যা রাজ্যের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি সংবেদনশীল বিষয়।

ধুবড়িতে অল অসম মাইনরিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (এএএমএসইউ) উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে। এই প্রতিবাদ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রতিবাদ সরকারের নীতি পরিবর্তন করতে পারবে না। তিনি সতর্ক করে বলেন, “আমরা যা প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তা করব। যদি এএএমএসইউ আরও শব্দ করে, তাহলে আরও উচ্ছেদ হবে।” এই মন্তব্য অসমের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে এবং রাজনৈতিক বিরোধীদের কাছ থেকে তীব্র সমালোচনা পেয়েছে।

কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দল এই অভিযানকে সাম্প্রদায়িক বলে অভিহিত করেছে এবং দাবি করেছে যে এটি সংখ্যালঘু মুসলিমদের লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রী গোলাঘাট এবং কর্বি অংলংয়ে উচ্ছেদকৃত জমি শিল্পপতিদের হাতে তুলে দেওয়ার জল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, এই জমিগুলি বনায়নের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে, তিনি বলেন, যদি অদানি বা আম্বানির মতো কোম্পানি রাজ্যে শিল্প স্থাপন করে, তাহলে তারা স্বাগত।

“যদি অদানি বা আম্বানি এখানে শিল্প স্থাপন করে, তাহলে আমরা স্বাগত জানাব,” বলেন শর্মা। এই মন্তব্য অসমের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সংযোগ করে দেখা হচ্ছে, কিন্তু বিরোধীরা অভিযোগ করছে যে এটি জমি দখলের একটি অজুহাত।

মুখ্যমন্ত্রী পুনর্ব্যক্ত করেছেন যে, উচ্ছেদ অভিযান অসমের সমস্ত দখলকৃত জমি খালি না করা পর্যন্ত চলবে। তিনি দাবি করেন, রাজ্যে এখনও ২৯ লক্ষ বিঘা (প্রায় ৯.৫ লক্ষ একর) জমি দখলকৃত রয়েছে, যখন গত চার বছরে ১.২৯ লক্ষ বিঘা জমি খালি করা হয়েছে।

Advertisements

এই অভিযান অসমের জাতিগত সম্প্রদায়গুলির মধ্যে জমি সংরক্ষণের দাবিকে সমর্থন করে, বিশেষ করে বোড়ো, মিসিং এবং অন্যান্য আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য। তবে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংগঠনগুলি এটিকে বৈষম্যমূলক বলে অভিহিত করেছে এবং দাবি করেছে যে এটি মুসলিম সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে।

মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। অসমের কংগ্রেস নেতা দেবব্রত সাইকিয়া বলেন, “এটি স্পষ্ট সাম্প্রদায়িকতা। মুখ্যমন্ত্রী একটি সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে কথা বলছেন, যা সংবিধানের পরিপন্থী।” এআইইউডিএফ নেতা বদরুদ্দিন আজমল বলেন, “এই অভিযান মুসলিমদের উচ্ছেদ করার একটি ষড়যন্ত্র।

আমরা এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করব।” অন্যদিকে, বিজেপি সমর্থকরা বলছেন, এটি রাজ্যের জমি সংরক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। অসমের সামাজিক মাধ্যমে এই ইস্যু নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে, যেখানে কেউ কেউ মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থানকে সমর্থন করছেন এবং কেউ সমালোচনা করছেন।

অসমে উচ্ছেদ অভিযান ২০২১ সাল থেকে চলছে, যখন হিমন্ত বিশ্ব শর্মা মুখ্যমন্ত্রী হন। এই অভিযানে হাজার হাজার পরিবার উচ্ছেদ হয়েছে, যার বেশিরভাগই বাংলাভাষী মুসলিম। রাজ্য সরকার দাবি করে যে এটি বনভূমি এবং সংরক্ষিত জমি পুনরুদ্ধারের জন্য করা হচ্ছে, যা অসমের পরিবেশ এবং জাতিগত ভারসাম্য রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়।

তবে, মানবাধিকার সংগঠনগুলি অভিযোগ করেছে যে এই অভিযান মানবিক সংকট তৈরি করছে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে। গত কয়েক মাসে ধুবড়ি, গোলাঘাট এবং অন্যান্য এলাকায় উচ্ছেদ অভিযানে সংঘর্ষ হয়েছে, যাতে কয়েকজন আহত হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য অসমের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষ করে যখন রাজ্যে লোকসভা নির্বাচনের পর বিধানসভা নির্বাচনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে। সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক অসমের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এবং এই অভিযান তাদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়াতে পারে।

মোদীর সঙ্গে আকস্মিক ফোনালাপ জেলেনস্কির! কাটবে কি রুশ-ইউক্রেন জট ?

সরকারের তরফে বলা হয়েছে যে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকবে, এবং এটি রাজ্যের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয়। তবে, এই ইস্যুতে আদালতী হস্তক্ষেপের সম্ভাবনাও রয়েছে, যেমনটি অতীতে দেখা গেছে।এই ঘটনা অসমের জাতিগত এবং সাম্প্রদায়িক ভারসাম্যের উপর নতুন আলোকপাত করেছে এবং রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে বিতর্ককে আরও তীব্র করতে পারে।