প্রেমের ফাঁদে পড়ে ৫ মাসের মেয়েকে খুন মায়ের

Mother Kills daughter in tripura

ত্রিপুরার সেপাহিজালা জেলায় (Mother Kills) এক মর্মান্তিক ঘটনায় এক মহিলা তাঁর নিজের ৫ মাসের শিশুকন্যাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনার পিছনে রয়েছে মহিলার একটি অবৈধ সম্পর্ক, যার জন্য তিনি তাঁর স্বামীকে ছেড়ে প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন এবং শিশুটিকে বাধা মনে করেছিলেন।

Advertisements

অভিযুক্ত মহিলা সুচিত্রা দেববর্মা (২৮) কে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় (হত্যা) মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনা রাজ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে এবং সমাজের মধ্যে মাতৃত্ব এবং সম্পর্কের জটিলতা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাটি ঘটেছে রামপাদাপাড়া এলাকায়, যা সোনামুড়া পুলিশ স্টেশনের অধীনে পড়ে। অভিযুক্ত সুচিত্রা দেববর্মা তাঁর স্বামীর অনুপস্থিতিতে শনিবার (১০ আগস্ট) রাতে তাঁর ৫ মাসের কন্যা রিমি দেববর্মাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। স্বামী বাইরে কাজে গিয়েছিলেন এবং বাড়িতে কেউ না থাকায় সুচিত্রা এই কাজটি করেন।

প্রতিবেশীরা শিশুর কান্না না শোনায় সন্দেহ করে বাড়িতে ঢোকেন এবং শিশুর মৃতদেহ দেখতে পান। তারা তৎক্ষণে পুলিশকে খবর দেন। সোনামুড়া পুলিশ স্টেশনের অফিসার-ইন-চার্জ তাপস দাস জানান, “আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করি এবং সুচিত্রাকে গ্রেফতার করি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন যে, তাঁর একটি অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে এবং শিশুটি তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।”

শিশুর মৃতদেহকে পোস্টমর্টেমের জন্য গোপালগঞ্জ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং রিপোর্টে শ্বাসরোধের কারণে মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তের প্রেমিককেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং তাঁর ভূমিকা যাচাই করা হবে।

এই ঘটনা ত্রিপুরার মতো একটি ছোট রাজ্যে মানসিক স্বাস্থ্য, পারিবারিক চাপ এবং অবৈধ সম্পর্কের প্রভাব নিয়ে নতুন করে চিন্তা করিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সুচিত্রা একটি সাধারণ গৃহিণী ছিলেন এবং তাঁর পরিবারে কোনও বড় সমস্যা ছিল না, কিন্তু অবৈধ সম্পর্কের কারণে তাঁর মানসিক অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল।

ত্রিপুরায় এই ধরনের ঘটনা অস্বাভাবিক নয়। গত কয়েক বছরে রাজ্যে পারিবারিক সংঘর্ষ এবং শিশু হত্যার কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে, যার পিছনে প্রায়শই অবৈধ সম্পর্ক বা অর্থনৈতিক চাপ থাকে। রাজ্য সরকার এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনতা কর্মসূচি চালিয়েছে, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, গ্রামীণ এলাকায় এই ধরনের সচেতনতা আরও বাড়ানো দরকার।

Advertisements

সেপাহিজালা জেলার এক সমাজকর্মী বলেন, “অনেক মহিলা পারিবারিক চাপে ভুগছেন এবং অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এটি প্রতিরোধের জন্য শিক্ষা এবং কাউন্সেলিং প্রয়োজন।”

সুচিত্রার স্বামী, যিনি একজন দিনমজুর, ঘটনা শুনে শোকাহত। তিনি বলেন, “আমি জানতাম না তাঁর এমন সম্পর্ক রয়েছে। আমার মেয়েকে হারিয়ে আমি ধ্বংস হয়ে গেছি।” পরিবারের সদস্যরা জানান, সুচিত্রা কয়েক মাস ধরে অস্থির ছিলেন এবং প্রায়শই ফোনে কথা বলতেন। প্রতিবেশীরা বলেন, “আমরা শিশুর কান্না শুনতে পাইনি বলে সন্দেহ হয়।

এটি একটি ভয়ানক ঘটনা।” এই ঘটনা ত্রিপুরার সমাজে মাতৃত্বের দায়িত্ব নিয়ে নতুন করে চিন্তা করিয়েছে এবং পুলিশকে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।রাজ্যের মানবাধিকার সংগঠনগুলি এই ঘটনার তদন্তের দাবি জানিয়েছে এবং বলেছে যে, মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর জোর দেওয়া দরকার।

ভোট অনিয়মে কমিশনের নির্দেশে ‘না’ নবান্নের, সাসপেনশনের বদলে তদন্ত

ত্রিপুরা পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের জন্য কমিউনিটি পুলিশিং বাড়াব।” এই ঘটনা সমাজকে সতর্ক করে যে, অবৈধ সম্পর্ক কীভাবে পরিবার ধ্বংস করতে পারে।