মণিপুরে বাড়ল উত্তেজনা! নৃশংস খুন ৭ সরকারি কর্মী

manipur-tuibuang-msplc-attack-2025

মণিপুর: মণিপুরের চুরাচান্দপুর জেলার তুইবুয়াংয়ে ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশনে একটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। যে ঘটনা ইতিমধ্যে চলতে থাকা জাতিগত উত্তেজনাকে আরও উস্কে দিয়েছে। সোমবার, ২০ অক্টোবর, কর্মকর্তারা জানান, মণিপুর স্টেট পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (এমএসপিসিএল) সাতজন কর্মীকে অজ্ঞাত অপরাধীরা নির্মমভাবে হামলা করেছে।

Advertisements

এই হামলা ১৮ অক্টোবর রাতে সাব-স্টেশনের কমপ্লেক্সের ভিতরে ঘটেছে, এবং শিকারীদের মধ্যে সাব-স্টেশনের দায়িত্বশীল অফিসারও ছিলেন। হামলাকারীদের উদ্দেশ্য এখনও অস্পষ্ট, কিন্তু এই ঘটনা রাজ্যের অস্থির নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর করে তুলেছে। এমএসপিসিএল এই ‘নৃশংস হামলা’র তীব্র নিন্দা করে জানিয়েছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা দাবি করেছে।

শুভেন্দু গড়ের গুরুত্বপূর্ণ বিধানসভায় BJP প্রার্থী কে? ঘোষণা করলেন খোদ বিধায়ক

চুরাচান্দপুর জেলা মণিপুরের পাহাড়ি অঞ্চলের একটি সংবেদনশীল এলাকা, যেখানে কুকি-জো সম্প্রদায়ের মানুষরা বেশিরভাগ বাস করে। এই সাব-স্টেশনটি স্থানীয় বিদ্যুৎ সরবরাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, এবং এখানে কর্মীরা দিনরাত কাজ করে রাজ্যের বিদ্যুৎ সিস্টেমকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে। ১৮ অক্টোবরের সেই রাতে, সাতজন কর্মী স্টেশনের ভিতরে ছিলেন।

হঠাৎ অজ্ঞাত ব্যক্তিরা ঢুকে পড়ে এবং লাঠি, ডাণ্ডা দিয়ে তাদের উপর হামলা চালায়। শিকারীদের মধ্যে অফিসার-ইন-চার্জ সবচেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছেন বলে জানা গেছে। তারা কোনোমতে প্রাণে বেঁচে গেলেও আঘাতের কারণে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

একজন কর্মীর স্ত্রী বলছেন, “আমার স্বামী রাতে ফোন করেছিলেন, বলেছিলেন সব ঠিক আছে। কিন্তু সকালে খবর পেয়ে আমরা ভেঙে পড়লাম। এখানে কাজ করা এখন মৃত্যুর সঙ্গে খেলা।” এই ঘটনা শুধু ব্যক্তিগত আঘাত নয়, বরং মণিপুরের সরকারি কর্মীদের নিরাপত্তার প্রতি গভীর প্রশ্ন তোলে।

Advertisements

এমএসপিসিএল তার অফিসিয়াল বিবৃতিতে বলেছে, “আমরা আমাদের কর্মীদের উপর এই নির্মম হামলার তীব্র নিন্দা করছি। কর্তৃপক্ষদের তাৎক্ষণিক এবং স্বচ্ছ তদন্ত করে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে এবং আমাদের কর্মীদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আহ্বান জানাই।” কোম্পানির মতে, এই ধরনের হামলা বিদ্যুৎ সেবাকে ব্যাহত করে এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তোলে।

স্থানীয় কর্মীরা বলছেন, চুরাচান্দপুরের মতো এলাকায় নিয়মিত বিদ্যুৎ ঝুল ঝুলের সমস্যা, আর এখন এই হামলা তাদের কাজের সাহস কেড়ে নিচ্ছে। একজন শিকারী কর্মী বলেছেন, “আমরা শুধু আমাদের কাজ করছিলাম।

কেন এমন হলো? আমরা ভয় পেয়ে গেছি, কিন্তু কাজ ছাড়া চলবে কী করে?” ২০২৩ সালের মে মাস থেকে মেইতেই এবং কুকি-জো গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে চলছে সাম্প্রদায়িক হিংসা। এই হিংসায় ২৬০-এরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং হাজার হাজার মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে।

চুরাচান্দপুর কুকি-জো অঞ্চলের একটি কেন্দ্রস্থল, যেখানে হিংসার ফলে স্কুল-কলেজ বন্ধ, বাজার লাইন এবং মানুষরা ভয়ে বাড়িতে আটকে আছে। এই হামলার সঙ্গে জাতিগত উত্তেজনার যোগসূত্র কতটা, তা এখনও স্পষ্ট নয়, কিন্তু স্থানীয় সূত্রগুলো বলছেন যে অজ্ঞাতকারীরা সম্ভবত স্থানীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছেন, এই ধরনের হামলা সরকারি কর্মীদের উপর বাধ্যতামূলক করে তোলে এবং শান্তি প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে।