মণিপুরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে নিকেশ ৪ জঙ্গি

manipur-operation-khanpi-army-assam-rifles-ukna-terrorists

চুরাচাঁদপুর: মণিপুরে ফের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান। সোমবার ভোররাতে রাজ্যের চুরাচাঁদপুর জেলার খানপি গ্রামে যৌথ অভিযান চালিয়ে ভারতীয় সেনা ও অসম রাইফেলস চারজন সন্ত্রাসবাদীকে নিকেশ করেছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের (MoD) সূত্রে জানা গেছে, নিহতরা নিষিদ্ধ সংগঠন United Kuki National Army (UKNA)-র সদস্য। অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘অপারেশন খানপি’, যা এখনও চলছে ।

Advertisements

SIR এর বিরোধিতায় শীর্ষ আদালতে মামলা করল রাজ্য সরকার

   

সূত্রের খবর, সেনা ও অসম রাইফেলসের যৌথ বাহিনী গোপন সূত্রে খবর পায় যে, খানপি গ্রামের আশেপাশে কিছু সশস্ত্র জঙ্গি লুকিয়ে আছে। রাতের অন্ধকারে শুরু হয় তল্লাশি অভিযান। ভোরের আগেই জঙ্গিরা আচমকা বাহিনীর ওপর গুলি চালায়। সেনারা পাল্টা জবাব দেয়, এবং প্রায় আধঘণ্টা গুলিবিনিময়ের পর চার জঙ্গি ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহত চারজনের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র, ম্যাগাজিন, রেডিও সেট এবং বেশ কিছু চীনা হ্যান্ড গ্রেনেড। গোটা এলাকা ঘিরে রেখে কম্বিং অপারেশন চলছে, কারণ আশঙ্কা করা হচ্ছে আরও কয়েকজন জঙ্গি জঙ্গলে লুকিয়ে থাকতে পারে।

এই সংঘর্ষের পটভূমিতে রয়েছে গত সপ্তাহের ভয়াবহ ঘটনা, যেখানে একই জঙ্গি সংগঠন UKNA-র সদস্যরা একটি গ্রামের প্রধানকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ওই ঘটনার পর থেকেই গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে, কারণ জঙ্গিরা প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছিল— কেউ যদি সেনা বা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, তবে তার পরিণতি একই হবে।

Advertisements

একজন স্থানীয় গ্রামবাসী সংবাদমাধ্যমকে জানান, “আমরা কয়েকদিন ধরে দেখছিলাম অপরিচিত কিছু মানুষ জঙ্গলে ঘোরাঘুরি করছে। আমরা খুব ভয় পেয়ে যাই। আজ ভোরে যখন গুলি চলতে শুরু করে, তখন বুঝলাম সেনারা এসেছে।” এই অভিযানের পর সেনা বাহিনীর তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মণিপুরের জনগণকে সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের সুযোগ করে দিতেই এই অভিযান। আমরা কোনও নিরীহ মানুষকে ক্ষতি করিনি, শুধু জঙ্গিদের লক্ষ্য করেই অ্যাকশন নেওয়া হয়েছে।”

সাম্প্রতিককালে মণিপুরে উত্তেজনা ফের বেড়েছে। পাহাড় ও উপত্যকার বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা সশস্ত্র সংগঠনগুলির মধ্যে সংঘর্ষ এবং তাদের বিরুদ্ধে সেনা অভিযান, দুটোই চলছে পাশাপাশি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই অভিযানের তাৎপর্য রাজনৈতিক ও কৌশলগত দুই দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ চুরাচাঁদপুর জেলাই গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি হিংসার সাক্ষী থেকেছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, অভিযানের সাফল্যের পরও সেনা ও অসম রাইফেলসের দল এলাকায় টহল অব্যাহত রেখেছে। আশেপাশের গ্রামগুলিতেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, যাতে কোনও জঙ্গি ফের গোপনে ঢুকে পড়তে না পারে।

একাধিক গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, UKNA-র মতো সংগঠনগুলি সীমান্ত পারের সাহায্যে এখনও সক্রিয় থাকার চেষ্টা করছে। কিন্তু সাম্প্রতিক এই অপারেশন প্রমাণ করেছে যে, নিরাপত্তা বাহিনী মণিপুরে সন্ত্রাস দমনে আগের থেকে অনেক বেশি প্রস্তুত এবং তথ্যভিত্তিকভাবে কাজ করছে।