গোলঘাট থেকে শুরু হিমন্তর নতুন ধাপে উচ্ছেদ অভিযান

অসমের মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta) মঙ্গলবার উচ্চ আসামে একটি নতুন ধাপের উচ্ছেদ অভিযান শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা গোলঘাট থেকে আরম্ভ হবে। এই অভিযান…

Himanta eviction drive

অসমের মুখ্যমন্ত্রী ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta) মঙ্গলবার উচ্চ আসামে একটি নতুন ধাপের উচ্ছেদ অভিযান শুরুর ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা গোলঘাট থেকে আরম্ভ হবে। এই অভিযান রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে অবৈধভাবে দখলকৃত জমি মুক্ত করার জন্য সরকারের প্রচেষ্টার অংশ।

সদিয়ার ঐতিহাসিক বুড়হা-বুড়ি থান প্রকল্পের সফরকালে বক্তৃতা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, মার্গারিটায় ইতিমধ্যেই অভিযান শুরু হয়ে গেছে এবং এটি সুষ্ঠুভাবে চলতে থাকবে যাতে সব অবৈধ দখলকৃত জমি মুক্ত হতে পারে।

   

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা জেনেছি যে অনেক অবৈধ দখলদার মার্গারিটায় বিনামূল্যে জমি পাওয়ার সুযোগে বসতি স্থাপন করেছে। তবে, আমরা একসঙ্গে সব উচ্ছেদ করতে পারব না, কারণ প্রতিটি অভিযানের জন্য কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগে। তাই আমরা অগ্রাধিকারভিত্তিতে এগোচ্ছি। একদিন আমরা সমস্ত দখলকৃত জমি ফিরে পাব।” তিনি এই উদ্যোগের মাধ্যমে রাজ্যের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য জমি উদ্ধারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।

বিকাশ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান

দিনের শুরুতেই ডঃ শর্মা সদিয়ার বুড়া-বুড়ি শালে একটি ১২,০০০ লিটার জল সরবরাহ পরিকল্পনা উদ্বোধন করেন এবং প্রায় ৯ কোটি টাকা মূল্যের একটি উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন, যা পবিত্র স্থানটির সংরক্ষণ ও উন্নতির লক্ষ্যে গ্রহণযোগ্য। এই প্রকল্পটি স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করবে।

তিনি একটি প্রথাগত ভূমি পূজন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে স্থানীয় গুরুদেব শঙ্করদেবের আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারকে সম্মান জানান। এই অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে রাজ্যমন্ত্রী বিমল বরা, রূপেশ গোৱালা এবং বিধায়ক বলিন চেতিয়া, সুরেন ফুকন, তরঙ্গ গোগৈ এবং সঞ্জয় কিশন উপস্থিত ছিলেন।

উচ্ছেদ অভিযানের প্রেক্ষাপট

গত কয়েক বছরে আসাম সরকার অবৈধ দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে, যার ফলে প্রায় ১.২৯ লক্ষ বিঘা জমি উদ্ধার করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই অভিযানগুলো শুধু জমি ফিরিয়ে পাওয়ার জন্য নয়, বন্যপ্রাণীদের বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং স্থানীয় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি বলেন, “উচ্চ আসামের গোলঘাট ও মার্গারিটার মতো এলাকায় দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, কারণ এখানে জনসংখ্যার গঠন বদলের ঝুঁকি রয়েছে।” তিনি আরও জানান যে, আইনি পদ্ধতি মেনে এই অভিযান চালানো হবে, যাতে কোনো ন্যায়বিচারের অভাব না হয়।

Advertisements

সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

এই উচ্ছেদ অভিযান সামাজিকভাবে বিতর্কের মধ্যে রয়েছে। স্থানীয় কিছু গোষ্ঠী এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে, কারণ তাদের মতে, এটি স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জমি ও পরিচয় রক্ষা করবে। তবে, কিছু সামাজিক সংগঠন এবং বিরোধী দলগুলো দাবি করছে যে, এই অভিযান কিছু সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে চালানো হচ্ছে, যা মানবিক সংকট সৃষ্টি করতে পারে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার, তবে, এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলছে যে, তাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।

ঢাকার বিদ্যালয়ে যুদ্ধবিমান ধংস, ‘সঠিক লাশের হিসাব’ চেয়ে পড়ুয়াদের মারে জওয়ানরা জখম

ভবিষ্যত পরিকল্পনা ও উন্নয়ন

মুখ্যমন্ত্রী জানান, উচ্ছেদ অভিযানের পাশাপাশি রাজ্যে জলবায়ু পরিবর্তন ও বন উন্নয়নের জন্য বিশেষ প্রকল্প চালু করা হবে। তিনি বলেন, “আমরা বন্যপ্রাণীদের জন্য নিরাপদ আবাস সৃষ্টি করছি এবং স্থানীয় কৃষকদের জন্য জমি উৎপাদনশীল করব।” বুড়হা-বুড়ি থান প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ঐতিহ্যকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি এলাকার জনগণের জীবনযাত্রা উন্নত করার উদ্দেশ্য রয়েছে।

ডঃ হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে আসাম সরকার অবৈধ দখলকৃত জমি ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতি দেখিয়েছে। গোলঘাট ও মার্গারিটা থেকে শুরু হওয়া এই অভিযান রাজ্যের পরিবেশ, সংস্কৃতি ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

তবে, এই পদক্ষেপের সাথে মানবিক দিকটি বিবেচনা করে এগোনোর দাবি উঠেছে, যাতে কোনো সম্প্রদায়ের উপর অন্যায় না হয়। এই অভিযানের সাফল্য রাজ্যের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে নির্ভর করবে।