গুয়াহাটি, ১১ নভেম্বর — দিল্লির বুকে কাঁপানো ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা নিয়ে সরব হয়েছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta Biswa Sharma)। মঙ্গলবার নगाাঁও জেলার এক অনুষ্ঠানের পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী তীব্র ভাষায় নিন্দা জানিয়ে বলেন, “যারা নিরপরাধ মানুষের জীবন নাশ করে ভয় ছড়াতে চায়, তাদের স্থান জেল—সমাজে নয়।” তিনি বলেন, দেশের এই সংকটকালীন মুহূর্তে সবাইকে একজুট হয়ে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও দাবি করেন, নিরাপত্তা সংস্থার সাম্প্রতিক তল্লাশিতে একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তির কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে—এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং বড় নকশার ইঙ্গিত দেয়। শর্মা এ প্রসঙ্গে বলে দেন, “আজ সন্ধ্যার মধ্যে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে।” তিনি গোটা জাতিকে সতর্ক করে বলেন, দেশের নিরাপত্তা শুধু সামরিক বা প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে না—প্রতি নাগরিককেই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে।
দিল্লি সংক্রান্ত ঘটনার পরে রাজ্যে নিরাপত্তা সতর্কতা জারি করা হয়েছে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “অসমেও আমরা সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিং শুরু করেছি। কিছু কিছু পোস্ট এবং মন্তব্যে দেখা যাচ্ছে কিছু মানুষ এই ঘটনার প্রতি সদর্থক প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে—কেউ ইমোজি পোস্ট করছেন, কেউ উল্লাসস্বরে মন্তব্য করছেন। এসব আচরণ জঙ্গিবাদকেই প্রশ্রয় দেয়।” তাই তিনি রাজ্যের ডিজি পিকে (ডিরেক্টর জেনারেল অব পুলিশ) নির্দেশ দিয়েছেন যাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় সন্দেহভাজন পোস্টের উৎস চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যাকগ্রাউন্ড চেক করা হয়। পরের ধাপে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।
শর্মা সাফ বলে বলেছেন, “যদি দেখা যায় কোনো ব্যক্তি আসলেই অসমের বাসিন্দা এবং জঙ্গিবাদকে সমর্থন করছে, তবে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে; প্রয়োজনে গ্রেপ্তার করা হবে। আমাদের রাজ্যে জঙ্গিবাদের কোনো জড়ি গজাতে দেব না।” তিনি আরও জোর দিয়েছেন যে অসম গত কয়েক বছরে শান্তি ও উন্নয়নের পথে এগিয়েছে এবং এই অর্জন রক্ষা করাই তাদের মূল লক্ষ্য।
মুখ্যমন্ত্রী নিরাপত্তা বিভাগের পদক্ষেপ ও সাধারণ নাগরিকদের জাগরণকে সমন্বিত করে দেখেছেন—রাজ্যের সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে এবং পুলিশ-মিথ্যা তথ্য ও উসকানিমূলক কনটেন্ট চিহ্নিত করতে সাইবার বিভাগ কার্যক্রম বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, “এখনই সময় জেগে ওঠা; রাজনীতি পরে—দেশ আগে।”
উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক বিস্ফোরণকে কেন্দ্র করে যে কেউ আনন্দ করে বা উল্লাস করে, সে শুধু নৈতিক দিক থেকে দায়ী নয়—রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তাই কেবল প্রকাশ্য নিন্দা নয়, প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপও নেওয়া হবে।
শেষে মুখ্যমন্ত্রী নাগরিকদের প্রতি অনুরোধ করেন—শান্তি বজায় রাখুন, সামাজিক সম্প্রীতিতে বাধা দেবেন না এবং সন্দেহভাজন বা উসকানিমূলক পোস্ট দেখলে তা রিপোর্ট করুন। তাঁর কণ্ঠে ছিল দৃঢ়তা—অসমের মাটি জঙ্গিবাদের বিস্তার সহন করবে না এবং কেউ চেষ্টা করলে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে শেকড়সহ উধাও করবে।

