অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta) সম্প্রতি এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগে বলেছেন যে, কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি, কংগ্রেস দল, জামায়াত-ই-ইসলামী-হিন্দ, এবং পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কিছু উপাদান রাজ্যকে অস্থিতিশীল করার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করছে।
তিনি বিশেষভাবে সমাজকর্মী হর্ষ মান্ডার, আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ, জওহর সরকার, ওয়াজাহাত হাবিবুল্লাহ এবং ফয়াজ শাহিনের নাম উল্লেখ করে বলেন, এই ব্যক্তিরা দিল্লি থেকে এসে অসমের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। মুখ্যমন্ত্রী এই অভিযোগ করেছেন রোববার মার্ঘেরিটায় একটি অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়।
শর্মা অভিযোগ করেছেন যে, এই ব্যক্তিরা এবং দলগুলো আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের (২০২৬) আগে অসমে অশান্তি সৃষ্টির জন্য পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে। তিনি বলেন, “এই ব্যক্তিরা জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) আপডেটের সময়ও একইভাবে অসমে এসে প্রক্রিয়াটিকে ব্যর্থ করেছিল।
এবার আমরা তাদের গতিবিধির উপর কড়া নজর রাখছি যাতে তারা তাদের উদ্দেশ্যে সফল না হয়।” তিনি আরও বলেন, “কংগ্রেস, জামায়াত-ই-ইসলামী-হিন্দ, প্রশান্ত ভূষণ, হর্ষ মান্ডার এবং পাকিস্তান ও বাংলাদেশের কিছু উপাদান অসমকে দুর্বল করার জন্য সক্রিয়। আমাদের অসমীয়া এবং ভারতীয়দের ঐক্যবদ্ধ থেকে এই ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করতে হবে।”
মুখ্যমন্ত্রী শর্মার এই অভিযোগ অসমে সাম্প্রতিক উচ্ছেদ অভিযানের পটভূমিতে এসেছে, যেখানে সরকার বনভূমি, চারণভূমি এবং সরকারি জমি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করছে। তিনি দাবি করেছেন, এই উচ্ছেদ অভিযানগুলি আইনি এবং অসমের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর ভূমি অধিকার এবং সংস্কৃতি রক্ষার জন্য অপরিহার্য।
তবে, বিরোধী দলগুলো এবং কিছু সংগঠন অভিযোগ করেছে যে এই অভিযানগুলি বাংলা-ভাষী মুসলিম সম্প্রদায়কে (যাদের ‘মিয়া’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়) লক্ষ্য করে পরিচালিত হচ্ছে, যা তারা ব্যাপক উচ্ছেদ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
শর্মা বলেন, “এই দিল্লি-ভিত্তিক দলটির একমাত্র উদ্দেশ্য হলো আইনি উচ্ছেদ অভিযানকে ‘মানবিক সংকট’ হিসেবে চিত্রিত করা। এটি অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইকে দুর্বল করার একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা।” তিনি এক্স প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করে বলেন, “আমরা সতর্ক এবং দৃঢ়—কোনো প্রচার বা চাপ আমাদের ভূমি এবং সংস্কৃতি রক্ষার কাজ থেকে বিরত করতে পারবে না।”
এই অভিযোগের পাশাপাশি, শর্মা আরও দাবি করেছেন যে গত এক মাসে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং মধ্যপ্রাচ্য থেকে ৫,০০০-এর বেশি সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হয়েছে, যেগুলো কংগ্রেসের সমর্থনে কাজ করছে এবং ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে জনসমর্থনের ভুয়ো চিত্র তৈরি করছে। তিনি জাতীয় সংস্থাগুলির কাছে এই বিষয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলো শর্মার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনেছে। ইউনাইটেড অপোজিশন ফোরাম অসম (ইউওএফএ), যা ১৮টি দলের জোট, শর্মার বিরুদ্ধে ধর্ম এবং জাতিগত ভিত্তিতে শত্রুতা উসকে দেওয়ার অভিযোগে দিসপুর থানায় একটি এফআইআর দায়ের করেছে। তারা বলেছে, শর্মা একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে উসকানিমূলক মন্তব্য করছেন, যা রাজ্যে দাঙ্গার পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
তারা বিশেষ করে ধিংয়ে একটি ১৪ বছর বয়সী কিশোরীর ধর্ষণের ঘটনার পর শর্মার মন্তব্যের সমালোচনা করেছে, যেখানে তিনি একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে মন্তব্য করেছেন বলে অভিযোগ।
ইউওএফএ-এর নেতারা, যার মধ্যে রয়েছেন অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি ভূপেন কুমার বরাহ এবং অসম জাতীয় পরিষদের সভাপতি লুরিনজ্যোতি গগৈ, বলেছেন, শর্মার “একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অবিরাম উসকানিমূলক মন্তব্য” রাজ্যে ব্যাপক অশান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
তারা শর্মার মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে অপসারণের জন্য রাষ্ট্রপতি এবং রাজ্যপালের কাছে দাবি জানিয়েছে এবং তার এবং তার পরিবারের সম্পত্তির তদন্তের জন্য সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করার পরিকল্পনা করছে।
প্রথম মানব মহাকাশ অভিযানের খুব কাছাকাছি ভারত, প্যারাসুট সিস্টেমের পরীক্ষা সফল
এই ঘটনা অসমের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। শর্মার অভিযোগ এবং বিরোধীদের পাল্টা অভিযোগ রাজ্যের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশকে আরও জটিল করে তুলছে। সরকার এবং বিরোধী দলগুলোর মধ্যে এই দ্বন্দ্ব ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে আরও তীব্র হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।