গুয়াহাটি, ৩১ অক্টোবর: অসম রাজনীতিতে ফের ঝড় তুললেন মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি চাঞ্চল্যকর দাবি করে বলেন— “অসম প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি গৌরব গগৈ-এর পাকিস্তানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের যথেষ্ট প্রমাণ আমাদের হাতে রয়েছে। এখনই প্রকাশ করছি না, কারণ এর সময় এখনও আসেনি। কিন্তু খুব শীঘ্রই সেই প্রমাণ জনসমক্ষে তুলে ধরা হবে।”
এই মন্তব্যের পরেই কার্যত উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে অসমের রাজনৈতিক অঙ্গন। রাজ্যের শাসক বিজেপি শিবিরে উচ্ছ্বাস, আর কংগ্রেস শিবিরে প্রবল অস্বস্তি।
হিমন্ত শর্মা আরও বলেন— “অসমবাসীর জানার অধিকার আছে। যারা নিজেদের দেশপ্রেমিক বলে প্রচার করে, তাদের মুখোশ এবার খুলে যাবে। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে কেউই এই দেশের রাজনীতি করতে পারবে না।”
তাঁর এই মন্তব্যে উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্যেও মুহূর্তের মধ্যে চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, আসন্ন নির্বাচনের আগে এই দাবি কেবল রাজনৈতিক নয়, বরং একটি বড় কৌশলও হতে পারে।
এদিকে কংগ্রেস এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে দলের অন্তর্গত এক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্য একেবারে ভিত্তিহীন। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক ফায়দা তোলার উদ্দেশ্যেই এই ধরনের মন্তব্য করা হচ্ছে।”
অন্যদিকে বিজেপি শিবিরে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ঘিরে উচ্ছ্বাস স্পষ্ট। বিজেপি মুখপাত্র দাবি করেছেন, “দেশবিরোধী শক্তি ও বিদেশি প্রভাবের সঙ্গে কারা যুক্ত, সেই সত্য এবার প্রকাশ্যে আসবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. অভিজিৎ দত্ত মনে করছেন, “অসমে ভোটের আবহ তৈরি হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের মাধ্যমে বিজেপি মূলত জাতীয় নিরাপত্তা ও দেশপ্রেমের ইস্যুতে ভোটারদের আবেগে দোলাতে চাইছে। তবে প্রমাণ প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত এই দাবিকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত, তা বলা কঠিন।”
তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ বলছেন, “যদি সত্যিই প্রমাণ থাকে, তবে তা প্রকাশ করা উচিত।” আবার কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, “প্রমাণ ছাড়া এই ধরনের মন্তব্য রাজনৈতিক বিভাজন বাড়াবে।”
গৌরব গগৈ, যিনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের পুত্র, বর্তমানে রাজ্য কংগ্রেসের প্রধান মুখ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে পাকিস্তান-যোগের অভিযোগ রাজনৈতিকভাবে বড় আঘাত হতে পারে— এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
অসমের রাজনীতি যেখানে বিগত কয়েক মাস ধরে জুবিন গার্গের মৃত্যু, NRC, এবং শরণার্থী ইস্যু নিয়ে সরব, সেখানে এই নতুন বিতর্কে রাজ্য রাজনীতি আরও উত্তপ্ত হওয়া অবশ্যম্ভাবী।


