অরূপ চক্রবর্তী, গুয়াহাটি,২ নভেম্বরে: অসমে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে যেন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলেন মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। সামাজিক মাধ্যমে এক তীব্র বার্তায় তিনি জানিয়ে দিলেন, “মিঞা ভাইদের দুঃসাহস অসমে চলবে না!” — এই এক বাক্যেই স্পষ্ট হয়ে গেল, এখন আর আপস নয়। মুখ্যমন্ত্রীর দৃঢ় ঘোষণা, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ অভিযান চলবে, প্রত্যেক অনুপ্রবেশকারীকে অসমের মাটি থেকে বিতাড়িত করা হবে।
এটাই তাঁর নতুন অসম— কঠোর, নির্ভীক এবং নিজের ভূমি ও সংস্কৃতির প্রতি অবিচল। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা তাঁর বার্তায় স্পষ্ট করে বলেন, “অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চলবেই। প্রত্যেক অনুপ্রবেশকারীকে অসমের মাটি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে। এটাই আমাদের অসমপ্রেম, এটাই আমাদের মাতৃভূমির সেবা।”
জনমত সমীক্ষায় মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে এগিয়ে তেজস্বী, ক্ষমতা হারাচ্ছে BJP জোট?
এই মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যের প্রশাসনিক মহলে আলোড়ন পড়ে যায়। শর্মা জানিয়ে দেন, অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে তাঁর সরকার কোনো দয়া বা ছাড় দেবে না। মুখ্যমন্ত্রীর বার্তার পরপরই জানা যায়, শ্রীভূমি জেলার সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে অসম পুলিশ ১৬ জন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছে, যারা অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে রাজ্যে প্রবেশ করেছিল।
তদন্ত শেষে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনাকেই মুখ্যমন্ত্রী “নতুন অসম”-এর বাস্তব চিত্র বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “শ্রীভূমি জেলার পুলিশ যে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়েছে তা প্রশংসনীয়। প্রত্যেক অনুপ্রবেশকারীকে শনাক্ত করে আটক ও ফেরত পাঠানো হবে। অসম এখন কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে অবৈধভাবে কেউ ঢুকলে তাকে অবিলম্বে সীমান্তে ফেরত পাঠানো হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “অসমের ভূমিতে যারা কু-উদ্দেশ্যে প্রবেশ করতে চায়, তাদের জানা উচিত— এখন আর আগের মতো শিথিল প্রশাসন নেই। অসম এখন নতুন পথে হাঁটছে। এই ভূমি আমাদের মা, আর আমরা আমাদের মায়ের ভূমি রক্ষা করব, যেভাবেই হোক।” অসমের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্ত প্রায় ২৬৭.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ।
এই সীমান্তের বড় অংশ ভাগ করে নিয়েছে শ্রীভূমি, কাছাড়, ধুবরী এবং দক্ষিণ শালমারা–মানকাচর জেলা। সীমান্তবর্তী এই চার জেলায় বহু বছর ধরেই অনুপ্রবেশ ও চোরাচালানের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বর্তমানে তিনটি ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট (আইসিপি) চালু রয়েছে— শ্রীভূমির সুতারকান্দি, মেঘালয়ের ডাউকি এবং ত্রিপুরার আখৌড়া।
এছাড়া ভারত–ভুটান সীমান্তে অসমের দরং জেলায় রয়েছে আরেকটি আইসিপি। যদিও বৈধ বাণিজ্যিক পথ খোলা আছে, প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে সীমান্তের অনেক অরক্ষিত অংশে এখনও ফাঁকফোকর রয়ে গেছে, যেখান দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা প্রবেশ করছে। অসম পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) গত কয়েক মাস ধরে নজরদারি বাড়িয়েছে।
রাতের টহল, সন্দেহজনক গতিবিধি শনাক্তকরণ এবং সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া বসানোর কাজও দ্রুত এগোচ্ছে। বিশেষ করে শ্রীভূমি ও ধুবরী জেলার বিভিন্ন গ্রামে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, যেখানে অতীতে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠেছিল। স্থানীয় প্রশাসন এখন বাসিন্দাদের নাগরিক পরিচয় যাচাই এবং প্রয়োজনীয় নথিপত্র পরীক্ষা আরও কড়া ভাবে করছে।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা গত কয়েক মাস ধরে ক্রমাগত বলছেন যে, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও দখলদারির প্রশ্নে তাঁর সরকার কোনোভাবে আপস করবে না। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় ইতিমধ্যেই একাধিক উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে, যেখানে সরকার দাবি করেছে যে কয়েক হাজার বিঘা সরকারি ও বনভূমি অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “অসমবাসীকে আমি আশ্বস্ত করছি— যতদিন আমি মুখ্যমন্ত্রী থাকব, অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবেই।
যারা আমাদের ভূমি দখল করেছে, তারা যেই হোক না কেন, আইন তাদের রেহাই দেবে না।” “অসম এখন আত্মবিশ্বাসী, কঠোর এবং নিজের সংস্কৃতি ও পরিচয়ে গর্বিত,” বলেন মুখ্যমন্ত্রী। “কেউ এই রাজ্যের জমি, জল বা ঐতিহ্য কেড়ে নিতে পারবে না।
যারা এই ভূমিকে অসম্মান করবে, তাদের আমরা বিন্দুমাত্র ছাড় দেব না।” মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যে রাজনীতির অঙ্গনও সরগরম। বিজেপি এবং শাসক শিবির মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থানকে সমর্থন জানিয়ে বলেছে যে, অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে অসমের সংস্কৃতি ও সামাজিক ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তাই এই কঠোর পদক্ষেপই এখন সময়ের দাবি। অন্যদিকে কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দল সরকারের এই অবস্থানকে “রাজনৈতিকভাবে প্রণোদিত” বলে মন্তব্য করেছে। বিরোধীদের দাবি, সরকারের এই পদক্ষেপ বাস্তব সমস্যার সমাধান না করে বরং সমাজে বিভাজন তৈরি করছে।
তবে সীমান্তবর্তী এলাকার বহু সাধারণ মানুষ মুখ্যমন্ত্রীর অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের মতে, যদি সরকার সত্যিই আন্তরিকভাবে অনুপ্রবেশ রোধে কাজ করে, তবে স্থায়ীভাবে সীমান্ত সুরক্ষা জোরদার করতে হবে এবং স্থানীয় মানুষকেও এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বক্তব্যের মূল সুর একটাই অসম আর আগের অসম নয়। “এটাই নতুন অসম” এই বাক্য যেন এখন অসমবাসীর আত্মবিশ্বাসের প্রতীক হয়ে উঠেছে। নতুন অসমে দখলদারি, অনুপ্রবেশ বা বেআইনি কার্যকলাপের কোনো স্থান নেই, শুধু আইন, শৃঙ্খলা ও আত্মমর্যাদার পথই সামনে।
অসমের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক পরিসরে এই বার্তা যেন এক নতুন যুগের সূচনা। দীর্ঘদিনের অনুপ্রবেশ সমস্যা এবং সীমান্ত-সংক্রান্ত সংকটের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর এই কঠোর বার্তা নতুন প্রত্যয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রশাসন যেমন সক্রিয় হয়েছে, তেমনি জনমানসেও এক নতুন আত্মবিশ্বাসের সঞ্চার ঘটেছে যে অসম নিজের মাটি, নিজের মানুষ এবং নিজের সম্মান রক্ষায় আর পিছিয়ে থাকবে না। অসম এখন সত্যিই বদলে যাচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার ভাষায় -“এটাই নতুন অসম।”


