গুয়াহাটি: “অন্ত্যোদয়ই আমাদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য এবং মিশন” এই বার্তাই দিয়ে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Himanta Biswa Sarma)রাজ্যের দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এক বড় ঘোষণা করলেন। সোমবার থেকে অসমে শুরু হয়েছে এক ঐতিহাসিক উদ্যোগ রেশন দোকানে বাজারদরের নিচে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস বিক্রির প্রকল্প। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় জানানো হয়েছে, মসুর ডাল ৬৯ টাকা প্রতি কেজি, চিনি ৩৮ টাকা কেজি, আর লবণ ১০ টাকা কেজি দরে এখন থেকে মিলবে রাজ্যের ফেয়ার প্রাইস শপে।
অর্থাৎ, মুখ্যমন্ত্রীর ভাষায়, এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যই হল “অন্ত্যোদয়” সমাজের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা মানুষদের কাছে সাশ্রয়ী দামে খাদ্য পৌঁছে দেওয়া। এই উদ্যোগ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে রেশন দোকানগুলিতে দেখা গেছে উপচে পড়া ভিড়।
Su-57 নাকি F-35? পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ ফাইটারের জন্য বড় সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে ভারত
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এই কর্মসূচি অসম সরকারের “ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড সাসটেইনেবল লিভলিহুড মিশন”-এর অন্তর্গত। এর আওতায় রাজ্যের সব ফেয়ার প্রাইস শপে একযোগে ডাল, চিনি ও লবণ বাজারদরের চেয়ে কম মূল্যে বিক্রি করা হবে। এর ফলে প্রায় ২৫ লক্ষ পরিবার সরাসরি উপকৃত হবে বলে সরকারের হিসেব।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মূল্যবৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের মধ্যে এই সিদ্ধান্ত রাজ্যের সাধারণ মানুষের জন্য বড় স্বস্তি নিয়ে আসবে। মসুর ডালের বাজারদর বর্তমানে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি পর্যন্ত, সেখানে ৬৯ টাকায় এটি বিক্রি হওয়া নিঃসন্দেহে গরিব ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জন্য আশীর্বাদস্বরূপ।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, “আমরা চাই অসমে কেউ যেন অভাবে না ভোগে। প্রতিটি নাগরিক যেন সুলভ মূল্যে খাদ্য সামগ্রী পায়, সেটাই আমাদের সরকারের প্রতিশ্রুতি। আজ থেকে সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন শুরু হল।” তবে শুধু ডাল, চিনি ও লবণেই সীমাবদ্ধ নয়, সরকার ভবিষ্যতে চাল, তেল এবং ডালজাতীয় আরও কিছু দ্রব্যও অন্তর্ভুক্ত করার কথা ভাবছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রকল্পটি পর্যায়ক্রমে রাজ্যের প্রতিটি জেলা ও গ্রামে বিস্তৃত করা হবে।
অন্যদিকে, বিরোধীরা বলছে, সরকারের এই পদক্ষেপ নির্বাচনমুখী প্রচেষ্টা। তবে সাধারণ মানুষের চোখে এটি নিঃসন্দেহে এক ইতিবাচক উদ্যোগ। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এই প্রকল্পের মাধ্যমে একদিকে জনসাধারণের আস্থা অর্জন করতে চাইছেন, অন্যদিকে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতিকে আরও মজবুত করছেন।
অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল জনগোষ্ঠীর জীবনে এর প্রভাব যে ইতিবাচক হবে, তা নিয়ে কেউ সন্দেহ রাখছেন না। অনেকেই বলছেন, এই পদক্ষেপই প্রমাণ করে যে উন্নয়নের মানে শুধু অবকাঠামো নয়, মানুষের থালা ভরানোও সরকারের দায়িত্ব। অসম সরকারের এই সস্তা রেশন প্রকল্প তাই রাজ্যে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল। মুখ্যমন্ত্রী নিজে যেমন বললেন, “এটা শুধু অর্থনৈতিক সাহায্য নয়, এক মানবিক মিশন অন্ত্যোদয়।”


