খুনের হুমকি! রাজ্যপালের ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিধায়কের

ত্রিপুরার টিপরা মথা পার্টি (Governors Son)-র বিধায়ক ফিলিপ কুমার রিয়াং মঙ্গলবার একটি গুরুতর অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, তেলঙ্গানার গভর্নর জিষ্ণু দেব বর্মার পুত্র…

Governors Son accused

ত্রিপুরার টিপরা মথা পার্টি (Governors Son)-র বিধায়ক ফিলিপ কুমার রিয়াং মঙ্গলবার একটি গুরুতর অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, তেলঙ্গানার গভর্নর জিষ্ণু দেব বর্মার পুত্র প্রতীক কিশোর দেব বর্মা এবং তিনজন অজ্ঞাত ব্যক্তি তাঁকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এই ঘটনা আগরতলার নবনির্মিত বিধায়ক হোস্টেলে সোমবার রাতে ঘটেছে।

ফিলিপ রিয়াং-এর অভিযোগের ভিত্তিতে ত্রিপুরা পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে এবং রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে এই ঘটনা ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। টিএমপি-র একটি ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল মঙ্গলবার ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ড. মানিক সাহার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই ঘটনার দ্রুত তদন্ত এবং বিধায়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।

   

ফিলিপ রিয়াং জানিয়েছেন, সোমবার রাত প্রায় ১০টার দিকে তিনি বিধায়ক হোস্টেলের নিজের কক্ষের বাইরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন। এই সময় তিন-চারজন অজ্ঞাত ব্যক্তি, যারা মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলে অভিযোগ, তাঁকে হুমকি দেন এবং মৌখিকভাবে গালিগালাজ করেন।

পরে তিনি জানতে পারেন, এই ব্যক্তিরা বিজেপি বিধায়ক প্রমোদ রিয়াং-এর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন এবং তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন তেলঙ্গানার গভর্নর জিষ্ণু দেব বর্মার পুত্র প্রতীক কিশোর দেব বর্মা। রিয়াং তাৎক্ষণিকভাবে পশ্চিম ত্রিপুরার পুলিশ সুপার নমিত পাঠককে বিষয়টি জানান। পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে।

ফিলিপ রিয়াং সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বলেন, “এটি একটি গুরুতর নিরাপত্তা ত্রুটি। বিধায়ক হোস্টেলে প্রায় ৪২-৪৫ জন বিধায়ক থাকেন। আজ আমার সঙ্গে এই ঘটনা ঘটেছে, কাল অন্য কারও সঙ্গে ঘটতে পারে। মুখ্যমন্ত্রীর উচিত এই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।” টিএমপি বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা হোস্টেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি তুলে ধরে বলেন, “হোস্টেলে প্রবেশকারী গাড়ির কোনো রেকর্ড রাখা হয় না।

আমরা নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি জানিয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী এবং ডিজিপি আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন যে, তাঁরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন।”এই ঘটনা ত্রিপুরার রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। টিএমপি-র আরেক বিধায়ক বৃষকেতু দেববর্মা বলেন, “এই ঘটনা শুধুমাত্র বিধায়কদের নিরাপত্তার প্রশ্নই নয়, এটি রাজ্যের সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলার প্রতি হুমকি।”

ত্রিপুরার পুলিশ মহাপরিচালক (ডিজিপি) অনুরাগ ধনকর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং হোস্টেলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করছেন। পুলিশ জানিয়েছে, তারা অভিযুক্তদের শনাক্ত করার চেষ্টা করছে এবং শুধুমাত্র অনুমোদিত ব্যক্তিদেরই হোস্টেলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হবে।জিষ্ণু দেব বর্মা, যিনি ত্রিপুরার প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী এবং ত্রিপুরার রাজপরিবারের সদস্য, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে তেলঙ্গানার গভর্নর হিসেবে নিযুক্ত হন।

Advertisements

তাঁর পুত্র প্রতীকের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ত্রিপুরা এবং তেলঙ্গানার রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এর আগেও, ২০২৪ সালের অক্টোবরে, চারিলাম বাজারে বিজেপি ও টিএমপি-র সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় প্রতীক দেব বর্মা স্থানীয় বিজেপি নেতাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

এই ঘটনা টিএমপি এবং বিজেপির মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। টিএমপি-র প্রধান প্রদ্যোৎ কিশোর মানিক্য দেববর্মা, যিনি জিষ্ণু দেব বর্মার ভাইপো, দীর্ঘদিন ধরে ত্রিপুরার আদিবাসীদের জন্য পৃথক রাজ্যের দাবি জানিয়ে আসছেন। ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জিষ্ণু চারিলাম কেন্দ্রে টিএমপি-র সুবোধ দেববর্মার কাছে হেরে যান, যা বিজেপি-টিএমপি সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলেছিল।

স্থানীয় বাসিন্দা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা ত্রিপুরার রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। একজন বিশ্লেষক বলেন, “বিধায়ক হোস্টেলের মতো সুরক্ষিত জায়গায় এমন ঘটনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এটি রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।” এদিকে, বিজেপি নেতৃত্ব এখনও এই ঘটনায় সরকারি বিবৃতি দেয়নি।

পুলিশ জানিয়েছে, তারা সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করছে এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে। ডিজিপি অনুরাগ ধনকর বলেন, “আমরা এই ঘটনাকে গুরুত্ব সহকারে দেখছি। বিধায়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নেব।” টিএমপি-র প্রতিনিধি দল মুখ্যমন্ত্রীকে হোস্টেলে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য চাপ দিয়েছে, এবং সরকার এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছে।

এই ঘটনা ত্রিপুরার রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। আগামী দিনে তদন্তের অগ্রগতি এবং সরকারের পদক্ষেপ এই ঘটনার রাজনৈতিক প্রভাব নির্ধারণ করবে।