গুয়াহাটি, ২৮ অক্টোবর: অসমের সংগীত জগতের প্রিয় সন্তান, সুরের জাদুকর প্রয়াত জুবিন গর্গ আর নেই। কিন্তু তাঁর কণ্ঠ, তাঁর সুর আজও কোটি ভক্তের হৃদয়ে বেঁচে আছে। সেই অবিনশ্বর স্মৃতিকে সম্মান জানাতে আজ সকালে সোনাপুরের সমাধিস্থলে হাজির হন কণ্ঠশিল্পী দেবজিৎ সাহা।
নিস্তব্ধ পাহাড়ি সকাল, হালকা বাতাস, আর চারদিকে ভক্তদের ভিড়। কেউ হাতে ফুল, কেউ জ্বালিয়েছেন মোমবাতি, আবার কারও ঠোঁটে ভেসে আসছে জুবিনের অমর গান—“Ya Ali”, “Ei Mon Tumi”, “O Bideshi Bondhu”। প্রত্যেকটি সুর যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিল, সত্যিকারের শিল্পীরা কখনো চলে যান না, তাঁরা বেঁচে থাকেন তাঁদের সৃষ্টির মধ্যেই।
দেবজিৎ সাহা সমাধিতে পৌঁছে প্রথমে ফুল অর্পণ করেন। তারপর কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে প্রার্থনা করেন। মুখে কোনো শব্দ না থাকলেও চোখের ভাষাই বলে দিচ্ছিল সব কিছু—হারানোর বেদনা, ভালোবাসার গভীরতা, আর এক শিল্পীর প্রতি আরেক শিল্পীর নিঃশব্দ শ্রদ্ধা।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দেবজিৎ আবেগভরা কণ্ঠে বলেন,
“জুবিনদা শুধুই একজন গায়ক নন, তিনি আমাদের আবেগ, আমাদের শিকড়। তাঁর কণ্ঠে অসমের আত্মা কথা বলত। আজ তাঁর সমাধিতে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে, এক যুগ যেন শেষ হয়ে গেল। তবে তাঁর সুর, তাঁর গান চিরকাল বেঁচে থাকবে আমাদের সবার মধ্যে।”
সমাধিস্থলে উপস্থিত ছিলেন জুবিন গর্গের পরিবারের সদস্যরাও। দেবজিতের এই আগমন তাঁদের গভীরভাবে স্পর্শ করেছে। তাঁদের মতে, দেবজিৎ ও জুবিনের সম্পর্ক ছিল পারস্পরিক সম্মান ও ভালোবাসায় ভরা, যা সংগীতের সূত্রে আজও অটুট।
ভক্তরাও ভরে উঠেছিলেন আবেগে। কেউ চোখের জলে ভিজিয়ে তুলেছেন স্মৃতির পাতা, কেউ আবার একসঙ্গে গান গেয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। সেই মুহূর্তে সোনাপুরের পরিবেশ যেন এক মহাযজ্ঞে পরিণত হয়েছিল—যেখানে সঙ্গীত, ভালোবাসা আর অশ্রু মিলেমিশে তৈরি করেছিল ভিন্ন আবহ।
জুবিন গর্গ শুধু একজন শিল্পী ছিলেন না, তিনি ছিলেন অসমের সংস্কৃতির প্রতীক। তাঁর কণ্ঠ অসমের গানকে ভারতের মানচিত্রে নতুন মর্যাদা দিয়েছিল। তাঁর গান শুধু বিনোদন নয়, বরং প্রজন্মের পর প্রজন্মের আবেগ, প্রতিবাদ, ভালোবাসা আর আশা হয়ে বেঁচে আছে।
আজ সোনাপুরের সেই সমাধিতে দাঁড়িয়ে দেবজিৎ সাহার শ্রদ্ধা তাই নিছক আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং ছিল হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা ভালোবাসা। এক শিল্পীর প্রতি আরেক শিল্পীর প্রণাম।
এ যেন এক প্রতিশ্রুতি—যতদিন গান বাজবে, যতদিন সুর বেঁচে থাকবে, ততদিন জুবিন গর্গও বেঁচে থাকবেন মানুষের হৃদয়ে।


