গুয়াহাটি, ১৬ সেপ্টেম্বর: অসমের মুখ্যমন্ত্রীর চরম পদক্ষেপ (Himanta Biswa Sharma)। নুপুর বরাহ নামে এক সরকারি অফিসারকে দুর্নীতির অভিযোগে চরম শিক্ষা দিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। অভিযুক্তের নাম নুপুর বরাহ। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছেন যে, অসম সিভিল সার্ভিস (এসি এস) অফিসার নুপুর বরাহের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নুপুর সাধারণত যা আয় করেন তার সঙ্গে তার ব্যাক্তিগত সম্পত্তির অমিল থাকায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বরাহ কামরূপ জেলার গোরাইমাড়িতে সার্কেল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তদন্তে জানা গেছে যে, তিনি তার অফিসিয়াল আয়ের প্রায় ৪০০ গুণ সম্পদ জমা করেছেন। গুয়াহাটি এবং বরপেটায় তার বাসস্থানে সার্চ অপারেশনে ৯২.৫০ লক্ষ টাকার বেশি নগদ অর্থ এবং প্রায় ১.৫ কোটি টাকার গয়না উদ্ধার করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী শর্মা বক্সা জেলায় একটি কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে বলেন, “তিনি তার নিজস্ব আয়ের উৎসের তুলনায় ৪০০ গুণ সম্পদ জমা করেছেন। আমরা মনে করি যে, কেবলমাত্র সাসপেনশন বা চাকরি থেকে বরখাস্ত করলেই যথেষ্ট হবে না।
আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।” এই ঘোষণা রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের শূন্য সহনশীলতার প্রতীক। বরাহের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠার পর তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়েছে এবং তদন্ত চলছে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, বরাহর উপরে গত ছয় মাস ধরে নজরদারি করা হচ্ছিল। বিশেষ করে বরপেটায় পোস্টিংয়ের সময় তিনি একটি অবৈধ জমি হস্তান্তরের অনুমতি দিয়েছিলেন। এই বিতর্কের পর তাঁকে জেলা থেকে স্থানান্তর করা হয়।
সি এম’স স্পেশাল ভিজিলেন্স সেলের সিনিয়র সুপারিনটেন্ডেন্ট অফ পুলিশ রোজি কালিতা প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে নুপুরকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, “আমরা গুয়াহাটিতে তার ফ্ল্যাট এবং বরপেটায় একটি ভাড়া বাসস্থানে তল্লাশি চালিয়েছি, যেখানে ৯২.৫০ লক্ষ টাকার বেশি নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে। এটি আমাদের সেলের দ্বারা উদ্ধারকৃত সবচেয়ে বড় পরিমাণের নগদ অর্থ।”
গুয়াহাটিতে তিনটি ফ্ল্যাট বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে গয়না উদ্ধার করা হয়েছে। এই মামলায় জড়িত সন্দেহে আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী শর্মা জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “ জনগণের প্রতি আমার অনুরোধ যে, তারা সতর্ক থাকুক এবং যদি কোনো অফিসিয়াল ঘুষ চায়, তাহলে আমাদের জানান।” তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে, তদন্ত সম্পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে চলবে এবং ব্যবস্থার মধ্যে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে।
এই ঘটনা অসমের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় দুর্নীতির একটি বড় উদাহরণ। নুপুর বরাহের মতো একজন উচ্চপদস্থ অফিসারের জড়িত থাকা রাজ্যের সরকারি চাকরিব্যবস্থায় প্রশ্ন তোলে। অসম সিভিল সার্ভিসের অফিসাররা রাজ্যের উন্নয়ন এবং জনসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, কিন্তু দুর্নীতির এমন ঘটনা জনগণের আস্থা ক্ষয় করে।
মুখ্যমন্ত্রী শর্মার সরকার গত কয়েক বছরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালিয়ে আসছে। এর আগেও কয়েকজন অফিসারের বিরুদ্ধে এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যা রাজ্যের ভিজিলেন্স সিস্টেমকে শক্তিশালী করেছে।