মানিকের উদ্যোগে ত্রিপুরায় জল দেবে তিতাস

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা (Manik Saha) রাজ্যের জল সংকট কাটাতে নিয়েছেন এক নয়া উদ্যোগ। তিনি ঘোষণা করেছেন যে, রাজ্য সরকার অগরতলা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের (এএমসি) ৫১টি ওয়ার্ডে…

Manik Saha new initiative

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা (Manik Saha) রাজ্যের জল সংকট কাটাতে নিয়েছেন এক নয়া উদ্যোগ। তিনি ঘোষণা করেছেন যে, রাজ্য সরকার অগরতলা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের (এএমসি) ৫১টি ওয়ার্ডে পরিষ্কার পানীয় জল সরবরাহের জন্য বাংলাদেশের তিতাস নদী থেকে জল সংগ্রহের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে। তিতাস নদী, যা বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা থেকে উৎপত্তি হয়ে ৯৮ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে মেঘনা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

এই নদী ত্রিপুরার সীমান্তের কাছ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে । মুখ্যমন্ত্রী সাহা অগরতলায় বিবেকানন্দ টাউনশিপ প্রকল্পের উদ্বোধনের সময় বলেন আমি প্রস্তাব করেছি, তিতাস নদীর জল অগরতলার ৫১টি ওয়ার্ডে পানীয় জল হিসেবে সরবরাহ করা হোক। এই প্রস্তাবটি পরীক্ষা করা হচ্ছে, এবং সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোলে আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করব।”

   

এই উদ্যোগ অগরতলার দীর্ঘদিনের পানীয় জলের সংকট সমাধানে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হতে পারে। ত্রিপুরার ভূগর্ভস্থ জলে বেশি আয়রন থাকার কারণে পানীয় জলের গুণমান বরাবরই একটি সমস্যা। তিতাস নদীর জল এই সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান হিসেবে বিবেচিত হবে বলে মনে করছে সরকার।

মুখ্যমন্ত্রী সাহা বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার আরিফ মোহাম্মদের সঙ্গে বৈঠকে এই প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমি সহকারী হাইকমিশনারকে প্রস্তাব দিয়েছি যে, তিতাস নদীর জল অগরতলার জন্য ব্যবহার করতে দেওয়া হোক। যদি তারা সম্মত হন, আমরা কেন্দ্রের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা করব।”

তবে, এই প্রকল্পের পথে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, অগরতলা থেকে নির্গত অপরিশোধিত নর্দমার জল কালাপানিয়া এবং কাটাখাল, খালের মাধ্যমে তিতাস নদীতে মিশে বাংলাদেশের আখাউড়া অঞ্চলের মানুষের মধ্যে চর্মরোগ সৃষ্টি করছে।

এই সমস্যা সমাধানের জন্য মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, অগরতলায় আধুনিক নিকাশী ব্যবস্থা জোরদার করা হোক এবং নর্দমার জল পরিশোধনের পরই তা নদীতে ফেলা হোক। তিনি বলেন, “আমাদের দায়িত্ব হলো নিশ্চিত করা যে আমাদের কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।”

এই প্রকল্পটি ত্রিপুরার শহুরে উন্নয়ন কৌশলের একটি অংশ। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, অগরতলা সহ রাজ্যের ২০টি শহরাঞ্চলের জন্য জিআইএস-ভিত্তিক মাস্টার প্ল্যান তৈরির কাজ চলছে, যার মধ্যে অগরতলার প্ল্যান ৭০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে।

Advertisements

এছাড়া, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের (এডিবি) সহায়তায় মুখ্যমন্ত্রী নগর উন্নয়ন প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে ৫৩০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে আধুনিক সড়ক, নিকাশী ব্যবস্থা এবং আবাসন প্রকল্প।

মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, ত্রিপুরা আরবান ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (টিউডিএ) অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য আধুনিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করছে। বিবেকানন্দ টাউনশিপ প্রকল্পে ৪৮টি ভূমিকম্প-প্রতিরোধী ফ্ল্যাট নির্মিত হয়েছে, এবং ভগত সিং যুব হোস্টেলের কাছে ৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ২১৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণের কাজ চলছে, যা ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে সম্পন্ন হবে।

এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে অগরতলার বাসিন্দারা পরিষ্কার পানীয় জল পাবেন, এবং ভূগর্ভস্থ জলের উপর নির্ভরতা কমবে। তবে, এর জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সমঝোতা এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সমর্থন প্রয়োজন।

মঙ্গলের বিকেলেই অনুশীলনে রবিনহো, তুলে দেওয়া হবে জার্সি

পরিবেশগত দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা জোরদার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই উদ্যোগ সফল হলে অগরতলার পানীয় জলের সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান হবে এবং ত্রিপুরার উন্নয়নের পথে একটি মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে।