নীতির পাঠ দেন, কিন্তু হেলমেটের পাঠ ভুলে গেলেন বিজেপি সাংসদ মাল্লা!

BJP MP Kripanath Mallah sparks controversy after being spotted riding a bike without a helmet in Karimganj. Netizens question the double standards in law enforcement.

গুয়াহাটি, ৩১ অক্টোবর: সরকার যেখানে নাগরিক নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিনিয়ত আইন আরও কঠোর করছে, সেখানে সেই আইন ভঙ্গ করলেন এক জনপ্রতিনিধি নিজেই। করিমগঞ্জ (শ্রীভূমি) লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ কৃপানাথ মল্লা-র এক ভিডিও এখন ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায় — যেখানে দেখা যাচ্ছে, তিনি হেলমেট ছাড়াই মোটরবাইকে চেপে যাচ্ছেন!

Advertisements

ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসতেই নেটমাধ্যমে শুরু হয়েছে তীব্র সমালোচনা। একাধিক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেছেন — “যখন সাংসদরাই আইন মানেন না, তখন সাধারণ মানুষকে নিয়ম মেনে চলার বার্তা দেওয়া কি ভণ্ডামি নয়?” আবার কেউ লিখেছেন, “জনপ্রতিনিধিরা যদি আইন ভাঙেন, তবে সাধারণ নাগরিকদের শাস্তি দেওয়া অন্যায়।”

   

আইন অনুযায়ী, হেলমেট ছাড়া বাইক চালানো বা তাতে আরোহী হওয়া দণ্ডনীয় অপরাধ। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রকের নিয়মে স্পষ্ট বলা হয়েছে— হেলমেট না পরলে ₹১,০০০ জরিমানা ও লাইসেন্স স্থগিত করা যেতে পারে। অথচ আইন প্রণেতাদের একজনের কাছ থেকে এমন অবহেলা প্রশাসনের ভাবমূর্তিতেই প্রশ্ন তোলে।

ঘটনার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে আলোচনা। বিরোধীরা তোপ দেগে বলছে, “যে সরকার নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে এত কথা বলে, তাদেরই সাংসদ আইন ভাঙছেন — এটা সরকারের দ্বিচারিতা প্রকাশ করছে।”

তবে শাসকদলের তরফে কেউ এখনো এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেননি। করিমগঞ্জ প্রশাসনের পক্ষ থেকেও কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, “একজন সাংসদের উচিত উদাহরণ তৈরি করা, যাতে মানুষ তাঁকে দেখে আইন মেনে চলে। কিন্তু এখানে উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে।”

একজন প্রাক্তন ট্রাফিক অফিসার বলেন, “এই ধরনের আচরণ সমাজে ভুল বার্তা দেয়। সড়ক দুর্ঘটনায় মাথায় আঘাতজনিত মৃত্যুর প্রধান কারণ হেলমেট না পরা। তাই জনপ্রতিনিধিরা যদি নিজেদের নিরাপত্তা অবহেলা করেন, তাহলে আইন প্রয়োগের নৈতিক শক্তি দুর্বল হয়।”

Advertisements

এর আগেও রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে মন্ত্রী ও বিধায়কদের ট্রাফিক আইন ভঙ্গের ঘটনা সামনে এসেছে, কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠছে— আইন কি কেবল সাধারণ মানুষের জন্য?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, “এই ধরনের ঘটনা ভোটারদের মনে নেতাদের প্রতি আস্থা কমিয়ে দেয়। নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধের ক্ষেত্রে একজন জনপ্রতিনিধির ভূমিকা আরও বেশি হওয়া উচিত।”

অন্যদিকে, স্থানীয় যুবসমাজে বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো আলোড়ন পড়েছে। অনেকেই বলছেন, সরকারের ‘নিরাপদ সড়ক অভিযান’ যদি বাস্তবায়ন করতে হয়, তবে প্রথমে জননেতাদেরই তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

ঘটনাটি আপাতদৃষ্টিতে ছোট মনে হলেও, এটি প্রশ্ন তুলছে সরকারের নীতি ও বাস্তব প্রয়োগের মধ্যে ব্যবধান নিয়ে। আইন সবার জন্য সমান — কিন্তু সাংসদ কৃপানাথ মল্লার এই আচরণে যেন সেই সমতার ধারণাই আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে।