অসম সরকার (Himanta) গোলাঘাট জেলার রেঙ্গমা রিজার্ভ ফরেস্টে একটি বিশাল উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে, যা রাজ্যের সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ অভিযান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই অভিযানে প্রায় ১৫০০-এর বেশি পুলিশ, কমান্ডো এবং বন বিভাগের কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।
প্রথম পর্যায়ে প্রায় ২০০০ পরিবার, যাদের অধিকাংশই বাঙালি-উৎপত্তি মুসলিম সম্প্রদায়ের, উচ্ছেদের মুখোমুখি হবে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুই পর্যায়ে মোট ১৫০০০ বিঘা (প্রায় ৪৯০০ একর) বনভূমি অবৈধ দখল থেকে মুক্ত করা হবে। অভিযানের আগে বাসিন্দাদের সাত দিনের মধ্যে এলাকা ছাড়ার জন্য নোটিশ জারি করা হয়েছিল।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বাধীন সরকার এই অভিযানকে “জনসংখ্যাগত আগ্রাসন” এবং অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে একটি কঠোর পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছে। গোলাঘাটের উড়িয়ামঘাট এলাকায় অবস্থিত রেঙ্গমা রিজার্ভ ফরেস্টের প্রায় ৩০টি গ্রামে বিস্তৃত এই অভিযানের জন্য বন বিভাগ এলাকাটিকে নয়টি ব্লকে বিভক্ত করেছে।
কর্তৃপক্ষের দাবি, এই অঞ্চলে বাঙালি-উৎপত্তি মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশাপাশি নাগাল্যান্ড, পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহার থেকে আগত কিছু পরিবার বনভূমি দখল করে পানের বাগান এবং কৃষিকাজের জন্য ব্যবহার করছে।
অভিযানটি মঙ্গলবার ভোরে বিদ্যাপুর বাজার এলাকা থেকে শুরু হয়েছে, যেখানে বুলডোজার এবং এক্সকাভেটরের মতো ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “প্রায় ৮০% পরিবার, যাদের নোটিশ দেওয়া হয়েছিল, তারা ইতিমধ্যে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। আমরা শুধুমাত্র অবৈধ কাঠামো ভাঙছি।”
তবে, স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করেছেন, এই এলাকায় প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণ (PMAY-G), জল জীবন মিশনের অধীনে জল সংযোগ, সর্বশিক্ষা অভিযানের অধীনে স্কুল এবং প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিল। এছাড়াও মসজিদ, মাদ্রাসা এবং গির্জা ছিল, যা সরকারের অবৈধ দখলের দাবিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা গত ২৫ জুলাই উড়িয়ামঘাট পরিদর্শন করে বলেছিলেন, “৭০% দখলকারী ইতিমধ্যে স্বেচ্ছায় এলাকা ছেড়েছেন। আমরা বনভূমি এবং সরকারি জমি পুনরুদ্ধারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” তিনি আরও জানান, গত চার বছরে ১.২৯ লক্ষ বিঘা (প্রায় ৪২,৫০০ একর) জমি দখলমুক্ত করা হয়েছে, তবে এখনও প্রায় ২৯ লক্ষ বিঘা জমি দখলের অধীনে রয়েছে।
তবে, বিরোধী দলগুলি, বিশেষ করে অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (AIUDF), এই অভিযানকে বাঙালি-উৎপত্তি মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে লক্ষ্যবস্তু হিসেবে অভিযোগ করেছে। AIUDF-এর বিধায়ক আশরাফুল হুসেন বলেছেন, “বিজেপি সরকার মুসলিম সম্প্রদায়কে টার্গেট করছে। এই উচ্ছেদ মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশের বিরুদ্ধে।”
এই অভিযানের ফলে অনেক পরিবার বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিচ্ছে, যা আসাম-নাগাল্যান্ড সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। নাগাল্যান্ড সরকার তাদের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে সতর্কতা জারি করেছে, যাতে উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলি তাদের অঞ্চলে প্রবেশ করতে না পারে।
এদিকে, স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক বিস্বজিৎ ফুকন জানিয়েছেন, “শুধু বাঙালি মুসলিম নয়, ৪২টি মণিপুরী মুসলিম এবং ৯২টি নেপালি পরিবারকেও উচ্ছেদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে।” তবে, বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলির পুনর্বাসন নিয়ে কোনও স্পষ্ট পরিকল্পনা এখনও ঘোষণা করা হয়নি, যা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
লোকসভায় অপারেশন সিঁদুর-মহাদেব বক্তৃতায় মোদীর অমিত প্রশংসা
এই অভিযান সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এক্স-এ কেউ কেউ এটিকে অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে সমর্থন করলেও, অনেকে এটিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে সমালোচনা করেছেন। আগামী দিনে এই অভিযান রাজ্যের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির উপর কী প্রভাব ফেলবে, তা দেখার বিষয়।