গুয়াহাটি, ১৫ নভেম্বর: অসমের তিনসুকিয়া জেলায় এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় হিন্দু বাসিন্দারা দাবি করছেন, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মুসলিমরা তাদের জমি কেনার জন্য বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামের প্রস্তাব দিচ্ছেন। এতে অনেক হিন্দু পরিবার অর্থনৈতিক লোভে জমি বিক্রি করে দিচ্ছেন, ফলে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় মুসলিম বসতি গভীরে ঢুকে পড়ছে।
স্থানীয় সংগঠনগুলো এটিকে ‘ল্যান্ড জিহাদ’ বলে অভিহিত করে প্রতিবাদ জানাচ্ছে, যখন বিরোধীদের মতে এটি সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর চেষ্টা।টিনসুকিয়ার ডুমডুমা, কাকপথার এলাকায় এই ঘটনা সবচেয়ে বেশি। স্থানীয় বাসিন্দা রমেশ গোয়ালা জানান, “আমার পাশের বাড়ির হিন্দু পরিবারকে এক বিঘা জমির জন্য ১৫ লক্ষ টাকা অফার করা হয়েছে, যেখানে বাজারদর মাত্র ৮-৯ লক্ষ। তারা বিক্রি করে শহরে চলে গেছে। এখন ওই জমিতে নতুন মসজিদ আর বাড়ি উঠছে।”
আরেক বাসিন্দা প্রিয়া দেবী বলেন, “আমরা চাপে আছি। উচ্চ দাম দিয়ে জমি কিনে তারা আমাদের এলাকায় ঢুকছে। কয়েক বছরে গ্রামের চেহারা বদলে গেছে।”স্থানীয় সংগঠন যেমন বীর লাচিত সেনা, অল তাই আহোম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন এবং হিন্দু সুরক্ষা সেনা এই ঘটনাকে ‘জনসংখ্যাগত আগ্রাসন’ বলে দাবি করছে।
তাদের নেতা মিলন বুড়াগোহাঁই বলেন, “এটি পরিকল্পিত। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা উচ্চ দাম দিয়ে হিন্দু জমি কিনে উচ্চ অসমে ঢুকছে। এতে আদিবাসী এবং হিন্দু সংখ্যালঘু হয়ে পড়বে। আমরা ডকুমেন্ট চেক করে তাদের বাধা দিচ্ছি।” গত মাসে তিনসুকিয়ায় কয়েকটি মিয়া মুসলিম পরিবারকে গ্রাম ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে খবর।
৯ কোটি কৃষকের জন্য বড় আপডেট, পিএম-কিষান ২১তম কিস্তি মুক্তির তারিখ জানাল কেন্দ্র
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এই ধরনের অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, “আমরা ল্যান্ড জিহাদ রুখতে আইন আনছি। হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে জমি বিক্রিতে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি লাগবে।” সরকার ইতিমধ্যে টিনসুকিয়াসহ কয়েকটি জেলায় ধর্মীয় ভিত্তিতে জমি হস্তান্তরে কড়াকড়ি করেছে। ২০২৪-এর আইনে বলা হয়েছে, আদিবাসী বেল্টে নন-ট্রাইবালরা জমি কিনতে পারবে না। তিনসুকিয়ায় অনেক ব্লক এই নিয়মের আওতায়।কিন্তু বিরোধী দল কংগ্রেস এবং এআইইউডিএফ এটিকে সাম্প্রদায়িক বলে সমালোচনা করছে।
এআইইউডিএফ নেতা আমিনুল ইসলাম বলেন, “এটি মিথ্যা প্রচার। অসমে মুসলিমরা শতাব্দী ধরে বাস করছে। উচ্চ দামে জমি কেনা অপরাধ নয়। সরকার হিন্দু-মুসলিম বিভেদ সৃষ্টি করছে।” বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অসমে জনসংখ্যার পরিবর্তন হচ্ছে, কিন্তু তা শুধু অনুপ্রবেশ নয়—উচ্চ জন্মহার এবং অর্থনৈতিক কারণও রয়েছে। ২০১১ সেনসাসে তিনসুকিয়ায় মুসলিম জনসংখ্যা ৩৫% এর কাছাকাছি, যা বাড়ছে।
স্থানীয় প্রশাসন বলছে, তারা অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। তিনসুকিয়ার ডিসি বলেন, “জমি কেনাবেচা আইনসিদ্ধ। কিন্তু অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।” গত বছর তিনসুকিয়ায় কয়েকশো বিঘা সরকারি জমি উদ্ধার করা হয়েছে, যাতে অনেক মিয়া পরিবার উচ্ছেদ হয়েছে।


