এ যেন কলি যুগের কুন্তি। মহাভারতের কান্তি মা হয়েছিলেন কুমারী অবস্থায়। সন্তানকে নদীতে ভাসিয়ে দেন। আর আধুনিক ভারতে সন্তানকে বিক্রি করলেন (Mother Sells Newborn) কুমারী মা। ২২ বছরের তরুণীর কীর্তিতে জোর শোরগোল।
সমাজে আবারও ধরা পড়ল নির্মম বাস্তবের রূপরেখা। কুমারী অবস্থায় মা হয়ে মাত্র ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে নিজের সদ্যোজাত সন্তানকে বিক্রি করে দিলেন ২২ বছরের এক তরুণী। ঘটনাটি ঘটেছে অসমের শিবসাগর জেলার সিভিল হাসপাতালে। এই ঘটনার পর গোটা রাজ্যজুড়ে ছড়িয়েছে চাঞ্চল্য, প্রশ্ন উঠছে—এ কেমন মাতৃত্ব?
হাসপাতালেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, ২২ বছরের ওই তরুণী সম্প্রতি সন্তান প্রসব করেন শিবসাগর সিভিল হাসপাতালে। অবিবাহিত অবস্থায় মা হওয়ার ফলে সমাজ এবং পারিবারিক চাপ থেকেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন বলে অনুমান। ওই তরুণী ও তাঁর মা মিলে শিশুটিকে বিক্রি করার পরিকল্পনা করেন।
ঘটনার খবর পেয়ে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির (CWC) সদস্যরা হাসপাতালে ছুটে যান। তাঁরা মা ও দিদিকে বোঝানোর চেষ্টা করেন যেন নবজাতককে বিক্রি না করা হয়। কিন্তু সমস্ত অনুরোধ অগ্রাহ্য করে তাঁরা চুক্তি সম্পন্ন করেন।
শিশুর উদ্ধার ও গ্রেফতার
অবশেষে পুলিশি অভিযানে ওই শিশু উদ্ধার হয় শারাইদেও জেলার সাপেখাটি এলাকার এক নিঃসন্তান দম্পতির কাছ থেকে। ওই দম্পতি জানিয়েছেন, তাঁরা ৫০ হাজার টাকা দিয়ে শিশুটিকে কিনেছেন।
এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তদন্তে আরও উঠে এসেছে, শিবসাগর জেলার কিছু আশা কর্মী এই চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে আগেও শিশু বিক্রির অভিযোগ উঠেছিল বলে পুলিশ জানিয়েছে।
আইনি পদক্ষেপ
শিবসাগরের জেলা শিশু সুরক্ষা ইউনিট (DCPU) পুরো ঘটনার বিরুদ্ধে শিবসাগর থানায় FIR দায়ের করেছে। পুলিশের এক আধিকারিক বলেন, “এই ঘটনার পেছনে সুসংগঠিত শিশু পাচার চক্র কাজ করছে বলে আমরা সন্দেহ করছি। আরও তদন্ত চলছে, আরও কেউ জড়িত কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
সমাজের মুখে আঙুল
এই ঘটনা সমাজের সামনে এক কঠিন প্রশ্ন তুলে ধরেছে—অর্থনৈতিক সংকট, সামাজিক চাপ ও অবাঞ্ছিত মাতৃত্বের পরিণতি কি এতটাই নিষ্ঠুর হতে পারে? শিশুটির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে প্রশাসন ও শিশু কল্যাণ দপ্তরের মধ্যে।
প্রশাসনের সক্রিয়তায় এক শিশু পাচার রোধ করা গেলেও, এর পেছনে থাকা সমাজের অসংবেদনশীলতা, অবহেলা এবং অপরাধের জাল ভেদ করে সত্যকে প্রকাশ করা এখন সময়ের দাবি। আধুনিক ভারতে কুমারী মা কুন্তির মতো সন্তানকে বিসর্জন দেন না, তবে ৫০ হাজার টাকায় তাকে ‘বিকিয়ে’ দেন—এই বাস্তবই আমাদের ভাবতে বাধ্য করছে।