৭২ ঘন্টায় গেরুয়া রাজ্যে গ্রেফতার অন্তত ৩০ রোহিঙ্গা

assam-rohingya-arrests-72-hours

গুয়াহাটি, ২১ অক্টোবর ২০২৫: অসমের সীমান্তবর্তী এলাকায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের নীরব যুদ্ধ আবারও তীব্রতর হয়েছে। গত ৭২ ঘণ্টায় কাছাড় এবং বঙ্গাইগাঁওয়ে অন্তত ৩০ জন অবৈধ রোহিঙ্গা গ্রেফতার হয়েছে, যার মধ্যে মহিলা এবং শিশুরাও রয়েছে। এই ঘটনাগুলো শুধু সংখ্যার খেলা নয়, এটি একটি গভীর চিন্তার বিষয় যা বিশেষজ্ঞরা ‘জনসংখ্যা আক্রমণ’ বলে অভিহিত করছেন।

Advertisements

এটি কোনো বন্দুকের যুদ্ধ নয়, বরং পরিসংখ্যানের যুদ্ধ, যেখানে শত্রু আক্রমণ করে না, শুধু বৃদ্ধি করে। এর ফলে স্থিতিশীলতা, অর্থনীতি এবং পরিচয় সবকিছু বিপন্ন হয়ে ওঠে। অসমের গেরুয়া সরকার এই ‘নীরব যুদ্ধ’-এর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, এই লড়াই কতদিন চলবে?গত শনিবার কাছাড় জেলার কালাইন বাজার এলাকায় পুলিশ ১৮ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করে।

তৃণমূলের অন্দরে সমীকরণ বদলের ইঙ্গিত? পার্থের ‘গৃহে’ শোভনের উত্থান ঘিরে জল্পনা তুঙ্গে

এদের মধ্যে ছিলেন নারী এবং শিশু, যারা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। স্থানীয় সূত্র জানায়, তারা স্থানীয় ডালালদের সাহায্যে এই যাত্রায় বেরিয়েছিল। কাছাড় পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, “এরা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে ভারতে এসেছিল, কিন্তু এখন দেশে ফেরার পথ খুঁজছে।

আমরা তাদের কাছে থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, এবং আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” এই গ্রেফতারের ঘটনা কাছাড়ের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের অংশ। গত কয়েক মাসে এই জেলায় ২৫০-এরও বেশি অবৈধ অভিবাসী, বিশেষ করে বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গা, ধরা পড়েছে। কাছাড়ের ৩২ কিলোমিটার লম্বা সীমান্ত এই অভিবাসনের প্রধান দ্বারপথ হয়ে উঠেছে।

Advertisements

এর পরপরই, ১৬ অক্টোবর রাতে বঙ্গাইগাঁও রেলস্টেশনে আরও একটি ঘটনা ঘটে। সরকারি রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) একটি আগরতলা-বাঙ্গানো ট্রেন থেকে ১১ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করে। এদের নাম ইসমাইল আজাদ, আব্দুল, মোহাম্মদ নুর, আশিলা বেগম, মোহাম্মদ আনিস, নুর আলম, নুর কালিমা, সাফা, রিমা এবং নুর সাহিদ। এর মধ্যে মহিলা এবং শিশুরাও ছিলেন।

পুলিশ জানায়, তারা হায়দ্রাবাদ থেকে ট্রেনে করে অসমে আসছিল এবং অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার পরিকল্পনা করছিল। একজন গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তি বলেন, “আমরা ২০১৩ সাল থেকে হায়দ্রাবাদে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলাম। মিয়ানমারের নির্যাতন থেকে পালিয়ে এসেছি, কিন্তু এখন ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছি।” এই গ্রেফতারগুলো ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ঘটেছে, যা অসমের অনুপ্রবেশ-বিরোধী অভিযানের গতি তুলে ধরে।

এই ৩০ গ্রেফতার শুধু সংখ্যা নয়, এটি অসমের ভবিষ্যতের একটি সতর্কবার্তা। গত কয়েক মাসে রাজ্যে ১৩০-এরও বেশি বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গা ধরা পড়েছে, যা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সঙ্গে যুক্ত। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এদের মধ্যে অনেকেই শিশু এবং নারী, যাদের নির্যাতনের শিকার। কিন্তু স্থানীয়রা মনে করেন, এই ‘জনসংখ্যা আক্রমণ’ অসমের আসামিয়া পরিচয়কে মুছে দেবে। সরকার এখন জিআরপি এবং বিজিবির সমন্বয়ে আরও অভিযান চালাবে।