গুয়াহাটি: অসম–বাংলাদেশ সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে রাজ্য পুলিশের (Assam police) তৎপরতা আরও একবার নজর কাড়ল। সীমান্ত এলাকায় নিয়মিত নজরদারি এবং তথ্যভিত্তিক অভিযানের অংশ হিসেবে গতকাল দুপুরে অসম পুলিশ মোট ছয় জন বাংলাদেশি নাগরিক এবং দশ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে। প্রাথমিক যাচাই–বাছাই ও আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর তাঁদের সীমান্তের নির্ধারিত ৩৯ নম্বর গেট দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে ফেরত পাঠানো হয়।
রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সীমান্তবর্তী এলাকায় সন্দেহজনক গতিবিধি লক্ষ্য করার পর স্থানীয় থানার উদ্যোগে একটি বিশেষ দল দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। তাদের দাবি, অভিযানে কোনও ধরনের প্রতিরোধের ঘটনা ঘটেনি এবং আটক হওয়া ব্যক্তিরা শান্তিপূর্ণভাবে পুলিশের নির্দেশ অনুসরণ করেছেন। তাঁদের পরিচয়, উদ্দেশ্য এবং সীমান্ত অতিক্রমের প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদের পরই ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মা এই ঘটনাকে রাজ্য পুলিশের “অপারেশনাল সাফল্য” হিসেবে বর্ণনা করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে তিনি লেখেন— “আরেকটি মসৃণ অপারেশন! ছয় বাংলাদেশি এবং দশ রোহিঙ্গাকে ৩৯ নম্বর গেট দিয়ে নিরাপদে ফেরত পাঠানো হয়েছে। পুরো অভিযান ছিল শান্তিপূর্ণ, নিখুঁত এবং সুশৃঙ্খল। সীমান্ত সুরক্ষিত রয়েছে এবং কোনো অস্বাভাবিকতা শনাক্ত হয়নি।”
সীমান্ত নিরাপত্তায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে
অসমের প্রশাসন জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন সীমান্তে অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত উদ্বেগ বেড়েছে। বিশেষত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর গতিবিধি এবং বাংলাদেশি নাগরিকদের অবৈধভাবে প্রবেশের ঘটনা নিয়ে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য তদন্ত সংস্থাগুলোর নজরদারি জোরদার হয়েছে।
অসমের পুলিশ কর্মকর্তা জানান, সীমান্তবর্তী এলাকায় thermal imaging device, night-vision patrol unit এবং local intelligence network ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। সীমান্তের “গেট নম্বর ৩৯” এই ধরনের অপারেশনে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এখানকার ভূপ্রকৃতি অনুপ্রবেশকারীদের জন্য তুলনামূলক সহজ পথ হতে পারে।
আইনি প্রক্রিয়া ও ফেরত পাঠানোর প্রোটোকল
আটক হওয়া বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে কোনও অপরাধমূলক অভিযোগ পাওয়া যায়নি বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তাদের ভৌগোলিক অবস্থান, উদ্দেশ্য এবং কিভাবে সীমান্ত অতিক্রম করেছেন—এসব বিষয়ে তদন্তের পর প্রোটোকল অনুযায়ী তাঁদের ফেরত পাঠানো হয়।
রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নির্দেশিকা অনুসরণ করেই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তাঁদের মানবিক দিক বিবেচনা করে নিরাপত্তা ঘেরাটোপের মধ্যে সীমান্তে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বাংলাদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং দু’দেশের স্থানীয় সীমান্ত কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও প্রশাসনিক গুরুত্ব
অসম সরকারের দাবি, অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে রাজ্য পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান সীমান্ত নিরাপত্তাকে আরও দৃঢ় করছে। মুখ্যমন্ত্রী শর্মা প্রায়ই উল্লেখ করেন যে, অসমকে অবৈধ অনুপ্রবেশমুক্ত রাখা তাঁর সরকারের অগ্রাধিকার।
বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের অভিযান স্থানীয় জনসংখ্যার উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘদিনের সীমান্ত–সংশ্লিষ্ট সমস্যার ওপর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের বার্তা দেয়। বিশেষত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়টি গোটা উত্তর–পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় এই ধরনের তৎপরতা তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
সীমান্তবর্তী এলাকায় পুলিশের চ্যালেঞ্জ
অসম পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে যে, নদীঘেরা ও ঘন জঙ্গলের মতো অঞ্চলগুলিতে নিয়মিত টহল দেওয়া চ্যালেঞ্জস্বরূপ। পরিবেশগত বাধা, রাত্রিকালীন অনুপ্রবেশ এবং স্থানীয় দুষ্কৃতীদের সহায়তায় সীমান্ত অতিক্রমের চেষ্টা—উভয়ই রোধ করতে পুলিশের আধুনিক নিরাপত্তা সরঞ্জাম ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ বিশেষ ভূমিকা রাখে।
পুলিশের মতে, স্থানীয় জনতার সহযোগিতাও এই ধরনের অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ। সন্দেহজনক নতুন মুখ বা অস্বাভাবিক চলাফেরা সম্পর্কে তথ্য দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।
আগামী দিনের জন্য পরিকল্পনা
অসম সরকার জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী এলাকায় আরও নজরদারি, বিশেষ টহল এবং প্রযুক্তিনির্ভর মনিটরিং বাড়ানো হবে। রোহিঙ্গা ও অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের বিষয়ে গোটা উত্তর–পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির সঙ্গে সমন্বিত কৌশলও চালু করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে, ছয় বাংলাদেশি ও দশ রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানোর এই ঘটনা সীমান্ত নিরাপত্তার ক্ষেত্রে রাজ্যের একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। প্রশাসনের মতে, এমন ধারাবাহিক এবং সুশৃঙ্খল অভিযানের মাধ্যমেই সীমান্ত সুরক্ষা আরও শক্তপোক্ত হবে।


