Monday, December 8, 2025
HomeBharatNorth East Indiaঅসমে বড় অভিযানে আটক কোচবিহার থেকে আসা ৮০ বাংলাদেশি

অসমে বড় অভিযানে আটক কোচবিহার থেকে আসা ৮০ বাংলাদেশি

- Advertisement -

গুয়াহাটি: আবারও সীমান্ত পেরিয়ে অবৈধ কর্মসংস্থানের জাল ভেঙে দিল অসম পুলিশ। শুক্রবার ভোরে তেজপুর পথে চলা দুটি যাত্রীবাহী বাস থামিয়ে একসঙ্গে ৮০ জনেরও বেশি বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করেছে পুলিশ। কাগজপত্র জিজ্ঞাসা করতে গিয়ে দেখা যায় কেউই বৈধ নথিপত্র, পাসপোর্ট বা ভিসা কিছুই দেখাতে পারেননি। তাদের সন্দেহজনক এই যাত্রার আয়োজন করেছিলেন কোচবিহারের জয়নাল মিঞা নামে এক ব্যক্তি।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কোচবিহারের বিভিন্ন এলাকা থেকে শ্রমিকের কাজের প্রলোভন দেখিয়ে এই বাংলাদেশি নাগরিকদের তেজপুরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। রাতের অন্ধকারে দুটি বাস একটিতে ৪২ জন, অন্যটিতে ৩৯ জন কুচবিহার ছাড়ে। গন্তব্য ছিল অসমের তেজপুর, যেখানে নাকি “নির্মাণক্ষেত্রে বড় চাকরি” পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল।

   

নিয়মরক্ষার ম্যাচে মোড় ঘুরিয়ে দিতে তৈরি এই তিন ভারতীয় ফুটবলার!

অসম পুলিশের স্পেশাল অপারেশন ইউনিট আগেই তথ্য পায় যে উত্তরবঙ্গের দিক থেকে বহু অবৈধ বিদেশি শ্রমিক রাজ্যে ঢোকানো হচ্ছে। সেই সূত্র ধরে তেজপুর-বিশ্বনাথ চরালি রুটে নজরদারি বাড়ানো হয়। ভোর সাড়ে চারটা নাগাদ সন্দেহজনক গতিবিধি দেখে দুই বাসকে থামানো হয়।

প্রাথমিক জেরায় বাসযাত্রীদের অনেকেই নিজেদের ভোলা, কুমিল্লা ও বরিশালের বাসিন্দা বলে দাবি করেন। কিন্তু তাদের কাছে ছিল না কোনো পরিচয়পত্র, সীমান্ত পারাপারের কাগজ বা ভারতীয় আইনে বৈধ থাকার কোনো অনুমতি।

বাসচালকদের মধ্যে একজন জানান, জয়নাল মিঞা নামের এক ব্যক্তি তাদের গাড়ি ভাড়া করে শ্রমিকদের নিয়ে যেতে বলেছিলেন। পুলিশ জানতে পারে, সীমান্তের ওপারে ও ভারতে দীর্ঘদিন ধরেই শ্রমিক পাচারের সঙ্গে জড়িত জয়নাল। প্রলুব্ধ করে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতে এনে কম মজুরিতে কাজ করানোই তার মূল কাজ।

অসম পুলিশের একজন আধিকারিক বলেন, “এত বড় সংখ্যায় বিদেশি নাগরিককে কোনো নথি ছাড়া আনা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এদের মধ্যে কেউ মানবপাচার চক্রের শিকার, আবার কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সীমান্ত লঙ্ঘন করেছে এটাও সম্ভব। তদন্ত চলছে।’” আটক হওয়া বাংলাদেশিদের আপাতত তেজপুর থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে Foreigners Act এবং বেআইনি অনুপ্রবেশের ধারায় মামলা দায়ের হতে পারে। আদালতের নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত তারা হেফাজতেই থাকবেন।

এই ঘটনার পর সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ-ও সতর্কতা বাড়িয়েছে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন সীমান্ত চেকপোস্টে অতিরিক্ত নজরদারি চালানো হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের বক্তব্য, বহুদিন ধরেই শ্রমিকের নামে বাংলাদেশি নাগরিকদের ভারতে ঢোকানো হচ্ছে। এর ফলে নিরাপত্তা ছাড়াও স্থানীয় শ্রমবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, শ্রমিক পাচার এখন সীমান্ত অঞ্চলে একটি বড় সমস্যা। বাংলাদেশি নাগরিকদের খুব কম টাকা দিয়ে বিপজ্জনক পথে আনানো হয়, অথচ দালালদের আয় কয়েকগুণ। ভারতে এসে এদের অধিকাংশই নির্মাণ সাইট, ছোট কারখানা বা ইটভাটায় কাজ করেন।

বাসে আটক হওয়া এক শ্রমিক বলেন, “একজন দালাল বলেছিল কাজ পাবে, টাকা ভালো দেবে। আমরা জানতাম না এটা আইনভঙ্গ।” পুলিশ অবশ্য বলছে, আইনের অজ্ঞতা কাউকে রেহাই দেয় না। পাশাপাশি, এত বড় সংখ্যার অনুপ্রবেশ ঘিরে রাজনৈতিক মহলেও চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। বিরোধীরা দাবি তুলেছে সীমান্ত নিরাপত্তা আরও বাড়ানো জরুরি।

এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এই শ্রমিকদের ভারতে ঢোকানোর আসল উদ্দেশ্য কী, এবং এই চক্রের মাথারা কারা? জয়নাল মিঞার সন্ধান শুরু করেছে পুলিশ। পুরো ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তে নেমেছে অসম পুলিশ ও কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলি।

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular