অসমে দ্রুত পরিবর্তিত জনমিতি নিয়ে ফের রাজনৈতিক উত্তাপ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিস্ব শর্মা সম্প্রতি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তব্যের উল্লেখ করে জানান, দেশের মুসলিম জনসংখ্যা প্রাকৃতিকভাবে যেমন বেড়েছে, তেমনি অবৈধ অনুপ্রবেশও এই বৃদ্ধির বড় কারণ। তিনি বলেন, কেন্দ্র যে নতুন মিশন চালু করতে চাইছে— “ডিটেক্ট, ডিলিট অ্যান্ড ডিপোর্ট” (Detect, Delete & Deport)—তা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে তালিকা থেকে বাদ দেওয়া এবং দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।
অসমে মুসলিম জনসংখ্যা ৩৯.৫ শতাংশে
মুখ্যমন্ত্রী জানান, অসম এই জনসংখ্যাগত পরিবর্তনের সরাসরি ভুক্তভোগী। ২০২১ সালের জনগণনা অনুযায়ী রাজ্যে মুসলিম জনসংখ্যা ৩৮ শতাংশ ছাড়িয়েছে এবং বর্তমানে তা বেড়ে ৩৯.৫ শতাংশে পৌঁছেছে। বিশেষ করে মাজুলি জেলায় মুসলিম জনসংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে, যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “আসামি মুসলমানদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি স্বাভাবিক। কিন্তু বাইরের দেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের কারণে এই বৃদ্ধির হার অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। এটাই মূল উদ্বেগ।”
২০১১ সালের পূর্বাভাস ও হিন্দু জনসংখ্যা হ্রাস
হিমন্ত শর্মা ২০১১ সালের জনগণনার তথ্য তুলে ধরে বলেন, প্রক্ষেপণ অনুযায়ী রাজ্যে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৪০ শতাংশে পৌঁছেছে, খ্রিস্টান জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬-৭ শতাংশে এবং হিন্দু জনসংখ্যা নেমে গেছে ৪০ শতাংশের নিচে। তাঁর দাবি, “এটা উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে এ বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন, আর এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও একই ইস্যু তুলেছেন। আমি খুব শীঘ্রই কেন্দ্রের সঙ্গে এই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।”
অমিত শাহের বক্তব্য
দিল্লিতে ‘নারেন্দ্র মোহন স্মৃতি বক্তৃতা’ অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, “অনুপ্রবেশ, জনসংখ্যা পরিবর্তন ও গণতন্ত্র—এই তিনটি বিষয় একে অপরের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পর্কিত। যতদিন না প্রতিটি নাগরিক এই ইস্যুকে গুরুত্ব দেয়, ততদিন আমাদের দেশ, সংস্কৃতি, ভাষা ও স্বাধীনতা সুরক্ষিত থাকবে না।”
তিনি ঐতিহাসিক পরিসংখ্যানও তুলে ধরেন—
১৯৫১ সালে হিন্দু জনসংখ্যা ছিল ৮৪% এবং মুসলিম ৯.৮%।
১৯৭১ সালে হিন্দু কমে দাঁড়ায় ৮২%, মুসলিম বেড়ে হয় ১১%।
১৯৯১ সালে মুসলিম জনসংখ্যা হয় ১২.১২%।
২০০১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪.২%।
শাহর মতে, এই ধারাবাহিক বৃদ্ধির মূল কারণ অবৈধ অনুপ্রবেশ, যা ভারতের জনমিতি ও সাংস্কৃতিক ভারসাম্যে বড় প্রভাব ফেলছে।
রাজনৈতিক প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, অসমের জনসংখ্যাগত পরিবর্তন আগামী দিনে রাজনৈতিক সমীকরণে বড় ভূমিকা নিতে পারে। একদিকে রাজ্য সরকার অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে, অন্যদিকে বিরোধীরা একে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ইস্যু বলে আখ্যা দিচ্ছে।
অসমের মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যের পর এই স্পষ্ট যে, অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং জনসংখ্যা পরিবর্তনকে কেন্দ্র করে রাজনীতিতে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। “ডিটেক্ট, ডিলিট অ্যান্ড ডিপোর্ট” মিশন বাস্তবায়িত হলে এর প্রভাব শুধু অসম নয়, উত্তর-পূর্ব ভারতের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও গভীর ছাপ ফেলবে।