গুয়াহাটি ২ ডিসেম্বর: অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা আজ ফের (Himanta Biswa Sarma)একবার সাফ জানিয়ে দিলেন, “বনভূমির উপর অবৈধ দখলদারি উচ্ছেদ অভিযান কোনোমতেই থামবে না। প্রতি ইঞ্চি বনভূমি মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এই লড়াই চলবে। জিরো কম্প্রোমাইজ, জিরো রোলব্যাক।”
গতকাল রাতে সোনিতপুর জেলার বালিপাড়ায় এক জনসভায় তিনি এই কথা বলেন এবং স্পষ্ট করে দেন, “যারা দশকের পর দশক ধরে বনের জমি দখল করে বসে আছে, তাদের আর কোনো ছাড় দেওয়া হবে না—জাতি-ধর্ম-ভাষা নির্বিশেষে।”
১৯ থেকে এবার ৩৬ টি দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি ট্রাম্পের
২০২১ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে হিমন্ত সরকার এখনো পর্যন্ত প্রায় ৯৬ হাজার বিঘা বনভূমি উদ্ধার করেছে বলে দাবি করেছে। গত তিন মাসে গোয়ালপাড়া, কোকরাঝাড়, দরং, সোনিতপুর, গোলাঘাট, কার্বি আংলং—একের পর এক জেলায় বুলডোজার চালিয়ে প্রায় ১২ হাজারের বেশি অবৈধ ঘরবাড়ি-দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে।
সরকারি হিসেবে, এই জমিতে বাস করা প্রায় ৪৫ হাজার পরিবারের মধ্যে বেশিরভাগই ১৯৭১ সালের পর বাংলাদেশ থেকে আগত অভিবাসী এবং তাদের বংশধর। কিন্তু এর মধ্যে আদিবাসী, চা-জাতি, নেপালি-ভাষী এবং স্থানীয় অসমীয়া পরিবারও রয়েছে, যারা দাবি করছে, তাদের পূর্বপুরুষরা ব্রিটিশ আমল থেকেই এই জমিতে বসবাস করছে।
মুখ্যমন্ত্রী আজ বলেন, “আমরা কাউকে বাড়িঘর থেকে বের করে দিচ্ছি না। আমরা বনের গাছ ফিরিয়ে আনছি। যারা বনের জমি দখল করেছে, তারা নিজেরাই জেনেশুনে অপরাধ করেছে।” তিনি আরও জানান, উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর জন্য সরকার দু’একর করে চাষের জমি দেওয়ার প্রকল্প চালু করেছে, তবে সেই জমি বনের বাইরে হবে এবং শুধুমাত্র যারা ‘ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রমাণ’ দিতে পারবে, তাদেরই দেওয়া হবে। এই কথায় বিরোধীদের তীব্র প্রতিক্রিয়া উঠেছে।
কংগ্রেস নেতা দেবব্রত সাইকিয়া বলেছেন, “এটা একটা সাজানো খেলা। বনের নামে আসলে একটা সম্প্রদায়কে টার্গেট করা হচ্ছে।”গত সেপ্টেম্বরে দরং জেলার সিপাঝারে উচ্ছেদ অভিযানের সময় পুলিশের গুলিতে দুজন নিহত হওয়ার পর থেকে এই অভিযান নিয়ে রাজ্যজুড়ে বিতর্ক তীব্র হয়েছে। আজও বালিপাড়ার সভায় কয়েকশো মানুষ কালো পতাকা দেখিয়ে বিক্ষোভ দেখান। স্থানীয় বিধায়ক পদ্ম হাজং বলেন, “আমাদের চা-জাতির মানুষরা ব্রিটিশরা এনে বসিয়েছিল।
আমাদের কাগজ নেই ঠিকই, কিন্তু আমরা এই মাটির সন্তান। আমাদের বাড়ি ভাঙলে আমরা কোথায় যাব?” উত্তরে হিমন্ত বলেন, “চা-বাগানের জমি আলাদা। বনের জমি আলাদা। যারা চা-বাগানের ভিতরে আছে, তাদের কিছু বলা হচ্ছে না। কিন্তু যারা বন কেটে বাড়ি বানিয়েছে, তারা আইনের ঊর্ধ্বে নয়।” পরিবেশবিদদের একাংশ এই অভিযানকে সাধুবাদ জানিয়েছে।
অসমের বিখ্যাত বন্যপ্রাণী গবেষক পূর্ণিমা দেবী বর্মন বলেন, “কাজিরাঙা, মানস, পবিতরা—এই সব জাতীয় উদ্যানের চারপাশে হাজার হাজার বিঘা বনভূমি দখল হয়ে গিয়েছিল। গন্ডার, হাতি, বাঘের করিডর বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। এই উচ্ছেদ না হলে অসমের বন্যপ্রাণী বাঁচানো অসম্ভব ছিল।” তবে তিনি এও বলেন, উচ্ছেদের সঙ্গে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা আরও মানবিক হওয়া উচিত।
আজকের সভায় মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, আগামী ছ’মাসের মধ্যে আরও ৫০ হাজার বিঘা বনভূমি উদ্ধার করা হবে। তিনি বন বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন, উচ্ছেদের পর সঙ্গে সঙ্গে সেই জমিতে বৃক্ষরোপণ শুরু করতে হবে এবং স্যাটেলাইট ইমেজের সাহায্যে মনিটরিং করতে হবে যাতে কেউ আর দখল করতে না পারে। একইসঙ্গে তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন, “যারা উচ্ছেদের নামে রাজনীতি করবে, তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
