অসম সরকার (Assam Government) রাজ্যের প্রায় ৭০ লক্ষ রেশন কার্ডধারীদের জন্য একটি ভর্তুকিযুক্ত অত্যাবশ্যকীয় পণ্য প্রকল্প চালু করতে চলেছে। এই ঘোষণা করেছেন খাদ্য, সরবরাহ ও ভোক্তা বিষয়ক মন্ত্রী কৌশিক রায়, শনিবার কোকরাঝাড়ের বোদোফা সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সে আয়োজিত একটি জেলা-স্তরের সচেতনতা কর্মসূচিতে।
এই উদ্যোগ, যা ১ অক্টোবর থেকে শুরু হবে, রেশন কার্ডধারীদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য অত্যন্ত ভর্তুকিযুক্ত মূল্যে প্রদানের লক্ষ্য রাখে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে অসমের প্রায় ২.৪৫ কোটি মানুষ উপকৃত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।মন্ত্রী কৌশিক রায় জানিয়েছেন, মসুর ডাল প্রতি কেজি ৬৯ টাকা, চিনি প্রতি কেজি ৩৮ টাকা, লবণ প্রতি কেজি ১০ টাকা।
এই প্রকল্পটি প্রথমে ১ অক্টোবর থেকে রাজ্যের ১০টি জেলায় শুরু হবে, এবং পরবর্তীতে ১ নভেম্বর থেকে আরও ২৫টি জেলায় সম্প্রসারিত হবে। মন্ত্রী রায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ড. হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সরাসরি নির্দেশনায় এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এটি দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে পুষ্টিকর খাবারের অ্যাক্সেস নিশ্চিত করবে।” এই উদ্যোগ অসমের গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের পরিবারগুলোর খাদ্য নিরাপত্তা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
প্রকল্পের বিস্তারিত ও বাস্তবায়ন
এই প্রকল্পটি জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইন (এনএফএসএ), ২০১৩-এর আওতায় পরিচালিত হবে, যার মাধ্যমে অসমের রেশন কার্ডধারীরা ভর্তুকিযুক্ত মূল্যে খাদ্যপণ্য ক্রয় করতে পারবেন। খাদ্য, সরবরাহ ও ভোক্তা বিষয়ক বিভাগ এই উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছে এবং স্থানীয় শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে প্রকল্পটির স্বচ্ছতা ও দক্ষতা নিশ্চিত করার উপর জোর দিয়েছে।
কোকরাঝাড়ের সচেতনতা সভায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন, যাদের মধ্যে ছিলেন বিধায়ক লরেন্স ইসলারি, জেলা কমিশনার মাসান্দা এম. পার্টিন, খাদ্য ও সরবরাহ বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মদন তালুকদার এবং বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র শর্মা।সভায় ফেয়ার প্রাইস শপ (এফপিএস) মালিক এবং গাঁও পঞ্চায়েত সমবায় সমিতির সদস্যরাও অংশ নেন।
আলোচনায় মূলত স্থানীয় পর্যায়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন, সরবরাহ শৃঙ্খল সমন্বয় এবং সম্প্রদায়-স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়গুলো উঠে আসে। মন্ত্রী রায় জানান, “এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নের জন্য ফেয়ার প্রাইস শপগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে প্রতিটি উপকারভোগী সঠিক সময়ে এবং সঠিক মূল্যে পণ্য পান।”
খাদ্য নিরাপত্তায় নতুন মাত্রা
এই প্রকল্প অসমের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে। বর্তমানে অসমে প্রায় ৭০ লক্ষ রেশন কার্ডধারী রয়েছেন, যারা জাতীয় খাদ্য নিরাপত্তা আইনের আওতায় বিনামূল্যে চাল এবং অন্যান্য সুবিধা পান। এই নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে মসুর ডাল, চিনি এবং লবণের মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্য সাশ্রয়ী মূল্যে সরবরাহ করা হবে, যা পরিবারগুলোর পুষ্টির চাহিদা পূরণে সহায়ক হবে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, রেশন কার্ডধারীরা প্রধানমন্ত্রী উজ্জ্বলা যোজনা, আয়ুষ্মান ভারত এবং আয়ুষ্মান অসমের মতো স্বাস্থ্য ও জ্বালানি সুবিধাও পাবেন।
প্রকল্পের পরিধি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
প্রথম পর্যায়ে ১০টি জেলায় শুরু হলেও, নভেম্বর থেকে এই প্রকল্প ২৫টি অতিরিক্ত জেলায় সম্প্রসারিত হবে, যার ফলে রাজ্যের প্রায় সব জেলাই এর আওতায় আসবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে অসম সরকার দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টি নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মন্ত্রী রায় বলেন, “এই প্রকল্প কেবল খাদ্য সরবরাহের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এটি আমাদের জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার একটি পদক্ষেপ।” তিনি আরও জানান, ভবিষ্যতে এই প্রকল্পের আওতায় আরও পণ্য যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। কোকরাঝাড়ের সচেতনতা সভায় উপস্থিত স্থানীয়রা এই প্রকল্পকে স্বাগত জানিয়েছেন। একজন ফেয়ার প্রাইস শপ মালিক বলেন, “এই প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা সাশ্রয়ী মূল্যে মানুষের কাছে পণ্য পৌঁছে দিতে পারব।
এটি গ্রামীণ অঞ্চলের মানুষের জন্য বড় সুবিধা হবে।” গাঁও পঞ্চায়েতের একজন সদস্য বলেন, “সরকারের এই উদ্যোগ আমাদের সম্প্রদায়ের মানুষের জন্য খুবই উপকারী। আমরা এটি সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য সহযোগিতা করব।” অসম সরকারের এই ভর্তুকিযুক্ত অত্যাবশ্যকীয় পণ্য প্রকল্প রাজ্যের খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে।
ঘরোয়া লিগে প্রথম জয়ের খোঁজে নৈহাটিতে নামছে মহামেডান
মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে এই উদ্যোগ দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য পুষ্টিকর খাবারের অ্যাক্সেস নিশ্চিত করবে। ১ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া এই প্রকল্প অসমের ৭০ লক্ষ রেশন কার্ডধারী পরিবারের জন্য একটি বড় সুযোগ হয়ে উঠবে।