অসমের (Assam) শোণিতপুর জেলার ধোবাকটা গ্রামে এক অসামান্য প্রশাসনিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বিদেশি সনাক্তকরণ আদালতের নির্দেশে পাঁচজনকে বিদেশি ঘোষণা করা হলেও, বাস্তবে তাঁদের খোঁজ বহু বছর ধরেই নেই — এমনটাই জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ঘটনাটি রাজ্যের অভিবাসন সংক্রান্ত নজরদারি ব্যবস্থার কার্যকারিতা এবং পরবর্তী প্রশাসনিক প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে।
২০২৫ সালের ২৪ অক্টোবর বিদেশি সনাক্তকরণ আদালত নং–২ পাঁচজনকে “Declared Foreigner—DFN” হিসেবে ঘোষণা করে। নির্দেশে উল্লেখ ছিল, Immigrants Expulsion from Assam Act, 1950 অনুযায়ী তাঁদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অসম ত্যাগ করতে হবে। পরবর্তী পর্যায়ে জেলা প্রশাসন আইনগতভাবে নোটিস জারি করলেও দেখা যায় — যাদের বিরুদ্ধে এই নির্দেশ, তাঁদের কারও বর্তমান অবস্থান প্রশাসনের জানা নেই।
রেকর্ড অনুযায়ী যাদের বিদেশি ঘোষণা করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন —
• মসুদ্দা হানুফা এবং তাঁর স্বামী এলিজুল হক
• মোহাম্মদ আমজাদ আলী, পিতা মতবর আলী
• একই পরিবারের আরও দুই সদস্য — মসুদ্দা মারিয়াম নেসা ও মসুদ্দা ফাতেমা, দুজনেই আমজাদ আলীর স্ত্রী হিসাবে নথিভুক্ত
• পঞ্চম নাম মসুদ্দা মনওয়ারা, যার স্বামীর নাম হাচমত আলী
কিন্তু এই পাঁচজনের কোনোটিই এখন গ্রামে নেই। প্রশাসনের ভাষ্য অনুযায়ী, তাঁরা সম্ভবত ১৮–২০ বছর আগেই ধোবাকটা গ্রাম ছেড়ে চলে গেছেন। তাঁরা কোথায় গিয়েছেন, আদৌ জীবিত আছেন কি না, অন্য রাজ্যে নাকি অন্য দেশে পাড়ি দিয়েছেন — এসব সম্পর্কে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য নেই।
জেলা আয়ুক্ত আনন্দ কুমার দাস জানান, “২০০৬ সালে সীমান্ত শাখার পুলিশের রিপোর্টে তাঁদের ডি–ভোটার হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার পর তাঁরা বিদেশি ঘোষিত হন। কিন্তু নোটিস দিতে গিয়ে বোঝা যায় — তাঁরা বহু বছর ধরেই গ্রামের বাইরে।”
তিনি আরও বলেন, “এখন পুলিশের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন সম্ভাব্য ঠিকানাগুলি খতিয়ে দেখে ওই ব্যক্তিদের সন্ধান করে।”
প্রশাসনের মতে, নির্দেশ অনুযায়ী তাঁদের ধুবড়ি, শ্রীভূমি বা দক্ষিণ শালমারা–মানকাচরের সীমান্ত দিয়ে দেশত্যাগ করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু যখন হদিসই নেই, তখন নির্দেশ কার্যকর করার কোনো উপায় থাকছে না।
এই ঘটনায় বিভিন্ন অভিবাসন বিশেষজ্ঞ মনে করছেন — এটি রাজ্যের ডি ভোটার এবং বিদেশি সনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার মধ্যে বিদ্যমান দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সমস্যা প্রকাশ করে। তাঁদের মতে, প্রায় দুই দশক ধরে যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, তারা যদি এতোদিন আগেই স্থানান্তরিত হয়ে থাকে, তবে তা নজরদারি ও নথি হালনাগাদে বড় ধরনের ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়।
স্থানীয় বাসিন্দারাও জানিয়েছেন, ওই পরিবারগুলি অনেক আগেই গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছিল। কেউ কেউ বলেছেন, তাঁরা অন্য জেলা বা রাজ্যে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু সঠিক তথ্য জানা নেই।
প্রশাসনের এক কর্মকর্তা বলেন, “বিদেশি ঘোষণা করে ২৪ ঘণ্টার ভেতরে রাজ্যত্যাগের নোটিস জারি করা একটি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। কিন্তু এখানে চ্যালেঞ্জ হলো — যাদের উদ্দেশে নির্দেশ, তাঁদের অস্তিত্বই বহু বছর আগে হারিয়ে গেছে।”
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নোটিস কার্যকর করা সম্ভব না হলে পরবর্তী প্রশাসনিক পদক্ষেপের প্রশ্নও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে পুনরায় মামলা পুনর্মূল্যায়ন বা তদন্ত পুনর্গঠন—উভয় প্রক্রিয়ার যেকোনো একটি বিবেচনা করতে হতে পারে।
ধোবাকটার এই ঘটনা কেবল পাঁচজনের অনুপস্থিতি নয়, বরং অভিবাসন সংক্রান্ত নথি ব্যবস্থাপনা, নজরদারি এবং মাঠ পর্যায়ের তথ্যসংগ্রহের সামগ্রিক ব্যবস্থার ওপর নতুন করে নজরদারির প্রয়োজনীয়তার কথাই তুলে ধরছে। বিদেশি সনাক্তকরণ আদালতের সিদ্ধান্ত কাগজে-কলমে কার্যকর হলেও, বাস্তব পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন—এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে প্রশাসনের অনুসন্ধানে।


