পাকিস্তানী-বাংলাদেশী চিহ্নিত? উচ্ছেদ অভিযানে চাঞ্চল্য অসমে

অসমে উচ্ছেদ (Assam Eviction) অভিযান নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে এই অভিযানের মাধ্যমে ২০২১ সাল থেকে…

Assam Eviction

অসমে উচ্ছেদ (Assam Eviction) অভিযান নিয়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক মহলে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার নেতৃত্বে এই অভিযানের মাধ্যমে ২০২১ সাল থেকে প্রায় দেড় লক্ষ বিঘা জমি অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। তবে, এই অভিযানকে কেন্দ্র করে শর্মার দাবি, যে এটি “পাকিস্তানি ও বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের” বিরুদ্ধে পরিচালিত, তা রাজ্যে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

তিনি দাবি করেছেন যে, এই উচ্ছেদ অভিযান অসমের স্থানীয় সম্পদ ও পরিচয় রক্ষার জন্য অত্যন্ত জরুরি। তবে, বিরোধী দল এবং সমালোচকরা অভিযোগ করছেন যে, এই অভিযানে বাংলাভাষী মুসলিম সম্প্রদায়কে টার্গেট করা হচ্ছে।

   

হিমন্ত বিশ্ব শর্মা অভিযানের পক্ষে বলেছেন, “আমরা কেবলমাত্র সন্দেহভাজন বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। ভারতীয় বা অসমীয়া নাগরিকদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।” তিনি আরও দাবি করেছেন যে, অসমে অবৈধ অভিবাসনের ফলে জনসংখ্যার ভারসাম্যে পরিবর্তন এসেছে, যা রাজ্যের স্থানীয় সংস্কৃতি ও পরিচয়ের জন্য হুমকি।

তিনি বলেন, “যদি আমরা এখনই পদক্ষেপ না নিই, তবে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে অসমের মুখ্যমন্ত্রীও অনুপ্রবেশকারী সম্প্রদায়ের থেকে হতে পারেন।” এই বক্তব্য তিনি স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে দিয়েছেন, যা ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।

অসম সরকারের তথ্য অনুযায়ী, এই উচ্ছেদ অভিযানে প্রায় ৫০,০০০ মানুষকে উচ্ছেদ করা হয়েছে এবং ২৫,০০০ হেক্টরেরও বেশি জমি উদ্ধার করা হয়েছে। গোলাঘাট জেলার রেঙ্গা রিজার্ভ ফরেস্টে সম্প্রতি ৪,০০০-এর বেশি কাঠামো ভেঙে ফেলা হয়েছে, এবং গোয়ালপাড়ার বন্দরমাথা রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে ৪৫০টি পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।

শর্মা জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির জন্য ক্ষতিপূরণ হিসেবে আরসিসি বাড়ির জন্য ১০ লক্ষ টাকা, অসম-টাইপ বাড়ির জন্য ৫ লক্ষ টাকা এবং কাঁচা বাড়ির জন্য ১ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। তবে, এই ক্ষতিপূরণের বাস্তবায়ন নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।

Advertisements

বিরোধী দল, বিশেষ করে কংগ্রেস এবং রাইজোর দলের নেতা অখিল গগৈ, এই অভিযানকে সাম্প্রদায়িক বলে অভিহিত করেছেন। তারা দাবি করেছেন যে, এই উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে বাংলাভাষী মুসলিম সম্প্রদায়কে টার্গেট করা হচ্ছে এবং এটি বিজেপির ভোটের রাজনীতির একটি অংশ।

গগৈ বলেন, “এই অভিযানের মাধ্যমে হিন্দু ভোটারদের একত্রিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে, বিশেষ করে উজনি অসমে।” এছাড়াও, জমিয়ত উলেমা-ই-হিন্দের মতো সংগঠন শর্মার বিরুদ্ধে হিংসাত্মক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগ দাবি করেছে।

শর্মা এই সমালোচনার জবাবে বলেছেন, “কংগ্রেস, জমিয়ত-ই-ইসলামি-হিন্দ, প্রশান্ত ভূষণ এবং হর্ষ মান্ডারের মতো ব্যক্তিরা অসমকে দুর্বল করার জন্য একটি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।” তিনি আরও দাবি করেছেন যে, এই ব্যক্তিরা উচ্ছেদ অভিযানকে মানবিক সংকট হিসেবে চিত্রিত করার চেষ্টা করছেন। তিনি এই অভিযানকে অসমের পরিচয় ও সম্পদ রক্ষার জন্য অপরিহার্য বলে উল্লেখ করেছেন।

সদিচ্ছা নাকি বাধ্যতামূলক অবসর? নীরবতা ভেঙে টেস্ট নিয়ে বার্তা হিটম্যানের

এদিকে, সমালোচকরা যুক্তি দিচ্ছেন যে, এই অভিযানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। প্রশান্ত ভূষণের মতো কর্মীরা অভিযোগ করেছেন যে, সরকার বাংলাভাষী মুসলিমদের “বাংলাদেশি” হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের উচ্ছেদ করছে এবং এই জমিগুলো শিল্পপতিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। তবে, শর্মা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, “আমরা অসমের জমি ও সংস্কৃতি রক্ষা করছি।”

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News