গুয়াহাটি, ৩ ডিসেম্বর: অসম দিবসের আবহে এক নতুন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বার্তা দিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা (Bor Asom vision by Himanta Biswa Sarma)। মঙ্গলবার রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা আহোম সাম্রাজ্যের নায়ক স্বর্গাদেউ চাওলুং সুযুকাফার প্রতিমূর্তিতে শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি ঘোষণা করেন “আমরা আজ প্রতিজ্ঞা করছি ‘বড় অসম’ গড়ার। এমন এক অসম, যা হবে সকল সম্প্রদায়ের সম্মিলিত আবাস গর্বিত, শক্তিশালী ও ঐক্যবদ্ধ।”
স্বর্গাদেউ সুযুকাফা ১২২৮ খ্রিস্টাব্দে অসমে আগমন করেন এবং দীর্ঘ ৬০০ বছরের আহোম শাসনের ভিত্তি স্থাপন করেন। তাঁর সেই “সমন্বয় ও স্থায়িত্বের দর্শন”-কেই সামনে রেখে মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণা অসমের রাজনৈতিক অঙ্গনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষদের মধ্যেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এক্স-এ (X) পোস্ট করে হিমন্ত লিখেছেন, অসম দিবসে এ আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সুই-কাফার স্বপ্নের সেই বড় অসম গড়তে যা হবে ঐক্যের প্রতীক।”
নতুন 350cc বাইক আনছে Suzuki, চাপে পড়বে Royal Enfield, Honda
মুখ্যমন্ত্রী একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন অসম দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য। তিনি লেখেন “ধন্যবাদ আদরণীয় অমিত শাহজি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীজির নেতৃত্বে ডবল-ইঞ্জিন সরকার আহোমদের ঐতিহ্য ও অসমের গৌরব বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে এক মুহূর্তও পিছিয়ে নেই।” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁর শুভেচ্ছা বার্তায় অসমের সমৃদ্ধ ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তিনি বলেন “আহোম যুগের ঐতিহ্য আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে। অসম দিবস আমাদের সাংস্কৃতিক শেকড়কে আরও দৃঢ় করে।”
অমিত শাহ আরও দাবি করেন, মোদী নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের সময় উত্তর-পূর্ব অঞ্চল—বিশেষ করে অসম শান্তি, উন্নয়ন, অবকাঠামো এবং শিক্ষায় নজিরবিহীন অগ্রগতি অর্জন করেছে। সুই-কাফা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন। অসম দিবসের দিনই মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত Sui-Ka-Pha University-এর নাম বদলে করা হবে Su-Ka-Pha University।
হিমন্ত বিশ্ব শর্মার কথায় “বহুমুখী শিক্ষায় আমরা আরও এক ধাপ এগোলাম। সর্গাওকী সু-কাফার স্বপ্নের ‘বড় অসম’ বাস্তবায়নের পথে এটি বড় অর্জন।” মুখ্যমন্ত্রীর ‘Bor Asom’ ধারণাটি ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। অনেকের মতে, রাজ্যের বিভিন্ন জনজাতি, সম্প্রদায়, ভাষাভাষীকে এক সূত্রে বাঁধার এ এক কৌশলগত জনসংযোগ বার্তা। আবার অনেকে বলছেন, এটি ভবিষ্যতের বৃহত্তর সাংবিধানিক কাঠামোর ইঙ্গিত।
যে ভাবেই দেখা হোক, দুর্নীতি দমন, উচ্ছেদ অভিযান, জনসংখ্যা নীতি, পরিকাঠামো উন্নয়ন এসব নিয়ে যখন রাজ্যজুড়ে বিতর্ক চলছে, ঠিক সেই সময় মুখ্যমন্ত্রীর এই “বড় অসম” আহ্বান রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। অসম দিবসের আবেগে মানুষ, ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা। এরই মাঝে রাজ্যের সর্বত্র পালিত হয়েছে অসম দিবস।
বিভিন্ন বিদ্যালয়, সমাজ সংগঠন, যুব দল, সাংস্কৃতিক মঞ্চে সুযুকাফার জীবনদর্শন ও অসমের সমন্বয়বাদী ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। আজকের অসম দ্রুত পরিবর্তনের পথে। কিন্তু শিকড়ের সঙ্গে সংযোগ বজায় রেখে ভবিষ্যৎ গড়ার যে বার্তা মুখ্যমন্ত্রী দিয়েছেন তা রাজনীতির বাইরেও সাধারণ মানুষের মনে নতুন আলো জ্বালিয়েছে।
