‘মিয়াদের’ গান্ধী ভবনে নির্বাসনের হুঁশিয়ারি দিলেন অসম মুখ্যমন্ত্রী

অসমের মুখ্যমন্ত্রী (Assam CM) হিমন্ত বিশ্ব শর্মা কংগ্রেস সাংসদ তথা রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি গৌরব গগৈর সাম্প্রতিক মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। গগৈ সম্প্রতি বলেছিলেন যে, “মিয়ারা…

Assam CM warning to muslim

অসমের মুখ্যমন্ত্রী (Assam CM) হিমন্ত বিশ্ব শর্মা কংগ্রেস সাংসদ তথা রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি গৌরব গগৈর সাম্প্রতিক মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। গগৈ সম্প্রতি বলেছিলেন যে, “মিয়ারা নতুন অসমীয়া।” এই মন্তব্যের জবাবে শর্মা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অসমের পরিচয়কে “অনুপ্রবেশকারীদের হাতে তুলে দেওয়ার” অভিযোগ তুলেছেন।

   

তিনি তীব্র ভাষায় বলেন, “কংগ্রেস যদি অনুপ্রবেশকারীদের এতই পছন্দ করে, তাহলে তাদের রাহুল গান্ধীর বাড়িতে পাঠানো উচিত। গৌরব গগৈ যদি দাবি করেন যে তারা নতুন অসমীয়া, তাহলে তিনি তাদের নিজের বাড়িতে জায়গা দিন। আমরা তাদের গ্রহণ করতে পারি না—আমাদের মূল অসমীয়াদের জন্যই পর্যাপ্ত সম্পদ নেই। তথাকথিত ‘নতুন অসমীয়া’দের জন্য জমি, বাড়ি বা সুবিধা আমরা কোথায় পাব?”

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য

হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জোর দিয়ে বলেন, অসমের অগ্রাধিকার হল আদিবাসী অসমীয়া সম্প্রদায়ের অধিকার ও সম্পদ রক্ষা করা। তিনি বলেন, “যখন আমরা আমাদের নিজেদের মানুষের জন্য পর্যাপ্ত সুবিধা দিতে পারছি না, তখন বাইরের লোকদের জন্য কীভাবে সুবিধা দেব?”

শর্মার মতে, অসমের সম্পদ এবং সুযোগ-সুবিধা শুধুমাত্র রাজ্যের আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্য সংরক্ষিত থাকা উচিত। তিনি কংগ্রেসের এই মন্তব্যকে রাজ্যের পরিচয় ও সংস্কৃতির উপর আঘাত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তাঁর বক্তব্যে স্পষ্ট, রাজ্য সরকার অবৈধ অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান বজায় রাখবে।

গৌরব গগৈর মন্তব্য ও রাজনৈতিক বিতর্ক

গৌরব গগৈর “মিয়ারা নতুন অসমীয়া” মন্তব্য অসমের রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। ‘মিয়া’ শব্দটি সাধারণত বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মুসলিম সম্প্রদায়কে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়, যারা অসমে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন।

গগৈয়ের এই মন্তব্যকে কংগ্রেসের একটি অংশ সমর্থন করলেও, বিজেপি এটিকে ‘অনুপ্রবেশকারীদের পক্ষপাত’ হিসেবে দেখছে। শর্মার তীব্র প্রতিক্রিয়া এই বিষয়ে দুই দলের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। বিজেপি নেতারা দাবি করেছেন, কংগ্রেস এই ধরনের মন্তব্যের মাধ্যমে রাজ্যের আদিবাসী সম্প্রদায়ের অধিকারকে উপেক্ষা করছে।

Advertisements

তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া

অসমে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা এই বিতর্কে সরাসরি জড়ায়নি, তবে তারা বিজেপির বক্তব্যের সমালোচনা করেছে। তৃণমূল নেতা রিপুন বোরা বলেন, “বিজেপি অসমের জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছে। মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য সম্প্রদায়ের মধ্যে বিদ্বেষ ছড়ানোর চেষ্টা।” তিনি আরও বলেন, অসমের সকল সম্প্রদায়ের মানুষের অধিকার রক্ষা করা উচিত, এবং রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত বিভেদের পরিবর্তে ঐক্যের বার্তা দেওয়া।

EPFO-র নতুন সুরক্ষা ব্যবস্থা, বাধ্যতামূলক Aadhaar ফেস অথেন্টিকেশন

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

অসমে বিজেপি এবং কংগ্রেসের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পরিচয় এবং অবৈধ অভিবাসন নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক চলছে। বিজেপি সরকার ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস (এনআরসি) এবং সিটিজেনশিপ অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ) নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে, যা রাজ্যের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে সমর্থন পেয়েছে।

অন্যদিকে, কংগ্রেস মিয়া সম্প্রদায়ের অধিকারের পক্ষে কথা বলে তাদের ভোটব্যাঙ্ক শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। শর্মার মন্তব্য এই দ্বন্দ্বকে আরও জোরদার করেছে, এবং আগামী দিনে এটি রাজ্যের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

হিমন্ত বিশ্ব শর্মার তীব্র মন্তব্য এবং গৌরব গগৈর বক্তব্য অসমের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও উত্তপ্ত করেছে। ‘মিয়ারা নতুন অসমীয়া’ বিতর্ক রাজ্যের পরিচয়, সম্পদ এবং অধিকারের প্রশ্নে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

বিজেপি এবং কংগ্রেসের মধ্যে এই রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব অসমের জনমানসে বিভেদ সৃষ্টি করলেও, এটি আগামী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। অসমের আদিবাসী সম্প্রদায় এবং মিয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য স্থাপনের চ্যালেঞ্জ এখন রাজ্যের সামনে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।