গুয়াহাটি: সাংবাদিকতার স্বাধীনতার পক্ষে এক গুরুত্বপূর্ণ রায় দিল গুয়াহাটি হাইকোর্ট। একটি জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যমের অ্যাঙ্কর অঙ্কাক্ষা স্বরূপের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া ফৌজদারি মামলা খারিজ করে দিয়েছে আদালত। মামলাটি দায়ের হয়েছিল গত জুন মাসে। স্বরূপ একটি সাক্ষাৎকারে কামাখ্যা মন্দিরে ‘মানব বলি’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন তোলায় বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
ঘটনার সূত্রপাত হয় রাজা রঘুবংশী নামে ইন্দোরের এক ব্যবসায়ীর হত্যাকাণ্ড ঘিরে। চলতি বছরের শুরুতে তাঁর স্ত্রী ও প্রেমিক মেঘালয়ে মিলে তাঁকে হত্যা করেন বলে অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে অঙ্কাক্ষা স্বরূপ মৃতের এক আত্মীয়কে সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করেন “যেহেতু তাঁরা কামাখ্যায় গিয়েছিলেন, যেখানে বলি বা মানব বলি দেওয়ার প্রথা প্রচলিত বলে জানা যায়, আপনারা কি সন্দেহ করছেন এটা কোনও তান্ত্রিক হত্যা হতে পারে?”
এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে গুয়াহাটির সাইবার শাখা ১২ জুন তাঁর বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়ের করে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১৯৬(২), ২৯৯ ও ৩০২ ধারায় মামলা রুজু করা হয় যার মধ্যে ‘ধর্মীয় অনুভূতি আঘাত করা’ এবং ‘সম্প্রদায়গত বিদ্বেষ উস্কে দেওয়া’র অভিযোগও ছিল।
এরপর অঙ্কাক্ষা স্বরূপ হাইকোর্টে আবেদন করেন এফআইআরটি বাতিলের জন্য। গত ১৫ অক্টোবর বিচারপতি শামিমা জাহান রায়ে জানান, স্বরূপের মন্তব্যে কোনও ‘দ্বেষ বা শত্রুতার উদ্দেশ্য’ ছিল না। তাঁর বক্তব্য কেবল একটি হত্যাকাণ্ডের সম্ভাব্য দিক নিয়ে সাংবাদিক অনুসন্ধান হিসেবেই এসেছে, ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর উদ্দেশ্যে নয়।
বিচারপতি আরও বলেন, “ওই মন্তব্যটি অসাবধানতাবশত বলা হলেও, এটি অপরাধের পর্যায়ে পড়ে না। তবে সাংবাদিকদের সর্বদা মনে রাখতে হবে, জনসমক্ষে বা সম্প্রচার মাধ্যমে দেওয়া বক্তব্য যথাযথভাবে যাচাই করে নেওয়া উচিত।” আদালত পর্যবেক্ষণ করে জানায়, স্বরূপের মন্তব্য কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠানের প্রেক্ষিতে বা উপাসনালয়ে করা হয়নি। তাই ভারতীয় ন্যায় সংহিতার যে ধারাগুলির আওতায় মামলা দায়ের করা হয়েছিল, তা প্রযোজ্য নয়।
এই মামলায় স্বরূপের পক্ষে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট কে.এন. চৌধুরী ও আইনজীবী এস.পি. শর্মা। রাজ্যের পক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত সরকারি আইনজীবী কে.কে. দাস। আইনি মহলে এই রায়কে সাংবাদিক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে এক বড় মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনা মনে করিয়ে দিল যে সাংবাদিকদের প্রশ্ন করা অপরাধ নয় যদি তার পেছনে কোনও বিদ্বেষ বা উস্কানির উদ্দেশ্য না থাকে।