বাংলার বাইরে বাঙালি পরিচালিত পুরসভায় ১৬.৩৮ কোটি চুরি

আগরতলা, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫: ত্রিপুরার আগরতলা পুরসভায় (AMC) ঘটে গেল নজিরবিহীন আর্থিক জালিয়াতি। শহরের প্রধান নাগরিক পরিষেবার দায়িত্বে থাকা আগরতলা মিউনিসিপাল কর্পোরেশন (AMC)-এর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট…

Fraud Rocks Agartala Municipal Corporation

আগরতলা, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫: ত্রিপুরার আগরতলা পুরসভায় (AMC) ঘটে গেল নজিরবিহীন আর্থিক জালিয়াতি। শহরের প্রধান নাগরিক পরিষেবার দায়িত্বে থাকা আগরতলা মিউনিসিপাল কর্পোরেশন (AMC)-এর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অবিশ্বাস্যভাবে গায়েব হয়েছে প্রায় ₹১৬.৩৮ কোটি টাকা। ব্যাংকের চেকবই ব্যবহার করে নয়, বরং ক্লোন করা (জাল) চেক ব্যবহার করেই ঘটানো হয়েছে এই প্রতারণা। ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়েছে সমগ্র রাজ্যে।

প্রথমে কীভাবে ধরা পড়ল?
আগরতলার UCO ব্যাংকের জোনাল ম্যানেজার সঞ্জিব রায় নিয়মিত আর্থিক হিসাব মিলিয়ে দেখতে গিয়ে খেয়াল করেন যে, পুরসভার (AMC) অ্যাকাউন্ট থেকে অস্বাভাবিক হারে টাকা খরচ হচ্ছে। পরে দেখা যায়, গত আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে মোট ছ’টি জাল চেক ব্যবহার করে এই বিপুল অঙ্কের টাকা তোলা হয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি ব্যাংকের শীর্ষ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয় এবং এরপর West Agartala থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।

   

পুলিশের প্রাথমিক অনুসন্ধান
West Agartala থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার রানা চ্যাটার্জী জানিয়েছেন— “ব্যাংক কর্তৃপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা মামলা রুজু করেছি। আমাদের প্রাথমিক তদন্তে জানা যাচ্ছে, এই প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত দল হায়দরাবাদ থেকে কার্যক্রম চালাচ্ছে।” অর্থাৎ এটি শুধু স্থানীয় নয়, আন্তঃরাজ্য স্তরে সংগঠিত একটি অর্থনৈতিক অপরাধ।

চেক জালিয়াতি ও কারিগরি অসঙ্গতি
সবচেয়ে বিস্ময়ের বিষয় হলো, চেকগুলোতে পুরসভার (AMC) CEO ডি.কে. চাকমা-র স্বাক্ষর জাল করে ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ আসল চেকবই পুরসভার অফিসেই অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, চেক নম্বর ক্লোনিং করে প্রতারণা চালানো হয়েছে।

সিসিটিভি ফুটেজ ও গুরুত্বপূর্ণ সূত্র
টাকা তোলার জন্য যে জাল চেকগুলো জমা দেওয়া হয়েছিল, তার বেশ কিছু ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ জোগাড় করেছে পুলিশ। ফুটেজ থেকে প্রতারকদের পরিচয় শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। রানা চ্যাটার্জীর কথায়, “ফুটেজে ধরা পড়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা গেলে, তদন্তের মোড় ঘুরে যাবে।”

RTGS মারফত টাকা স্থানান্তর
ব্যাংক সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই টাকা সরাসরি নগদ তোলা হয়নি। বরং RTGS লেনদেনের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির অ্যাকাউন্টে পাঠানো হয়েছে।

যেমন—

Advertisements
  • Ganesh Enterprise – ₹১.৯৮ কোটি
  • Shree Sai Balaji Associates Pvt. Ltd. – ₹২.১৭ কোটি
  • Paliwal Enterprise – ₹২.৬১ কোটি
  • RU Enterprise – ₹২.৩৭ কোটি
  • A Association – ₹১.৫৭ কোটি
  • Biswas Enterprise – ₹২.৬৫ কোটি

এই ছদ্ম সংস্থাগুলির পেছনে কোন চক্র কাজ করছে, সেটিই এখন পুলিশের প্রধান প্রশ্ন।

উদ্ধার প্রচেষ্টা ও ব্যাঙ্কের ভূমিকা
প্রাথমিকভাবে ব্যাংক একটি সন্দেহভাজন অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করতে পেরেছে, যাতে কিছু টাকা আটকে রাখা যায়। তবে পুলিশের ধারণা, প্রায় ₹১৪ কোটি টাকা ইতিমধ্যেই অন্যত্র সরে গেছে। ফলে সময় নষ্ট হলে অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা কমে আসবে।

পুরসভার (AMC) উচ্চপদস্থ কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যেই ব্যাংকের কাছে সমস্ত অর্থ ফেরত দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। ব্যাংকও সেই অনুরোধ মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে।

বৃহত্তর প্রেক্ষাপট
ত্রিপুরার DGP অনুরাগ ধিঙ্গর আগেই জানিয়েছিলেন যে, ২০২১ সাল থেকে রাজ্যে অনলাইন আর্থিক প্রতারণার ঘটনায় প্রায় ₹৪৬.৯৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র কিছু অংশ উদ্ধার করা গেলেও এখনও অনেক টাকা ভুক্তভোগীদের হাতে ফেরত যায়নি। ফলে AMC ঘটনার সঙ্গে আগের কেসগুলির যোগসূত্র আছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

আগরতলা পুরসভার (AMC) অ্যাকাউন্ট থেকে কোটি কোটি টাকা গায়েব হওয়ার ঘটনা শুধু একটি প্রশাসনিক ব্যর্থতা নয়, এটি সাধারণ মানুষের আস্থার উপরও আঘাত। শহরের নাগরিকেরা যে কর দিয়ে পুরসভার (AMC) কাজে অর্থ জোগান দেন, সেই অর্থই প্রতারণার জালে হাওয়া হয়ে যাওয়া প্রশাসনিক স্বচ্ছতার বড় প্রশ্ন তোলে।

তদন্ত দ্রুত অগ্রসর হলে হয়তো দায়ীদের শাস্তি হবে এবং কিছু অর্থ উদ্ধার সম্ভব হবে। তবে এই ঘটনা স্পষ্ট করে দিয়েছে—ডিজিটাল যুগে ব্যাংকিং নিরাপত্তা আরও কড়া করা ছাড়া উপায় নেই।