সংসদে দাঁড়িয়ে ফের চমক দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একগুচ্ছ বিস্ফোরক মন্তব্যে দেশজুড়ে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন তিনি। নিজের দৃঢ় মনোভাবের কথা স্পষ্ট করে জানিয়ে মোদী বলেন, “পৃথিবীর কোনও নেতাই ভারতকে অপারেশন থামাতে বলেনি।” তাঁর এই বক্তব্য পরিষ্কারভাবে ইঙ্গিত দেয় যে, কূটনৈতিক স্তরে ভারত যে আত্মবিশ্বাস ও সিদ্ধান্তক্ষমতায় এগিয়ে চলেছে, তা আর কোনও দেশের প্রভাবাধীন নয়।
প্রধানমন্ত্রীর দাবি, ২০১৯ সালের ৯ মে রাতে মার্কিন উপরাষ্ট্রপতি তাঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছিলেন। সেই সময় মোদী সেনাবাহিনীর সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ব্যস্ত ছিলেন। পরে তিনি ফোনে যোগাযোগ করেন মার্কিন নেতৃত্বের সঙ্গে। মোদীর ভাষায়, “উনি (মার্কিন উপরাষ্ট্রপতি) আমাকে সতর্ক করে বলেন, পাকিস্তান বড় ধরনের হামলার ছক কষছে। আমি জবাব দিয়েছিলাম— যদি সত্যিই হামলা করে, তাহলে আমরা আরও বড় প্রত্যাঘাত করব। গুলির জবাবে আমরা গোলা ছুঁড়ব।”
প্রধানমন্ত্রী জানান, এই কথোপকথনের পরই ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানের সেনাঘাঁটিগুলিকে তছনছ করে দেয়। কোনওরকম দ্বিধা ছাড়াই ভারত সরাসরি শত্রুর জবাবে প্রতিআক্রমণ করে। মোদী বলেন, “আমরা যুদ্ধ চাই না, কিন্তু যদি কেউ আমাদের দিকে বন্দুক তাক করে, তাহলে আমরা বন্দুক ছেড়ে পালাব না। আমরা জবাব দেব।”
এই বক্তব্যের মাধ্যমে মোদী একদিকে যেমন দেশের প্রতিরক্ষা নীতিতে ‘প্রথমে আঘাত নয়, কিন্তু জোরালো জবাব’ নীতি স্পষ্ট করে দেন, অন্যদিকে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে কড়া ভাষায় আক্রমণও শানান। তিনি বলেন, “আজ কংগ্রেস এমন এক রাজনীতি করছে, যেখানে তারা পাকিস্তানকে ব্যবহার করছে নিজের রাজনীতির অস্ত্র হিসেবে। ওরা পাকিস্তানের ভরসায় ইস্যু খুঁজছে, আর ভারত আত্মনির্ভর হচ্ছে। এটা কতটা লজ্জার বিষয়, ভেবে দেখুন।”
প্রধানমন্ত্রী কটাক্ষ করে আরও বলেন, “এক সময় যারা ‘ভারত ভাগের’ জন্য দায়ী, আজ তারা দেশের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে! তারা শত্রুর মুখে হাসি ফোটাতে চায়, আর সেনার মনোবল ভাঙে।”
মোদীর বক্তৃতায় স্পষ্ট হয়ে যায়, বর্তমান বিজেপি সরকারের অবস্থান একেবারেই আপসহীন। দেশ সুরক্ষার প্রশ্নে কোনও ছাড় দেওয়া হবে না। কূটনীতি, প্রতিরক্ষা এবং জাতীয় গর্ব— এই তিন স্তম্ভেই দাঁড়িয়ে মোদীর ভারত আজ সোজাসুজি কথা বলে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই দেশ ২০১৪-র আগে যেভাবে দুর্বলভাবে সিদ্ধান্ত নিত, সেই দিন শেষ। এখন ভারত নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়। যারা কেবল বিদেশিদের খুশি করতে চায়, তাদের যুগ পেরিয়ে গিয়েছে।”
এই বক্তব্যে রাজনৈতিক বার্তাও স্পষ্ট— কংগ্রেস ও বিরোধীরা যদি পাকিস্তানকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে, তাহলে মোদী সরকার তার যথোচিত জবাব দিতে প্রস্তুত। প্রতিরক্ষা, বিদেশনীতি ও জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে মোদীর এই বক্তৃতা নিঃসন্দেহে আগামী নির্বাচনের আগে বিজেপির প্রচারে বড় হাতিয়ার হয়ে উঠবে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।