মঙ্গলবার (৮ জুলাই, ২০২৫) অর্থ মন্ত্রক স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা (Jan Dhan accounts)-র অচল বা নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার জন্য ব্যাংকগুলিকে কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি কিছু সংবাদমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশিত হয়েছিল যে, সরকার নাকি ব্যাংকগুলিকে এই ধরনের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে বলেছে। সেই প্রতিবেদনকে ভিত্তিহীন আখ্যা দিয়ে অর্থ মন্ত্রকের অর্থিক পরিষেবা বিভাগ (DFS) জানিয়েছে, এই ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
অর্থ মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “মাধ্যমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে অর্থিক পরিষেবা বিভাগ ব্যাংকগুলিকে অচল জন ধন অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে বলেছে। এ ধরনের খবর সম্পূর্ণ ভুয়া এবং বিভ্রান্তিকর। ব্যাংকগুলিকে কোনোভাবেই এই ধরনের নির্দেশ দেওয়া হয়নি।”
উল্টোদিকে, DFS-এর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে ১ জুলাই থেকে সারা দেশে তিন মাসব্যাপী একটি বিশেষ প্রচারাভিযান শুরু হয়েছে, যার মূল লক্ষ্য হলো জন ধন অ্যাকাউন্টসহ বিভিন্ন সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের গ্রহণযোগ্যতা এবং সচেতনতা আরও গভীর করা। এই প্রচারাভিযানের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বিমা যোজনা, অটল পেনশন যোজনা এবং অন্যান্য জনমুখী প্রকল্প।
প্রচারের অংশ হিসেবে, ব্যাংকগুলিকে অ্যাকাউন্টগুলির পুনরায় KYC (Know Your Customer) প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। DFS জানিয়েছে, “আমরা নিয়মিতভাবে অচল PMJDY অ্যাকাউন্টগুলির সংখ্যা পর্যবেক্ষণ করি এবং ব্যাংকগুলিকে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে যাতে তারা আবার তাদের অ্যাকাউন্ট সক্রিয় করতে পারেন।”
অর্থ মন্ত্রকের মতে, জন ধন অ্যাকাউন্টগুলির সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এখন পর্যন্ত কোনো বড় আকারের বন্ধের ঘটনা তাদের নজরে আসেনি।
কী এই প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা?
প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা (PMJDY) হলো একটি আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রকল্প, যা ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে চালু করা হয়। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো প্রতিটি ভারতীয় পরিবারের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করা, বিশেষত গ্রামীণ ও নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে।
এই প্রকল্পের আওতায় যে কোনো নাগরিক শূন্য ব্যালান্সে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। এর সঙ্গে যুক্ত থাকে রূপে ডেবিট কার্ড, ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দুর্ঘটনা বীমা কভার, ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত জীবন বীমা কভার এবং সরাসরি সরকারী ভর্তুকি পাওয়ার সুবিধা (Direct Benefit Transfer)।
জন ধন অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জনগণকে ব্যাংকিং সেবায় যুক্ত করার পাশাপাশি সঞ্চয়ের প্রবণতা বাড়ানো, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা বৃদ্ধি এবং আর্থিক সাক্ষরতা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ করা হয়। এছাড়া এই প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষ সহজেই ঋণ, বীমা এবং অন্যান্য আর্থিক সেবার সুযোগ পেয়ে থাকেন।
অর্থ মন্ত্রকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ৫৪.৫৮ কোটি জন ধন অ্যাকাউন্ট রয়েছে, যা এই প্রকল্পকে বিশ্বের বৃহত্তম আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসূচির অন্যতম করে তুলেছে।
তিন মাসের বিশেষ প্রচারাভিযান:
১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া প্রচারাভিযানের মূল লক্ষ্য হলো জন ধন অ্যাকাউন্টের উপকারিতা জনগণের মধ্যে আরও বেশি করে ছড়িয়ে দেওয়া। এই প্রচারে বিভিন্ন গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে শিবিরের মাধ্যমে লোকজনকে সচেতন করা হচ্ছে।
সেই সঙ্গে, ব্যাংকগুলিকে তাদের গ্রাহকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে পুনরায় KYC করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে গ্রাহকেরা আবার তাদের অ্যাকাউন্ট সক্রিয় করে বিভিন্ন সরকারি সুবিধা পেতে পারবেন। অনেক সময় দেখা যায়, বহু অ্যাকাউন্ট দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় অচল অবস্থায় থাকে। এই প্রচারের মাধ্যমে সেই সমস্যারও সমাধান করা হচ্ছে।
বিভ্রান্তি ও সরকারের অবস্থান:
সাম্প্রতিক কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের পর সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল যে তাদের জন ধন অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এই প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রক স্পষ্ট করেছে যে সরকার গণহারে কোনো অ্যাকাউন্ট বন্ধ করছে না, বরং জনগণকে আর্থিক ব্যবস্থায় আরও শক্তভাবে যুক্ত করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানায়, “জন ধন প্রকল্পের লক্ষ্যই হলো প্রত্যেক ভারতীয়ের জন্য ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করা। তাই গণহারে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা সরকারের উদ্দেশ্যের সঙ্গে বিরোধী। আমরা জনগণকে আহ্বান জানাই যাতে তারা তাদের অ্যাকাউন্ট সক্রিয় রাখেন এবং সরকারের বিভিন্ন সুবিধার পূর্ণ ফায়দা তুলতে পারেন।”
প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা ভারতের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি প্রচেষ্টার অন্যতম সেরা উদাহরণ। এটি দেশের কোটি কোটি মানুষকে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যুক্ত করেছে এবং সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পগুলির সুবিধা পেতে সহায়তা করেছে। সরকারের এই স্পষ্টীকরণের পর গ্রাহকরা আশ্বস্ত হতে পারেন যে তাদের অ্যাকাউন্ট বন্ধের কোনো ঝুঁকি নেই। বরং, সক্রিয়ভাবে এই অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে তারা আর্থিকভাবে আরও সুরক্ষিত হতে পারবেন এবং সরকারের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের সুবিধা সহজেই উপভোগ করতে পারবেন।