কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর (shashi-tharoor) বলেছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার প্রধান সমস্যা ভাষা নয়, বরং শান্তি ও শালীনতার জন্য একটি সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি খুঁজে পাওয়া। তিনি জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তান যদি দেশে সর্বত্র দৃশ্যমান সন্ত্রাসবাদের পরিকাঠামোর বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তবে নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে আলোচনায় প্রবেশ করতে পারে।
ব্রাজিলে একটি সর্বদলীয় সংসদীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন থারুর(shashi-tharoor)। তিনি জানান, তাঁর দল লাতিন আমেরিকার দেশগুলির কাছে, এমনকি যেসব দেশের কিছু ভুল বোঝাবুঝি থাকতে পারে, তাদের কাছেও ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী বার্তা সফলভাবে পৌঁছে দিয়েছে।
পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামো নিয়ে প্রশ্ন
পিটিআই ভিডিওর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে থারুর (shashi-tharoor) বলেন, “আমরা আমাদের আলোচনার প্রতিপক্ষদের বারবার বলে আসছি, পাকিস্তান যদি তাদের দাবির মতো এতটাই নির্দোষ হয়, তবে তারা কেন অবাঞ্চিত জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয় দেয়? কেন তারা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে পারে,
প্রশিক্ষণ শিবির পরিচালনা করে, মানুষকে আরও উগ্রপন্থী করে, অস্ত্র সরবরাহ করে এবং কালাশনিকভের মতো অস্ত্র ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দেয়?” তিনি পাকিস্তানের এই সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামোর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান
থারুর (shashi-tharoor) ব্রাজিল সফরে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যেখানে তিনি লাতিন আমেরিকার দেশগুলির কাছে ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থান তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, “আমরা সফলভাবে ভারতের বার্তা পৌঁছে দিয়েছি। এমনকি যেসব দেশের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝি থাকতে পারে, তাদের কাছেও আমরা আমাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছি।” তিনি জানান, ভারত বিশ্ব মঞ্চে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান বজায় রেখেছে এবং এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
পহেলগাঁও হামলা ও অপারেশন সিঁদুর
২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে এক জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষ নিহত হন। এই হামলার জবাবে ভারত ৭ মে ‘অপারেশন সিঁদুর’ শুরু করে, যার অধীনে পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে (পিওকে) নয়টি জঙ্গি ঘাঁটিতে নির্ভুল হামলা চালানো হয়। এই অপারেশনে জয়শে-মোহাম্মদের নেতা আবদুল রউফ আজহার সহ ১০০-এর বেশি জঙ্গি নিহত হয়।
পাকিস্তান এর জবাবে ১০ মে ভোরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে ভারতীয় সীমান্ত শহরগুলিতে হামলা চালায়। ভারতীয় বিমান বাহিনী পাল্টা হামলায় ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির নূর খান এবং চকলালা বিমানঘাঁটি ধ্বংস করে। চার দিনের সংঘাতের পর ১০ মে সন্ধ্যা ৫টা থেকে উভয় দেশ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার চ্যালেঞ্জ
থারুর (shashi-tharoor) বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার প্রধান বাধা হলো তাদের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের প্রতি সমর্থন। তিনি জানান, পাকিস্তানের মাটিতে জঙ্গি সংগঠনগুলি প্রকাশ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের পথে বড় বাধা।
তিনি বলেন, “যতক্ষণ না পাকিস্তান তাদের দেশে সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামো ধ্বংস করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেয়, ততক্ষণ ভারতের পক্ষে তাদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলোচনা করা কঠিন।” তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের দাবি যে তারা সন্ত্রাসবাদের শিকার, তা বিশ্বাসযোগ্য নয়, কারণ তারা জঙ্গিদের নিরাপদ আশ্রয় প্রদান করে এবং তাদের প্রশিক্ষণ শিবির পরিচালনার অনুমতি দেয়।
যুদ্ধবিরতি ও পাকিস্তানের লঙ্ঘন
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ১০ মে সন্ধ্যায় পাকিস্তানের ডিজিএমও-র উদ্যোগে ভারতের ডিজিএমও লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাজীব ঘাইয়ের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। তবে, জেনারেল ঘাই জানান, এই যুদ্ধবিরতি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তান সীমান্তে গোলাবর্ষণ এবং ড্রোন অনুপ্রবেশের মাধ্যমে লঙ্ঘন করে। এই ঘটনা পাকিস্তানের অবিশ্বস্ততার প্রমাণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। থারুর বলেন, এই ধরনের আচরণ পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনাকে আরও জটিল করে তুলেছে।
আন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের অবস্থান
থারুর (shashi-tharoor) ব্রাজিল সফরে লাতিন আমেরিকার দেশগুলির সঙ্গে আলোচনায় ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী অবস্থানকে শক্তিশালী করেছেন। তিনি বলেন, ভারত বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে সন্ত্রাসবাদ একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা এবং এর বিরুদ্ধে সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। তিনি জানান, লাতিন আমেরিকার দেশগুলির সঙ্গে আলোচনায় ভারত সফলভাবে তার বার্তা পৌঁছে দিয়েছে এবং এই অঞ্চলের দেশগুলির সমর্থন আদায় করতে সক্ষম হয়েছে।
ফাইনালে বিরাটদের বিরুদ্ধে টসে জিতে বড় সিদ্ধান্ত শ্রেয়াসের
পাকিস্তানের উপর চাপ
থারুর জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তানকে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি বলেন, “যতক্ষণ না পাকিস্তান তাদের মাটিতে জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির এবং পরিকাঠামো ধ্বংস করে, ততক্ষণ তাদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আলোচনা সম্ভব নয়।” তিনি আরও বলেন, ভারত সবসময় শান্তির পক্ষে, কিন্তু এই শান্তি অর্জনের জন্য পাকিস্তানকে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হবে।
শশী থারুরের (shashi-tharoor)বক্তব্য ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের জটিলতা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরেছে। পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামো এবং যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা দুই দেশের মধ্যে আলোচনার পথে বড় বাধা। থারুরের নেতৃত্বে ব্রাজিল সফরে ভারতের সন্ত্রাসবিরোধী বার্তা আন্তর্জাতিক মঞ্চে পৌঁছে গেছে, যা ভারতের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করেছে। পাকিস্তানের সঙ্গে ভবিষ্যৎ আলোচনার জন্য তাদের সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপই হবে মূল শর্ত।