অসমের (Assam)মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ঘোষণা করেছেন যে, যদি কোনো ব্যক্তি বা তার পরিবারের সদস্যরা জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)তে অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন না করেন, তবে তাদের আধান কার্ডের আবেদন বাতিল করা হবে। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, অসম সরকার (Assam) এখন আধার কার্ড ইস্যু করার জন্য একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রোটোকল (এসওপি) প্রবর্তন করবে।
এই সিদ্ধান্তটি মুখ্যমন্ত্রী শর্মা সেপ্টেম্বরে ঘোষণা করেছিলেন, যেখানে তিনি বলেন যে, আসামের (Assam) আধান কার্ড আবেদনকারীকে অবশ্যই তাদের ২০১৫ সালের এনআরসি আবেদন নম্বর প্রদান করতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী শর্মা জানান, আসাম সরকার (Assam) আগামী দিনে আধান কার্ডের আবেদনকারীদের যাচাই শুরু করবে এবং যারা এনআরসিতে আবেদন করেননি, তাদের আবেদন সরাসরি বাতিল করা হবে। বুধবার মন্ত্রীপরিষদের বৈঠক শেষে তিনি বলেন, আসাম সরকারের সাধারণ প্রশাসন বিভাগ এই নতুন নীতির বাস্তবায়নে প্রধান সংস্থা হিসেবে কাজ করবে।
২০১৫ সালে শুরু হওয়া এনআরসি হালনাগাদ প্রক্রিয়া, যার উদ্দেশ্য ছিল রাজ্যের নাগরিকদের সঠিক তালিকা প্রস্তুত করা। এই প্রক্রিয়া ২০১৯ সালে “চূড়ান্ত এনআরসি” প্রকাশের পর বন্ধ হয়ে যায়। তবে, সরকার দাবি করছে যে এনআরসি তে অন্তর্ভুক্ত না হওয়া ব্যক্তিদের আধান কার্ড দেওয়া হবে না। মুখ্যমন্ত্রী শর্মা বলেছেন, “আধার কার্ডের আবেদন করার সময়, আবেদনকারীকে অবশ্যই তার ২০১৫ সালের এনআরসি আবেদন নম্বর প্রদান করতে হবে। যদি কোন ব্যক্তি বা তার পরিবারের সদস্য এনআরসিতে আবেদন না করেন, তবে সেই আবেদনটি স্বীকৃত হবে না এবং কেন্দ্রে রিপোর্ট করা হবে।”
এছাড়াও, যদি কোনো ব্যক্তি বা তাদের পরিবারের সদস্যরা এনআরসি আবেদন করেছিলেন, তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ফিল্ড লেভেল যাচাই করবেন। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, যখন কর্মকর্তারা পুরোপুরি নিশ্চিত হবেন, তখন আধান কার্ড অনুমোদিত হবে।
মুখ্যমন্ত্রী শর্মা বলেছেন যে, বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে অসম ও ত্রিপুরায়। অসম পুলিশ, ত্রিপুরা পুলিশ এবং বিএসএফ গত কয়েক মাসে বহু অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেপ্তার করেছে, যার কারণে আধার কার্ডের ব্যবস্থাপনাকে আরও শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হয়েছে। শর্মা বলেন, “আমরা সিস্টেমকে আরও শক্তিশালী করতে চাই এবং এজন্যই আমরা আধার কার্ডের ব্যবস্থা কঠোর করেছি। যদি এনআরসি না করা হয়, তাহলে তাদের আধান কার্ড আবেদন বাতিল করতে হবে।”
এই নতুন নির্দেশিকা কেন্দ্রীয় সরকার কর্মীদের ওপর প্রযোজ্য হবে না, যারা অন্য রাজ্যে কর্মরত আছেন এবং এনআরসিতে আবেদন করেননি।
এই নতুন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কিছু মানুষের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, আধার কার্ড এবং এনআরসির মধ্যে এই সংযোগ সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করতে পারে, বিশেষত সেই সব মানুষের জন্য যারা এনআরসির আবেদন প্রক্রিয়া থেকে বাদ পড়েছেন বা যারা অসুবিধার কারণে আবেদন করতে পারেননি।
তবে, সরকার এটি যুক্তি দিয়েছে যে, এটি একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা, যার উদ্দেশ্য রাজ্যে অবৈধ অভিবাসীদের সনাক্ত করা এবং তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া। একদিকে, এটি অসমে অবৈধ অভিবাসনের সমস্যা মোকাবিলা করার জন্য একটি জরুরি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে, অন্যদিকে, সাধারণ নাগরিকদের জন্য এটি একটি অপ্রত্যাশিত বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এই নতুন নিয়মের অধীনে, যখন একজন ব্যক্তি আধার কার্ডের জন্য আবেদন করবেন, তখন তাদের প্রথমে এনআরসি আবেদন নম্বর দিতে হবে। তারপর ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (UIDAI) সেই আবেদন রাজ্য সরকারের কাছে পাঠাবে যাচাই করার জন্য। এরপর, রাজ্য সরকারের স্থানীয় সার্কেল অফিসার (CO) যাচাই করবেন যে আবেদনকারী বা তার পরিবার এনআরসির জন্য আবেদন করেছেন কিনা। যদি না করে থাকেন, তাহলে আবেদনটি বাতিল করা হবে এবং কেন্দ্রে রিপোর্ট করা হবে।
এছাড়াও, যারা এনআরসির জন্য আবেদন করেছেন, তাদের ক্ষেত্রেও একটি মাঠ পর্যায়ের যাচাই প্রক্রিয়া হবে, যেটি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত হবে। যদি সব কিছু ঠিক থাকে, তাহলে আধান কার্ড অনুমোদিত হবে।