নীতীশের এক কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতিতে বেকারত্ব নিয়ে কটাক্ষ বিরোধীদের

বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে নীরবতা ভঙ্গ নীতীশের (Nitish)। মুখ খুলেই ঘোষণা করলেন চাকরি হবে এক কোটি যুবক যুবতীর। ঘোষণার পরেই কার্যত বিরোধীরাও চুপ নেই।…

Nitish new announcement for bihar

বিহারের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে নীরবতা ভঙ্গ নীতীশের (Nitish)। মুখ খুলেই ঘোষণা করলেন চাকরি হবে এক কোটি যুবক যুবতীর। ঘোষণার পরেই কার্যত বিরোধীরাও চুপ নেই। তারাও নীতীশকে কটাক্ষ করে তাদের মতামত প্রকাশ করেছে।

বিহারের ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব এবং চাকরির জন্য যুবক যুবতীদের ভিন রাজ্যে পাড়ি দেওয়ার কথা বলে আক্রমণ শানিয়েছে বিরোধীরা। মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার (Nitish) রবিবার একটি ঘোষণা করেছেন আগামী পাঁচ বছরে, অর্থাৎ ২০৩০ সালের মধ্যে রাজ্যের ১ কোটি যুবক-যুবতীকে সরকারি চাকরি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া হবে।

   

এই লক্ষ্য ২০২০-২০২৫ সময়কালের জন্য নির্ধারিত ৫০ লক্ষ যুবক-যুবতীকে চাকরি ও কর্মসংস্থান প্রদানের লক্ষ্যের দ্বিগুণ। নীতিশ কুমার (Nitish) দাবি করেছেন, ২০২০-২০২৫ সময়কালের লক্ষ্য পূরণের পথে রাজ্য সরকার এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে ১০ লক্ষ যুবক-যুবতীকে সরকারি চাকরি এবং প্রায় ৩৯ লক্ষ মানুষকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

তবে, নির্বাচনের ঠিক আগে এই ধরনের বড় প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করায় বিরোধী দলগুলি প্রশ্ন তুলেছে। তাঁরা জানতে চেয়েছেন, এই প্রতিশ্রুতি পাঁচ বছর আগে কেন দেওয়া হয়নি, যাতে বিহারের যুবক-যুবতীদের অন্য রাজ্য বা বিদেশে গিয়ে কাজ খুঁজতে না হয়। বিরোধীরা বিহারের বেকার সমস্যা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে নীতীশের বিরুদ্ধে।

নীতিশ কুমারের দাবি ও পরিকল্পনা (Nitish)

মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার (Nitish) একটি এক্স পোস্টে জানিয়েছেন, “আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, এখন পর্যন্ত রাজ্যের ১০ লক্ষ যুবক-যুবতীকে সরকারি চাকরি দেওয়া হয়েছে এবং প্রায় ৩৯ লক্ষ মানুষকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। ৫০ লক্ষের বেশি যুবক-যুবতীকে চাকরি ও কর্মসংস্থান দেওয়ার লক্ষ্য অবশ্যই পূরণ হবে।”

তিনি আরও বলেছেন, “এই প্রেক্ষাপটে, আগামী পাঁচ বছরে (২০২৫-২০৩০) আমরা ২০২০-২৫-এর লক্ষ্যকে দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা নিয়েছি। ১ কোটি যুবক-যুবতীকে সরকারি চাকরি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ দেওয়া হবে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য বেসরকারি খাতে, বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলে, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে।

এই উদ্দেশ্যে একটি উচ্চ-পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হচ্ছে।”নীতিশ কুমার (Nitish)আরও জানিয়েছেন, ২০০৫ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে রাজ্য সরকার ৮ লক্ষের বেশি যুবক-যুবতীকে সরকারি চাকরি দিয়েছে। তিনি বলেন, “শুরু থেকেই আমাদের লক্ষ্য ছিল রাজ্যের যুবক-যুবতীদের জন্য সরকারি চাকরি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করা।”

দক্ষতা উন্নয়নের জন্য নতুন উদ্যোগ

মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, তাঁর সরকারের ‘সাত নিশ্চয়’ প্রকল্পের অধীনে যুবক-যুবতীদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য একটি বিশেষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম হবে ‘জননায়ক কার্পুরী ঠাকুর দক্ষতা বিশ্ববিদ্যালয়’। এটি বিহারের গর্ব ও ভারতরত্ন জননায়ক কার্পুরী ঠাকুরের নামে নামকরণ করা হবে।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য হবে যুবক-যুবতীদের দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। নীতিশ কুমার (Nitish) বলেন, “আগামী পাঁচ বছরে ‘সাত নিশ্চয়’ প্রকল্পের অধীনে চলমান দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি আরও সম্প্রসারিত হবে। এই বিশ্ববিদ্যালয় যুবক-যুবতীদের দক্ষতা উন্নয়নে নতুন দিশা প্রদান করবে।”

Advertisements

বিরোধীদের সমালোচনা

নীতিশ কুমারের (Nitish) এই ঘোষণা নিয়ে বিরোধী দলগুলি তীব্র সমালোচনা করেছে। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, নির্বাচনের ঠিক আগে এই ধরনের বড় প্রতিশ্রুতি কেন দেওয়া হচ্ছে? রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) এবং কংগ্রেসের নেতারা দাবি করেছেন, এই প্রতিশ্রুতি পাঁচ বছর আগে দেওয়া হলে বিহারের যুবক-যুবতীদের অন্য রাজ্য বা বিদেশে গিয়ে কাজ খুঁজতে হত না।

বিরোধী নেতারা বলছেন, এটি নির্বাচনের আগে ভোটারদের আকর্ষণ করার জন্য একটি রাজনৈতিক কৌশল মাত্র। তাঁরা আরও অভিযোগ করেছেন, নীতিশ কুমারের সরকার গত কয়েক বছরে রাজ্যের বেকার সমস্যা সমাধানে ব্যর্থ হয়েছে, এবং এখন নির্বাচনের মুখে এই ধরনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হচ্ছে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

বিহারের বিধানসভা নির্বাচন এই বছরের শেষের দিকে, সম্ভবত অক্টোবর বা নভেম্ভরে হতে চলেছে। ভারতের নির্বাচন কমিশন এখনও চূড়ান্ত তারিখ ঘোষণা করেনি। এই সময়ে নীতিশ কুমারের এই ঘোষণা রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

বিরোধী দলগুলি এটিকে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা হিসেবে দেখছে, যখন জনতা দল (ইউনাইটেড) এবং তাদের মিত্র বিজেপি এই পরিকল্পনাকে রাজ্যের উন্নয়নের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী দৃষ্টিভঙ্গি হিসেবে উপস্থাপন করছে।

চন্দ্রযানের পর এবার গগনযানের পালা, বিশেষ ‘ইঞ্জিন’ প্রস্তুত করছে ইসরো

বিহারের বেকার সমস্যা

বিহারে বেকারত্ব দীর্ঘদিন ধরে একটি জ্বলন্ত সমস্যা। রাজ্যের বিপুল সংখ্যক যুবক-যুবতী কর্মসংস্থানের অভাবে অন্য রাজ্য বা বিদেশে পাড়ি দিতে বাধ্য হচ্ছেন। নীতিশ কুমারের এই নতুন প্রতিশ্রুতি এই সমস্যার সমাধানের দিকে একটি পদক্ষেপ হতে পারে, তবে এর বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। বিরোধীরা বলছেন, পূর্ববর্তী প্রতিশ্রুতিগুলি পুরোপুরি বাস্তবায়িত না হওয়ায় এই নতুন ঘোষণার প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি করা কঠিন হবে।

নীতিশ কুমারের (Nitish)১ কোটি যুবক-যুবতীকে চাকরি ও কর্মসংস্থান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি বিহারের রাজনৈতিক মঞ্চে একটি বড় ঘোষণা। তবে, নির্বাচনের ঠিক আগে এই প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় এর রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধী দলগুলির সমালোচনা এবং রাজ্যের যুবক-যুবতীদের প্রত্যাশার মধ্যে এই পরিকল্পনা কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা সময়ই বলবে। আপাতত, এই ঘোষণা বিহারের নির্বাচনী প্রচারে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।