নাসা (nisar) (ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) এবং ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) এর যৌথ উদ্যোগে নাসা-ইসরো সিন্থেটিক অ্যাপারচার রাডার (nisar) মিশনটি পৃথিবীর পরিবেশ ও ভূ-পৃষ্ঠের পরিবর্তন পর্যবেক্ষণের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই মিশনটি ২০২৫ সালের জুন মাসে অন্ধ্রপ্রদেশের সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত।
নিসার (nisar) স্যাটেলাইট প্রতি ১২ দিনে পৃথিবীর প্রায় সমগ্র ভূ-পৃষ্ঠ স্ক্যান করবে, যা উচ্চ-রেজোলিউশনের তথ্য সরবরাহ করবে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যেমন ভূমিকম্প, সুনামি, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত, ভূমিধস, হিমবাহের গলন, এবং জলবায়ু পরিবর্তন পর্যবেক্ষণে সহায়তা করবে।
নিসার (nisar) হলো বিশ্বের প্রথম ডুয়াল-ফ্রিকোয়েন্সি রাডার ইমেজিং স্যাটেলাইট, যা এল-ব্যান্ড (১.২৫ গিগাহার্টজ) এবং এস-ব্যান্ড (৩.২ গিগাহার্টজ) রাডার ব্যবহার করে। নাসা এল-ব্যান্ড রাডার, জিপিএস, উচ্চ-ক্ষমতার সলিড-স্টেট রেকর্ডার এবং পেলোড ডেটা সাবসিস্টেম সরবরাহ করেছে, যখন ইসরো এস-ব্যান্ড রাডার, স্যাটেলাইট বাস, জিওসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকল মার্ক টু (জিএসএলভি মার্ক টু), এবং লঞ্চ পরিষেবা প্রদান করেছে।
এই স্যাটেলাইটে (nisar) একটি ১২ মিটার ব্যাসের তারের জাল দিয়ে তৈরি রাডার অ্যান্টেনা রয়েছে, যা নাসার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রাডার অ্যান্টেনা। এই অ্যান্টেনা মহাকাশে উৎক্ষেপণের পর খুলে যাবে এবং সুইপএসএআর প্রযুক্তি ব্যবহার করে ২৪০ কিলোমিটারের বিস্তৃত এলাকা স্ক্যান করবে, যা উচ্চ-রেজোলিউশনের ছবি তৈরি করবে।
হোসে হেভিয়ার হাত ধরে গোকুলাম কেরালার নতুন যাত্রা শুরু
নিসার (nisar) মিশনের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো পৃথিবীর জটিল প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া এবং পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ করা। এটি প্রতি ১২ দিনে পৃথিবীর ভূমি ও বরফে ঢাকা পৃষ্ঠের পরিবর্তন পরিমাপ করবে, যার মধ্যে রয়েছে ইকোসিস্টেমের পরিবর্তন, হিমবাহ ও বরফের গলন, ভূগর্ভস্থ জলের স্তর, এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ভূমিকম্প, সুনামি, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত এবং ভূমিধস।
এই মিশনটি ৭৪৭ কিলোমিটার উচ্চতায় সান-সিনক্রোনাস কক্ষপথে কাজ করবে এবং এর পরিকল্পিত মিশনের মেয়াদ তিন বছর। নাসা এল-ব্যান্ড রাডারটি কমপক্ষে তিন বছর এবং ইসরো এস-ব্যান্ড রাডারটি কমপক্ষে পাঁচ বছর ব্যবহার করবে।
নিসারের (nisar)তথ্য বিজ্ঞানীদের জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস, এবং সম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে। এটি মাটির আর্দ্রতা, কৃষি ম্যাপিং, বনজ সম্পদ পর্যবেক্ষণ, এবং কার্বন বিনিময়ের তথ্য সরবরাহ করবে। ভারতের প্রেক্ষাপটে, নিসার হিমালয়ের হিমবাহের গলন, উপকূলীয় অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, এবং কৃষি ও জল ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করবে। এই তথ্য কৃষি পরিকল্পনা, জল ব্যবস্থাপনা, এবং খরা পূর্বাভাসে সহায়তা করবে।
নিসার স্যাটেলাইটটি (nisar) বেঙ্গালুরুর ইসরোর স্যাটেলাইট ইন্টিগ্রেশন অ্যান্ড টেস্টিং এস্টাবলিশমেন্টে সম্পন্ন হয়েছে এবং এটি সতীশ ধাওয়ান স্পেস সেন্টারে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। ২০২৪ সালের অক্টোবরে নাসার সি-১৩০ কার্গো প্লেনের মাধ্যমে রাডার অ্যান্টেনা রিফ্লেক্টর বেঙ্গালুরুতে পৌঁছায়। তবে, পরীক্ষার সময় রিফ্লেক্টরের অতিরিক্ত তাপমাত্রার সমস্যা ধরা পড়ে, যার জন্য এটি ক্যালিফোর্নিয়ায় ফিরিয়ে নিয়ে তাপ-প্রতিরোধী আবরণ প্রয়োগ করা হয়। জানুয়ারি ২০২৫-এর শেষে স্যাটেলাইটটি সমস্ত পরীক্ষা সম্পন্ন করে শ্রীহরিকোটায় পাঠানো হয়।
নিসারের (nisar) তথ্য সংগ্রহের পর এক থেকে দুই দিনের মধ্যে সর্বজনীনভাবে উপলব্ধ হবে, এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাওয়া যাবে। এই মিশনের মোট ব্যয় প্রায় ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা এটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল পৃথিবী-পর্যবেক্ষণ স্যাটেলাইট করে তুলেছে।
ইসরোর চেয়ারম্যান শ্রীধর প্যানিকার সোমানাথ জানিয়েছেন, নিসারের জন্য জিএসএলভি মার্ক টু রকেট মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে প্রস্তুত হলেও, কিছু পরীক্ষার কারণে উৎক্ষেপণ জুন ২০২৫-এ নির্ধারিত হয়েছে। তবে, সামাজিক মাধ্যমে কিছু পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে উৎক্ষেপণ জুলাই ২০২৫-এ হতে পারে, যদিও এটি নিশ্চিত নয়।
নিসার (nisar) মিশন ভারত-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মহাকাশ গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা। এটি শুধুমাত্র পৃথিবীর পরিবর্তন পর্যবেক্ষণে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে না, বরং দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত সম্পর্ককেও শক্তিশালী করবে। এই মিশনের তথ্য গবেষক, সরকার, এবং অলাভজনক সংস্থাগুলোর জন্য বিনামূল্যে উপলব্ধ হবে, যা ভারতের কৃষি, জল ব্যবস্থাপনা, এবং দুর্যোগ প্রতিক্রিয়া ক্ষমতাকে উন্নত করবে।
নিসারের (nisar) উৎক্ষেপণ ভারতের মহাকাশ গবেষণায় একটি নতুন মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস, এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করবে। এই মিশন ভারতের ৭,৫০০ কিলোমিটার উপকূলরেখা, হিমালয়ের হিমবাহ, এবং মৌসুমী কৃষির জন্য বিশেষভাবে উপযোগী হবে।
নিসার মিশন (nisar) ভারতের মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ইসরোর ক্রমবর্ধমান দক্ষতা এবং নাসার সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে বিশ্ব মঞ্চে ভারতের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করবে। এই মিশনের সাফল্য বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সংরক্ষণ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় একটি নতুন অধ্যায় যোগ করবে।