পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক (PNB) কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত পলাতক হীরা ব্যবসায়ী নীরব মোদীর (Nirav Modi) ভাই নেহাল মোদিকে আমেরিকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা (CBI) এবং এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)-এর অনুরোধের ভিত্তিতে ৪ জুলাই, ২০২৫-এ মার্কিন কর্তৃপক্ষ তাকে হেফাজতে নিয়েছে।
মার্কিন বিচার বিভাগ ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছে যে নেহাল মোদী (Nirav Modi), যিনি ১৩,০০০ কোটি টাকার পিএনবি কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত, তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই গ্রেফতার ভারতের আর্থিক কেলেঙ্কারির ইতিহাসে অন্যতম বড় এই মামলায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
পিএনবি (Nirav Modi) কেলেঙ্কারি ২০১৮ সালের প্রথম দিকে প্রকাশ্যে আসে। এই ঘটনায় নীরব মোদী , তাঁর মামা মেহুল চোকসি এবং ব্যাঙ্কের কিছু কর্মকর্তার সহযোগিতায় জালিয়াতি করে। নীরবের উপরে লেটার অব আন্ডারটেকিং (এলওইউ) এবং ফরেন লেটার অব ক্রেডিট (এফএলসি) জারির মাধ্যমে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের মুম্বাই শাখা থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এই কেলেঙ্কারির পরিমাণ প্রায় ১৩,৫০০ কোটি টাকা, যা ভারতের ব্যাঙ্কিং ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আর্থিক কেলেঙ্কারিগুলির মধ্যে একটি।
ইডি এবং সিবিআই-এর তদন্তে প্রকাশ পেয়েছে যে নেহাল মোদী (Nirav Modi) তাঁর ভাই নীরব মোদীর হয়ে অপরাধমূলক আয় লুকিয়ে রাখতে এবং স্থানান্তর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। নেহাল, যিনি বেলজিয়ামের নাগরিক এবং ইংরেজি, গুজরাটি এবং হিন্দিতে সাবলীল, বিভিন্ন শেল কোম্পানির মাধ্যমে অবৈধ তহবিল স্থানান্তর এবং গোপন করতে সহায়তা করেছেন বলে অভিযোগ।
তিনি দুবাইতে ৫০ কেজি সোনা এবং নগদ অর্থ সরিয়ে নিয়েছেন এবং শেল কোম্পানির ডামি ডিরেক্টরদের নির্দেশ দিয়েছেন যাতে তারা তাঁর নাম প্রকাশ না করে। এছাড়া, তিনি মোবাইল ফোন এবং সার্ভার ধ্বংস করে গুরুত্বপূর্ণ ডিজিটাল প্রমাণ নষ্ট করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
মার্কিন প্রসিকিউশনের অভিযোগ অনুযায়ী, নেহাল মোদীর (Nirav Modi) বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগে প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া চলছে: মানি লন্ডারিং (প্রিভেনশন অব মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট, ২০০২-এর ধারা ৩) এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র (ইন্ডিয়ান পেনাল কোডের ধারা ১২০-বি এবং ২০১)। এই অভিযোগগুলি পিএনবি কেলেঙ্কারির সঙ্গে সম্পর্কিত। তদন্তে দাবি করা হয়েছে যে নেহাল মোদী নীরব মোদির অবৈধ কার্যকলাপে ইচ্ছাকৃতভাবে সহায়তা করেছেন।
নেহাল মোদীর (Nirav Modi) গ্রেফতার ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিশের ভিত্তিতে হয়েছে, যা ২০১৯ সালে ইডি এবং সিবিআই-এর অনুরোধে জারি করা হয়েছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর গ্রেফতারের পর পরবর্তী শুনানি ১৭ জুলাই, ২০২৫-এ নির্ধারিত হয়েছে, যেখানে তিনি জামিনের আবেদন করতে পারেন।
তবে, মার্কিন প্রসিকিউটররা জামিনের বিরোধিতা করবে বলে জানা গেছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, যা ভারত-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক প্রত্যর্পণ চুক্তির অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।
ইডি-এর (Nirav Modi) তদন্তে দেখা গেছে যে নেহাল মোদী ফায়ারস্টার ডায়মন্ডস ইউএসএ-এর ডিরেক্টর ছিলেন এবং ইথাকা ট্রাস্টের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, যা নীরব মোদীর জন্য সম্পত্তি কেনার জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে ব্যবহৃত হয়েছিল।
এই ট্রাস্টের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২৫ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি কেনা হয়েছিল। নেহাল মোদী সংযুক্ত আরব আমিরাত, হংকং, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ডস, এবং অন্যান্য স্থানে শেল কোম্পানির প্রমাণ নষ্ট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নীরব মোদী (Nirav Modi) বর্তমানে লন্ডনের একটি জেলে বন্দি এবং তাঁর প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের অনুরোধের উপর মামলা চলছে। ২০২১ সালে আমেরিকার একটি আদালত তাঁর প্রত্যর্পণের অনুমোদন দিলেও, তিনি এখনও আপিলের মাধ্যমে এটি লড়ছেন।
মেহুল চোকসি, এই কেলেঙ্কারির আরেক প্রধান অভিযুক্ত, ২০২৫ সালের এপ্রিলে বেলজিয়ামে গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং তাঁর প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়াও চলছে। ইডি এখন পর্যন্ত নীরব মোদী এবং মেহুল চোকসির ২,৩৬২ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে এবং বিদেশে তাঁদের সম্পত্তি চিহ্নিত করার জন্য তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
কলেজে শিক্ষাকর্মী নিয়োগে বিধি প্রস্তুত, অনুমোদনের পথে উচ্চশিক্ষা দফতর
নেহাল মোদীর (Nirav Modi) গ্রেফতার পিএনবি কেলেঙ্কারির বিচার প্রক্রিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি। ভারতীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির এই প্রচেষ্টা আর্থিক অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার ক্ষেত্রে দেশের দৃঢ় অবস্থান প্রকাশ করে। প্রত্যর্পণ প্রক্রিয়া এবং আসন্ন শুনানি এই মামলার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।