৯ মাওবাদীর আত্মসমর্পণ, বিজাপুরে ‘নিয়াদ নেল্লানার’-এর প্রভাব স্পষ্ট

ছত্তিশগড়ের (Chhattisgarh) বিজাপুর জেলায় ফের বড়সড় মাওবাদী আত্মসমর্পণের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার, ৬ আগস্ট, মোট ৯ জন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছে, যাদের মধ্যে ৬ জনের মাথার উপর মোট ২৪ লক্ষ টাকার পুরস্কার ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ প্রশাসন। এই আত্মসমর্পণের ফলে এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও সুসংহত হলো বলে মনে করা হচ্ছে।

Advertisements

বিজাপুর জেলার পুলিশ সুপার জিতেন্দ্র কুমার যাদব জানিয়েছেন, এই মাওবাদীরা মাওবাদী আদর্শের ‘ফাঁপা ও ভুলমতে’ বিরক্ত হয়ে, নিরীহ আদিবাসীদের উপর নির্মম অত্যাচার এবং সংগঠনের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ক্লান্ত হয়ে পুলিশের এবং কেন্দ্রীয় রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (CRPF)-এর আধিকারিকদের সামনে আত্মসমর্পণ করে।

এই ৯ জন মাওবাদীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নামগুলি হল:

বক্সু ওয়াম (২৭) – মাওবাদীদের মাড় ডিভিশনের সদস্য, যার মাথার উপর ৮ লক্ষ টাকা পুরস্কার ছিল।

বুধরাম পোটাম (৩৬) ও হিদমা ওরফে হিরিয়া (২৬) – দু’জনই এলাকার কমিটি সদস্য, প্রত্যেকের মাথার উপর ছিল ৫ লক্ষ টাকা করে পুরস্কার।

মাঙ্গু উইকা (৩৮), রোশন কারাম (২৪) এবং ম্যাংলো পোদিয়াম (২৩) – প্রত্যেকের মাথার উপর ছিল ২ লক্ষ টাকা করে ইনাম।

Advertisements

পুলিশ সূত্রে আরও জানানো হয়েছে, এঁদের আত্মসমর্পণের পেছনে ছত্তিশগড় সরকারের ‘নিয়াদ নেল্লানার’ (তোমার ভালো গ্রাম) প্রকল্প, নতুন আত্মসমর্পণ ও পুনর্বাসন নীতি এবং ‘পুনা মার্ঘাম’ (সামাজিক পুনর্মিলনের জন্য পুনর্বাসন) উদ্যোগ বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে। এই প্রকল্পগুলি মাওবাদী-প্রবণ এলাকায় শান্তি ও উন্নয়নের বার্তা নিয়ে এসেছে।

আত্মসমর্পণকারী প্রত্যেক মাওবাদীকে সরকারের পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তাদের পুনর্বাসনের সমস্ত দায়িত্ব রাজ্য সরকার নিয়েছে এবং সরকার অনুযায়ী শিক্ষা, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্যসেবা সহ একাধিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে।

পুলিশের মতে, ২০২৫ সালে এখনো পর্যন্ত শুধুমাত্র বিজাপুর জেলা থেকেই ২৭৭ জন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছে। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, ‘নিয়াদ নেল্লানার’ প্রকল্প ও পুনর্বাসন নীতির প্রভাব কতটা কার্যকর হয়েছে।

রাজ্য প্রশাসন মনে করছে, এই উদ্যোগগুলি ভবিষ্যতে মাওবাদী সহিংসতা রুখতে বড় ভূমিকা নেবে। শুধু মাওবাদী আত্মসমর্পণকারীদের জন্য নয়, যারা মাওবাদী হিংসার শিকার হয়েছেন তাদের জন্যও সরকার আর্থিক ও সামাজিকভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছে।

বিজাপুরে এই মাওবাদীদের আত্মসমর্পণ শুধু প্রশাসনের বড় সাফল্য নয়, এটি এক নতুন আশার দিশা দেখাচ্ছে যেখানে সহিংসতা ছেড়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরে আসছে বহু মানুষ। শান্তি, উন্নয়ন ও পুনর্গঠনের এই পথেই ভবিষ্যতের ছত্তিশগড় এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদী রাজ্য সরকার ও প্রশাসন।