মার্কিন নির্বাচনের অনিশ্চয়তা এবং ডলারের শক্তিশালী অবস্থানের মধ্যে, ভারতের স্টক মার্কেট আজ শক্তিশালী সূচনা করেছে। বিশেষ করে ইনফোসিস এবং এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের শেয়ারমূল্য বৃদ্ধির কারণে নিফটি এবং সেনসেক্স প্রায় ১% বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে মার্কিন নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল এবং ডলারের গতিপথ বাজারে চাপ সৃষ্টি করেছে, যা ভবিষ্যতে আরও উদ্বেগের কারণ হতে পারে।
নিফটি ও সেনসেক্সে বড় উত্থান: ইনফোসিসের শেয়ারমূল্য বৃদ্ধির কারণে
আজ সকালে ভারতীয় শেয়ারবাজারে দারুণ উত্থান দেখা গেছে। নিফটি ৫০ সূচক ১% এরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ১৮,৬০০ পয়েন্টের উপরে উঠে গেছে, এবং সেনসেক্সও প্রায় ৫০০ পয়েন্ট বাড়িয়ে ৬৩,৭৫০ পয়েন্টের কাছাকাছি অবস্থান করছে। এই উত্থানের মূল কারণ ছিল আইটি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান ইনফোসিসের শেয়ারমূল্য বৃদ্ধির প্রভাব।
ইনফোসিসের শেয়ার ৩% এর বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, যা নিফটি আইটি সূচককে ৩% উপরে ঠেলে দিয়েছে। ইনফোসিসের পাশাপাশি এইচডিএফসি ব্যাঙ্কের শেয়ারও শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে, যা সেনসেক্সের উত্থানে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইনফোসিসের ফলাফল এবং স্ট্রং আউটলুক বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কোম্পানির কর্মক্ষমতা এবং ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাজারে বিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছে, যা শেয়ারবাজারে একটি নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছে।
ডলারের শক্তিশালী অবস্থান: টাকার নতুন সর্বনিম্ন স্তরে পতন
ভারতীয় টাকার অবস্থা অবশ্য বেশ বিপদজনক। আজ সকালে মার্কিন ডলারের তুলনায় টাকার মূল্য নতুন সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছে। এক মার্কিন ডলার এখন প্রায় ৮৩.৩০ টাকা, যা ভারতের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুতর সংকেত হতে পারে। ডলারের শক্তিশালী অবস্থান, বিশেষ করে মার্কিন নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফলের পর, আন্তর্জাতিক বাজারে আরও শক্তিশালী হয়েছে। ডলারের শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং এর ফলে টাকার পতন অব্যাহত রয়েছে।
ডলারের শক্তিশালী অবস্থান, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির পুনরুদ্ধার এবং মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্তের কারণে এটি ঘটছে। এর ফলে, ভারতীয় বাজারে বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মার্কিন নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল এবং মার্কিন ট্রেজারি ইস্যু: ট্রাম্পের সম্ভাব্য বিজয়
মার্কিন নির্বাচনের প্রাথমিক ফলাফল বাজারের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ট্রাম্পের প্রাথমিক বিজয় সংকেত, যার ফলে মার্কিন ট্রেজারি ইল্ডের হার দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে, এর কারণে বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মার্কিন নির্বাচনে এখনও সুনির্দিষ্ট ফলাফল ঘোষণা হয়নি, তবে কিছু প্রাথমিক ভোট গণনা থেকে এটা স্পষ্ট যে, রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে জয়লাভ করেছেন, যা বাজারে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
বিশ্ববাজারের জন্য এটি এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি করতে পারে, কারণ ট্রাম্পের বিজয় অর্থনীতির জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসতে পারে, বিশেষ করে কর নীতি এবং বাণিজ্য সম্পর্কিত তার ঘোষণা অনুযায়ী। তবে, মার্কিন ট্রেজারি ইল্ডের বৃদ্ধি বাজারে উদ্বেগ তৈরি করেছে, এবং এর ফলে অন্য দেশের মুদ্রায় আরও চাপ পড়েছে।
স্টক মার্কেটের অন্যান্য অবস্থা
আজকের বাজারে মেটাল, রিয়েল এস্টেট এবং এনার্জি সেক্টরের শেয়ারগুলির মধ্যে কিছু মিশ্র ফলাফল দেখা গেছে। যেখানে মেটাল সেক্টরে কিছু শেয়ার বৃদ্ধি পেয়েছে, সেখানে এনার্জি সেক্টর কিছুটা চাপের মধ্যে রয়েছে, কারণ বিশ্বব্যাপী তেলের দাম কমতে শুরু করেছে।
এদিকে, ব্যাঙ্কিং এবং ফিনান্স সেক্টরের শেয়ারগুলির মধ্যেও ধীর গতিতে কিছু পরিবর্তন দেখা গেছে। যদিও ইনফোসিস এবং এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে, তবে কিছু ছোট এবং মাঝারি সাইজের শেয়ার চাপের মধ্যে পড়েছে। বিশেষত মিড-ক্যাপ এবং স্মল-ক্যাপ শেয়ারগুলি আরও টালমাটাল অবস্থানে রয়েছে, যা বাজারের অস্থিরতা নির্দেশ করে।
ভবিষ্যৎ মূল্যবান উপদেশ: বাজারের অস্থিরতা এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য সতর্কতা
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল এবং ডলারের শক্তিশালী অবস্থানের কারণে শেয়ারবাজারের অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে। এর পাশাপাশি, রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার (RBI) নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং ভারতের অর্থনীতির পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। বিনিয়োগকারীদের জন্য এখন সময় সতর্ক থাকার, বিশেষত সুইং স্টেটস এবং মার্কিন নির্বাচনের পরবর্তী ফলাফলের প্রতি নজর রাখার।
বিশ্ববাজারের অস্থিরতার পাশাপাশি, যদি ভারতের অর্থনীতি শক্তিশালী হয়, তবে শেয়ারবাজারে পজিটিভ সাইন দেখতে পাওয়া যেতে পারে। তবে, সামগ্রিকভাবে একটি শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে এবং আগামী সপ্তাহগুলোতে বাজার আরও অস্থির হতে পারে। ভারতীয় শেয়ারবাজারে আজকের উত্থান এবং মার্কিন নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে উদ্বেগ একদিকে যেমন বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, তেমনি টাকার দুর্বলতা এবং মার্কিন ট্রেজারি ইল্ডের বৃদ্ধি শেয়ারবাজারে কিছুটা অস্থিরতা তৈরি করেছে।
ইনফোসিসের শক্তিশালী কর্মক্ষমতা এবং অন্যান্য শেয়ারগুলির উত্থান ভারতীয় বাজারে কিছুটা ইতিবাচক অনুভূতি তৈরি করেছে, কিন্তু ভবিষ্যতে মার্কিন নির্বাচনের ফল এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনগুলির প্রভাব অনেক বেশি গুরুত্ব বহন করবে।