হামাস-স্টাইলে ড্রোন হামলার ছক কষেছিল লালকেল্লা বিস্ফোরণকারীরা: NIA তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য

NIA Uncovers Rocket Drone Terror Plot

লালকেল্লা বিস্ফোরণের তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই সামনে আসছে সুপরিকল্পিত এক সন্ত্রাস-পরিকল্পনার ছক, যা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ) বলছে, এটা কেবল একটি বিস্ফোরণ নয়; এটি ছিল বহুস্তরীয়, উচ্চপ্রযুক্তি-সমৃদ্ধ এমন এক সন্ত্রাস-পরিকাঠামো, যার উদ্দেশ্য ছিল দিল্লির হৃদয়ে সর্বোচ্চ মাত্রার ধ্বংস ও আতঙ্ক সৃষ্টি করা।

Advertisements

ভারতের মাটিতে ‘নতুন যুগের’ জঙ্গি প্রযুক্তি

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, অভিযুক্তরা ড্রোনকে রূপান্তরিত করতে চাইছিল এমন এক অস্ত্রে, যা দূরনিয়ন্ত্রিত রকেট-বোমা নিক্ষেপে সক্ষম। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন হামাস ও আইসিসের ব্যবহৃত কৌশল অনুকরণ করে তৈরি হচ্ছিল এক ‘রকেট-বেসড ড্রোন প্ল্যাটফর্ম’, যা একসঙ্গে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটাতে পারত।

   

নজরদারি থেকে শুরু করে স্যাটেলাইট ডেটা এড়ানো, সব মিলিয়ে এমনভাবে পরিকল্পনা করা হচ্ছিল, যাতে রাজধানীর সুরক্ষা বলয় ভেদ করে বড় ধরণের ক্ষয়ক্ষতি ঘটানো যায়। এনআইএ সূত্রের মতে, অভিযুক্তদের মধ্যে কয়েকজন প্রযুক্তিবিদ সরাসরি জড়িত ছিল বিস্ফোরক নিক্ষেপযন্ত্রের নকশা ও পরীক্ষায়।

জাসির বিলাল ওয়ানি: ‘ডক্টর মডিউল’-এর প্রযুক্তি-মস্তিষ্ক NIA Uncovers Rocket Drone Terror Plot

এই জটিল চক্রান্তের অন্যতম মুখ হিসেবে উঠে এসেছে জম্মু-কাশমীরের জাসির বিলাল ওয়ানির নাম। রাজনৈতিক বিজ্ঞানে গ্র্যাজুয়েট হলেও চরমপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়ার পর তাকে আত্মঘাতী হামলাকারী হিসেবে প্রস্তুত করা হচ্ছিল। এনআইএ জানিয়েছে—ড্রোনের প্রযুক্তিগত পরিবর্তন, রকেট-ধর্মী বিস্ফোরক সংযোজন এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল ওয়ানির।

গত বছরের অক্টোবরে কুলগামের এক মসজিদে তার ‘ডক্টর মডিউল’-এর সঙ্গে প্রথম যোগাযোগ। এরপর হরিয়ানার ফারিদাবাদের আল ফালাহ ইউনিভার্সিটির কাছে একটি গোপন ঠিকানায় তাকে নিয়ে গিয়ে শুরু হয় ‘উচ্চপ্রযুক্তির সন্ত্রাস প্রকল্প’।

এর আগে গ্রেফতার হয় আমির নামের একজন কাশ্মীরি যুবক, যিনি ডক্টর উমরের জন্য ব্যবহৃত গাড়ি সংগ্রহ করেছিলেন। এই দু’জনের জেরা মিলিয়ে এনআইএ ধীরে ধীরে উন্মোচন করছে পুরো নেটওয়ার্কের নকশা।

Advertisements

ড্রোন–রকেট পরিকল্পনা ব্যর্থ, ‘ব্যাকআপ হিসেবে’ গাড়ি বোমা

ড্রোনভিত্তিক রকেট হামলার পরিকল্পনা নিরাপত্তা-ব্যবস্থার কারণে জটিল হয়ে পড়তেই সন্ত্রাসীরা ‘ব্যাকআপ অপশন’ হিসেবে বেছে নেয় গাড়ি বোমা। আর সেই পরিকল্পনারই চূড়ান্ত রূপ—লালকেল্লার কাছে ব্যস্ত রাস্তায় হুন্ডাই আই২০–র আইইডি বিস্ফোরণ।
মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই ১৪টি প্রাণ ঝরে যায়; আহত হয় বহু মানুষ। বিস্ফোরণের আগে ফারিদাবাদের আল ফালাহ ইউনিভার্সিটি থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক বাজেয়াপ্ত হওয়ায় তদন্তকারীরা এটিকে আখ্যা দিয়েছেন—“একটি সুসজ্জিত, উচ্চ-শিক্ষিত, হোয়াইট-কলার সন্ত্রাস নেটওয়ার্ক”।

আত্মঘাতী হামলাকারী ডক্টর উমর

বিস্ফোরণের সময় গাড়ি চালাচ্ছিলেন ডক্টর উমর উন নাবি—আল ফালাহ ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যুক্ত একজন চিকিৎসক। তদন্ত বলছে, বিশ্ববিদ্যালয়-পরিসরের আড়াল ব্যবহার করে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে এক নীরব, সুপরিকল্পিত, প্রযুক্তিনির্ভর সন্ত্রাস-চক্র।

কাশ্মীর থেকে হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ থেকে দিল্লি—বহু জায়গায় অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে চিকিৎসক, প্রযুক্তিবিদ, লজিস্টিক সহায়তাকারীসহ একাধিক সন্দেহভাজনকে। এনআইএ-র দাবি—“এটি কোনও বিচ্ছিন্ন জঙ্গি চক্র নয়; এটি এমন এক হাই-এন্ড সন্ত্রাস ইকোসিস্টেম, যেখানে শিক্ষা, টাকা, প্রযুক্তি এবং ধর্মীয় উসকানি একত্রে ব্যবহার করা হয়েছে।”

রাজধানীর নিরাপত্তা-কাঠামোর সামনে নতুন সতর্কবার্তা

তদন্তকারী সংস্থা মনে করছে—এই ষড়যন্ত্র সফল হলে দিল্লির নিরাপত্তা ইতিহাসে নতুন এক শোকাবহ অধ্যায় যুক্ত হতে পারত। রকেট-বোমা সক্ষম ড্রোন ব্যবহার করার প্রচেষ্টা ভারতীয় সন্ত্রাসবিরোধী ব্যবস্থার সামনে একটি নতুন ধরনের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে।

এক তদন্তকারী মন্তব্য করেছেন, “এই মডিউলকে সময়মতো ভাঙতে না পারলে, রাজধানীতে ঠিক কত বড় বিপর্যয় নেমে আসত, তা কল্পনাতেও আসে না।”