জইশ-যোগে ‘অপারেশন D-6’: ফিদায়েঁ হামলার মস্তিষ্ক উমর ও ড. শাহিন

NIA uncovers Jaish's 'Operation D-6'

দিল্লির লালকেল্লার বাইরে গত সপ্তাহে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ গাড়িবোমা বিস্ফোরণের তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই প্রকাশ্যে আসছে জইশ-ই-মহম্মদের একটি সুসংগঠিত ‘হোয়াইট-কলার’ জঙ্গি মডিউলের ছক। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সূত্র জানাচ্ছে, এই মডিউল ৬ ডিসেম্বর—বাবরি মসজিদ ধ্বংসের বর্ষপূর্তির দিন—একটি বড়সড় ফিদায়েন হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। জঙ্গিগোষ্ঠীর গোপন নথিতে এই অভিযানের কোডনেম দেওয়া হয়েছিল ‘অপারেশন D-6’।

Advertisements

ফরিদাবাদ এবং জম্মু-কাশ্মীর থেকে গ্রেফতার হওয়া সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদের পরে এই তথ্য সামনে আসে। তদন্তে জানা গিয়েছে, গাড়িবাহী বিস্ফোরক—VBIED—তৈরির কাজ কয়েক সপ্তাহ ধরেই চলছিল। লালকেল্লার বাইরে নিহত জঙ্গি উমর উন নাবি এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ডাক্তার শাহিন শাহিদ এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী বলে দাবি তদন্তকারীদের।

   

জইশের ‘মহিলা উইং’ গঠনের দায়িত্বে ছিলেন ড. শাহিন

প্রাথমিক তদন্ত বলছে, জইশ-ই-মহম্মদের নতুন মহিলা সংগঠন ‘জমাত-উল-মোমিনীন’-এর ভারতীয় শাখা প্রতিষ্ঠা এবং নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল ড. শাহিনকে। তাঁর গ্রেফতারের আগে ধরা পড়ে ফরিদাবাদের আল-ফলা বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে জড়িত আরেক অধ্যাপক ড. মুজাম্মিল আহমদ গনাই।

ফরিদাবাদের বিভিন্ন জায়গায় বড় পরিমাণ বিস্ফোরক মজুত করা হয়েছিল ৬ ডিসেম্বরের হামলার উদ্দেশে। তদন্তে উঠে এসেছে, উমর কয়েকজন তরুণকে ফিদায়েন হামলার জন্য প্রস্তুত করতে ‘ব্রেনওয়াশ’ করছিল। যাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল, তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ড. শাহিন এবং অন্যান্য গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া ডায়েরিতেও ‘অপারেশন D-6’-এর বিস্তারিত মিলেছে।

লালকেল্লা বিস্ফোরণে বড় সাফল্য NIA-র: মূল সহযোগী গ্রেফতার NIA uncovers Jaish’s ‘Operation D-6’

১১ নভেম্বরের লালকেল্লা গাড়িবোমা বিস্ফোরণে ১০ জন নিহত এবং অন্তত ৩২ জন আহত হন। NIA ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করেছে কাশ্মীরের আমির নামে এক যুবককে, যিনি উমরকে গাড়ি সংগ্রহে সহায়তা করেছিলেন। বিস্ফোরণে ব্যবহৃত হুন্ডাই i20 গাড়িটি আমিরের নামেই নথিভুক্ত ছিল।

NIA জানিয়েছে, উমর—যিনি ফরিদাবাদের আল-ফলা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনারেল মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক—আমিরকে নিয়ে এই VBIED তৈরির কাজ করেন। বিস্ফোরণের দিন প্রায় ১০ ঘণ্টা জুড়ে উমর পুরো দিল্লি ঘুরে বেড়ান ওই বিস্ফোরক-বোঝাই গাড়ি নিয়ে। দিল্লির প্রায় ৪০টি CCTV ক্যামেরায় ধরা পড়ে তাঁর গতিবিধি; যার মধ্যে বেশ কয়েকটি VVIP এলাকাও রয়েছে।

উমরের আরেকটি গাড়ি বাজেয়াপ্ত করে ফরেনসিক পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও আহতসহ ৭৩ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তদন্তকারী দল। দিল্লি পুলিশ–জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ–হরিয়ানা পুলিশ–উত্তরপ্রদেশ পুলিশ—সব বিভাগ মিলিতভাবে ষড়যন্ত্রের প্রতিটি স্তর খতিয়ে দেখছে।

‘বৃহত্তর জঙ্গি নেটওয়ার্ক’-এর ইঙ্গিত, আরও গ্রেফতার হতে পারে

তদন্তকারীদের বিশ্বাস, উমর এবং আমির দু’জনই নয়, আরও বড় একটি নেটওয়ার্ক এই হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত। NIA জানিয়েছে, বিস্ফোরণটি নিছক দুর্ঘটনা নয়; এটি একটি অপূর্ণ VBIED-এর আগাম বিস্ফোরণ, যা উমরের আতঙ্কের ফল।

Advertisements

তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় চারজনকে—তিনজন ডাক্তার (ড. রেহান, ড. মোহাম্মদ, ড. মুসতাকিম) এবং নুহের সার ব্যবসায়ী দিনেশ সিংলাকে—মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সকলেই উমরের সঙ্গে যোগাযোগে ছিলেন, এবং তদন্তকারীরা তাঁর কাছ থেকে বিস্ফোরক তৈরির রাসায়নিক সংগ্রহের সম্ভাবনা যাচাই করছিলেন।

কী ভেঙে দিল ‘অপারেশন D-6’?

সূত্রের খবর, ৬ ডিসেম্বরের বড় হামলার পরিকল্পনা ভেস্তে যায় তখন, যখন উমরের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ড. মুজাম্মিল শাকিল গ্রেফতার হন এবং তাঁর ঘর থেকে ৩৬০ কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উদ্ধার হয়। সে সময় ফরিদাবাদ পুলিশ মোট ২,৯০০ কেজি বিস্ফোরক বাজেয়াপ্ত করে। এরপরই উমর ভয় পেয়ে যান বলে ধারণা তদন্তকারীদের।

১০ নভেম্বর দিল্লির পুরনো শহরের এক মসজিদে কয়েক ঘণ্টা লুকিয়ে থাকার পর উমর গাড়ি নিয়ে বেরোন। তার কিছুক্ষণ পরই অর্ধসমাপ্ত VBIED-টি আগাম বিস্ফোরিত হয়—লালকেল্লার বাইরে।

তদন্ত আরও জোরদার, জঙ্গি মডিউলের সন্ধানে তৎপর সংস্থাগুলি

লালকেল্লা বিস্ফোরণের পর জইশের এই সন্দেহভাজন ‘হোয়াইট-কলার’ সেল ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার নজরে এসেছে। শুধু বিস্ফোরণ নয়—ফরিদাবাদ, দিল্লি, জম্মু-কাশ্মীরসহ বহু জায়গায় গোয়েন্দাদের অভিযান চলছে। তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই নেটওয়ার্কের ফান্ডিং, লজিস্টিক এবং রিক্রুটমেন্ট নিয়ে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সামনে আসতে চলেছে।

৬ ডিসেম্বরের মতো প্রতীকী দিনে বড় হামলার পরিকল্পনা ভারতের নিরাপত্তা বলয়ের জন্য কতটা তাৎপর্যপূর্ণ, তা তদন্তকারীরা যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন।

 

Bharat: NIA busts Jaish-e-Mohammad’s ‘white-collar’ terror module planning ‘Operation D-6’ on Babri Masjid anniversary after the Red Fort blast. The VBIED plot, led by an assistant professor, aimed for a Fidayeen attack; deceased bomber Umar’s last movements and the seizure of 2,900 kg of explosives revealed.